খবর৭১ঃ
দুই দেশের নদী খনন, মাতারবাড়ী ও ডামারা বন্দরকে পোর্ট অব কল ঘোষণা এবং নাবিকদের বন্দরে নামার অনুমতিসহ ১৫টি এজেন্ডা নিয়ে ভারতের সঙ্গে নৌসচিব পর্যায়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অপরদিকে নৌপথে তৃতীয় দেশে বাণিজ্য সুযোগ সৃষ্টিসহ ১১টি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করতে চায় ভারত। ঢাকায় বুধবার (৪ ডিসেম্বর) থেকে দুই দিনব্যাপী নৌসচিব পর্যায়ের বৈঠক শুরু হচ্ছে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে সর্বশেষ দিল্লিতে সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা নিরসনে বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহন সচিব মো. আবদুস সামাদ যুগান্তরকে বলেন, নৌসচিব পর্যায়ের বৈঠকে আমাদের এজেন্ডাগুলো নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি, সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে নৌ খাতের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারব। তিনি বলেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হওয়ার পথ সুগম হবে।
জানা গেছে, দুই দিনব্যাপী বৈঠকের প্রথমদিন দুই দেশের স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে নৌপ্রটোকল সংক্রান্ত চুক্তি পিআইডব্লিউটিঅ্যান্ডটি সংশোধনসহ ১২টি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হবে। দ্বিতীয় ও শেষ দিন সচিব পর্যায়ে ও ইন্টার-গভর্নমেন্টাল কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেবেন নৌপরিবহন সচিব মো. আবদুস সামাদ। ইন্টার গভর্নমেন্টাল কমিটির বৈঠকে ভারতীয় পণ্য মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে কী পরিমাণ ফি ও মাশুল দিতে হবে, তা নির্ধারণ হওয়ার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে এসব বৈঠকের প্রস্তুতি নিয়ে নৌমন্ত্রণালয়ে কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, নৌসচিব পর্যায়ের বৈঠকে প্রথম এজেন্ডা হিসেবে রাজশাহী থেকে পাকশী পর্যন্ত ৭৪ কিলোমিটার নদী যৌথভাবে খননের প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। খননের খরচের ৮০ শতাংশ ভারত ও ২০ শতাংশ বাংলাদেশ সরকার বহনের প্রস্তাব করা হবে। নৌপ্রটোকলের আওতায় ৫ ও ৬ নম্বর রুট হিসেবে এ নদীটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এরই মধ্যে দুই দেশের যৌথ কারিগরি কমিটি (জেটিসি) ওই রুটে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ শেষ করেছে। এতে দেখা গেছে, ধুলিয়ান থেকে রাজশাহী ৯৪ কিলোমিটার ও পাকশী থেকে আরিচা ১০২ কিলোমিটার নৌরুটে পর্যাপ্ত নাব্য রয়েছে। কিন্তু রাজশাহী থেকে পাকশী পর্যন্ত ৭৪ কিলোমিটার নৌরুটে পানির গভীরতা মাত্র এক দশমিক ৯ মিটার। এর মধ্যে ভারতের ৮ কিলোমিটার নৌপথও রয়েছে। অপর এক এজেন্ডায় আত্রাই নদীর ভারতের অংশে ৪২ কিলোমিটার নৌপথ খননের জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাবে বাংলাদেশ।
ভারতীয় নদীতে পর্যাপ্ত মার্কিং না থাকা ও বাংলাদেশের জাহাজের ক্রুদের মাটিতে নামার অনুমতি দেয়ার দীর্ঘদিনের দাবি রয়েছে নৌযান মালিক ও শ্রমিকদের। এ বিষয়টিও দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনায় স্থান পাবে। বৈঠকে কলকাতার বজবজ এলাকায় পর্যাপ্ত বয়া স্থাপন, ঘোড়ামারা নামখানা থেকে হেমনগর এলাকায় চ্যানেল মার্কিং স্থাপন এবং নামখানা, হলদিয়া ও বজবজ এলাকায় জাহাজ অবস্থানের সময়ে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়ের জন্য ক্রুদের শোর পারমিট ইস্যু এবং এর মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি তুলবে ঢাকা। এ লক্ষ্যে নৌপ্রটোকল চুক্তির ১৫ ধারায় সংশোধনীর প্রস্তাব করা হবে। এটি সংশোধন হলে জাহাজের ক্রুরা ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত নির্দিষ্ট পোর্টগুলোয় নামতে পারবে। এছাড়া বিদেশগামী জাহাজের বাংলাদেশি নাবিকদের নির্দিষ্ট বন্দরের নাম উল্লেখ করে ভিসা দিয়ে থাকে ভারত। ফলে অন্য বন্দরে গিয়ে ওই নাবিক বিদেশি জাহাজে উঠতে পারেন না। এমন পরিস্থিতির বিষয়টি জানিয়ে ক্রু ও মেরিন অফিসারদের পোর্ট উল্লেখ না করে ভিসা দিতে ভারত সরকারকে অনুরোধ জানাবে বাংলাদেশ সরকার।
সূত্রমতে, সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশি নাবিকদের বিশ্রাম ও চিত্তবিনোদনের জন্য কলকাতায় পুজালীতে ড্রপ-ইন সেন্টার নির্মাণ এবং উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের মুক্তারপুরে (মুন্সীগঞ্জ) অবস্থিত সামিট অ্যালায়েন্স বন্দরকে পোর্ট অব কলভুক্ত করার প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। ওই বৈঠকে কক্সবাজারের মাতারবাড়ী বন্দর ও ভারতের ডামারা বন্দরকে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তির আওতায় পোর্ট অব কলভুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তির অধীনে সম্পাদিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরের (এসওপি) ১১ ধারা সংশোধনের প্রস্তাব দেয়া হবে। এ সংশোধনী আসলে উপকূলীয় জাহাজের জরুরি মেরামতের প্রয়োজন হলে কাছের সরকারি বা বেসরকারি ডকইয়ার্ডে মেরামতের সুযোগ পাবে।
বৈঠকে যে ১১টি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করবে ভারত : সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ১১টি এজেন্ডা নিয়ে ভারত সরকারের প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে। এর মধ্যে ছয়টি এজেন্ডা স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। আর সচিব পর্যায়ের বৈঠকে পাঁচটি এজেন্ডা তোলা হবে। ভারতের এজেন্ডাগুলোর মধ্যে গুরুত্ব পাবে নৌপথে তৃতীয় দেশে বাণিজ্যের পথ তৈরিতে কোস্টাল শিপিং ও নৌপ্রটোকল চুক্তি সংশোধন। এ দুটি চুক্তির আরও কয়েকটি ধারায় সংশোধনীর প্রস্তাব নিয়ে আসছে ভারত। এছাড়া স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে যে ছয়টি এজেন্ডা রয়েছে, সেগুলো নৌপ্রটোকল চুক্তির বিভিন্ন স্থানে সংশোধন ও কয়েকটি বন্দরকে পোর্ট অব কলভুক্ত সংক্রান্ত।