খবর৭১ঃ
কারসাজির মাধ্যমে পেঁয়াজের দর বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে এবার বড়ো পাইকার ও আড়তদারদেরও শুল্ক গোয়েন্দা অফিসে ডাকা হতে পারে। আমদানিকারদের কাছ থেকে তথ্য নেওয়ার পর ঐ তথ্যের ভিত্তিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম। দুই দিনে ৪৪ জন বড়ো আমদানিকারককে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল বিকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, যারা বড়ো আমদানিকারক, তারা পেঁয়াজের মজুত করেন না। তবে তারা যাদের কাছে বিক্রি করেছেন, প্রয়োজন হলে তাদের মধ্যে বড়ো ক্রেতাদের (পাইকার, আড়তদার, এজেন্ট) কাছ থেকেও তথ্য নেব।
আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, প্রকৃত আমদানিকারকরা পেঁয়াজ মজুদ করেন না। কেননা, ভারতীয় পেঁয়াজ মজুদ করে রাখার সুযোগ নেই। কিন্তু সংকটের সুযোগে কিছু ‘মৌসুমি আমদানিকারক’ দর বাড়িয়ে নিয়েছে। একই সঙ্গে পাইকার ও খুচরা বিক্রেতাও দাম বাড়িয়েছে। তারা বলছেন, সর্বোচ্চ দরে (৭২ টাকা) আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ভোক্ত পর্যায়ে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা হওয়ার কথা। এর বাইরে কারা বাড়তি দামে বিক্রি করেছে, তাদের খুঁজে বের করার দাবি আমদানিকারকদেরও। এছাড়া ভারত যখন পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দিল, ঐ সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আমদানিকারকদের ডেকে সিদ্ধান্ত নিলে এ সমস্যা হতো না বলে মনে করেন তারা। তবে বর্তমানে পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে জানিয়ে তারা বলেন, ডিসেম্বরের ১০ তারিখের মধ্যে পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকার নিচে নেমে আসবে। মেঘনা গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত রাতে তাদের আমদানিকৃত ৮০০ মেট্রিকটন পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসার কথা। ঐ পেঁয়াজ আমদানিতে তাদের খরচ পড়েছে কেজিপ্রতি প্রায় ৩৮ টাকা। অন্যান্য খরচসহ তারা সরকারের সরবরাহ প্রতিষ্ঠান টিসিবিকে (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) ৪২ দরে দেবে।
মেঘনা গ্রুপের ডিজিএম সৈয়দ খালিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিটন ৪৪৫ ডলার দামে তুরস্ক থেকে তারা এসব পেঁয়াজ আমদানি করেছেন। এই পেঁয়াজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে টিসিবিকে দেওয়া হবে ৪২ টাকা দামে।
দিনাজপুর থেকে আসা আমদানিকারক মো. শহীদুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, গত চার মাসে তার আমদানি করা পেঁয়াজের দর ছিল ১৬ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৭২ টাকা। সর্বোচ্চ দামে কেনা (৭২ টাকা) ঐ পেঁয়াজ সব খরচসহ ভোক্তার হাতে ৮৫ টাকা থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হওয়ার কথা। এর পেছনে কারা দায়ী, তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, ২৯ তারিখ ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর কিছু মৌসুমি আমদানিকারক এই কারসাজির পেছনে দায়ী। সরকারের উচিত ছিল সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃত আমদানিকারকদের নিয়ে বসে পলিসি ঠিক করা। আমদানিকারকদের আশ্বস্ত করা যে, অন্য দেশ থেকে আমদানির এলসি খোলার পর পরবর্তী দেড় দুই মাসে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু করলেও বাংলাদেশ আনবে না। তাহলে চীন, তুরস্ক, পাকিস্তান বা নেদারল্যান্ডস থেকে আমদানিতে উত্সাহিত হতো। কারণ কেউ তো অনিশ্চয়তায় ঋণপত্র খুলতে চাইবে না। এখন ঋণপত্র খুলে বেশি দামে পেঁয়াজ আমদানির পর যদি ভারত থেকে আবার পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়ে যায়, তাহলে তো আমদানিকারকরা লোকসানের মুখে পড়তেন। ঋণপত্র খুলে ঐসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগে। তবে আলোচ্য সময়ে পেঁয়াজের আমদানি কমে যাওয়ায়, যোগান কমে যাওয়ায় এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।