খবর৭১ঃ
সাগর পথে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়া হবে। সেই হিসেবে ৪১ রোহিঙ্গার সঙ্গে চুক্তি করে দালাল চক্র। এরপর রোহিঙ্গাদের ট্রলারে করে সারা রাত সাগরে ঘুরানো হয়। গভীর রাতে এসে রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর সোনাদিয়ার মগচরে নামিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, ‘এটাই মালয়েশিয়া। তোমরা মালয়েশিয়া এসে পড়েছ।’ তাদের নামিয়ে পালিয়ে যায় ট্রলারের মাঝি ও দালাল চক্রের সদস্যরা।
সোনাদিয়ার মগচরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের তৈরি করা অনেক বাসা রয়েছে। এখানে রাতে বাতি জ্বলছিল। দূর থেকে এসব বাতি ঝলমল করতে দেখা যাচ্ছিল। আর সেই বাতি দেখিয়ে দালাল চক্রের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের বোঝাল এটাই মালয়েশিয়া। পরে তাদের শনিবার গভীর রাতে এখানে নামিয়ে দেওয়া হয়। রবিবার (২৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কর্মীরা রোহিঙ্গাদের দেখতে পায়।
রোহিঙ্গারা জানান, গত ৫ দিন আগে থেকে তাদেরকে সাগর পথে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সাগরে ঘুরাতে থাকে। শেষে তাদেরকে মালয়েশিয়া বলে সোনাদিয়ার চরে নামিয়ে দেয় দালালরা। বালুখালী ক্যাম্প, ঘুমঘুম ক্যাম্প, ও কুতুপালং ক্যাম্প থেকে তারা দালালের মাধ্যমে ট্রলারের উঠে।
স্থানীয়রা জানান, সংবাদ পেয়ে মহেশখালী থানা পুলিশ সোনাদিয়া চরে পৌঁছার আগেই ২০ রোহিঙ্গাকে কিছু লোক প্যরাবনে ও বিভিন্ন চিংড়ী ঘেরের খামারে ও বাসাবাড়িতে লুকিয়ে রাখে। পরে মহেশখালী থানার এসআই নুরুন্নবীর ও এএসআই ফিরোজের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে সোনাদিয়ার মগচর হতে দুই শিশুসহ ২১ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে মহেশখালী থানায় নিয়ে আসা হয়।
উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা হলেন- রুমাইনা, পিতা- মো. কামাল, মাতা- রেহেনা, সাং- থাংবাজার, থানা- ভুছিদং, জেলা- মংডু, ক্যাম্প কুতুপালং মধুরছড়া ব্লক-বি-৫, ক্যাম্প-১, কুতপালং ১ নং ক্যাম্পের মধুরছড়া বি-ব্লক ৫-এর আহমদ উল্লার ছেলে মো. অহিয়াজ, কুতুপালং ৩ নং ক্যাম্পের ব্লক-বি, বি২০ এর নুরুল হকের স্ত্রী মোহছেনা, কুতুপালং ৩ নং ক্যাম্পের ব্লক-বি.বি ২০ এর আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে নুরুল হক, কুতুপালং ৩ নং ক্যাম্পের ব্লক-বি.বি ২০ এর নুরুল হকের মেয়ে নুর ফাতেমা, কুতুপালং ৩ নং ক্যাম্পের ব্লক-বি.বি ২০ এর নুরুল হকের ছেলে আব্দুল হক, ক্যাম্প ২৬ ব্লক, পিজি-২ এর আইয়ুজ আহমদের মেয়ে সানজিদা, কুতুপালং ক্যাম্প রেজিষ্ট্রার ব্লক-সি এর মিয়া হোসেনের মেয়ে ছাবেকুন্নাহার।
অন্যরা হলেন- কুতুপালং ক্যাম্পের ১৭ নং ব্লকের জমির আহমদের মেয়ে নুরুজ্জাহান, কুতুপালং বি ব্লকের মো. ইউনুছের মেয়ে ইসমত আরা, জামতলি ক্যাম্পের ব্লক এইচ-টু এর মৃত নুর হোছাইনের মেয়ে নুর আকলিমা, মুছনি ২৬ নং ক্যাম্পের ব্লক-সি ৫ এর এরশাদ উল্লার মেয়ে আছমা বিবি, থ্যাংখালী ক্যাম্পের ব্লক এ-৫ হারুনর রশিদের মেয়ে নুর কায়দা, কুতুপালং ১ নং ক্যাম্পের রাহামত উল্লার মেয়ে শামশুন্নাহার, কুতুপালং ক্যাম্পের ব্লক এএ ১৩ এর আজিজুর রহমানের মেয় সানজিদা, কুতুপালং ক্যাম্পের ব্লক এ-২, বি-৫ এর আমান উল্লার মেয়ে রুজিনা, বালুখালী ক্যাম্পের ব্লক-ডি-৩ এর কামাল হোসেনের পুত্র জন্নাত উল্লাহ।
বালুখালী ক্যাম্পের ৮ ব্লক-বি-৫ এর আব্দুল মোনাফের ছেলে মো. আজম, কুতুপালং ক্যাম্পের ব্লক জি-এর ওমর আলীর ছেলে মো. জোবাইর, বালুখালী ক্যাম্প-৮, ব্লক-বি ৩৬ এর মো. আলীর পুত্র নাজিমুল হক, দুমদুম মিয়া ২৭নং ক্যাম্পের ব্লক-সি এর আব্দু শুক্কুরের পুত্র হুবাইব উল্লাহ, দুমদুম মিয়া ২৭নং ক্যাম্পের ব্লক-সি-১০ এর আব্দু সালামের পুত্র মোঃ কাইছার আলম, নয়াপাড়া ৫নং ক্যাম্পের ব্লক-বি ওসমান গণির পুত্র নুর হোছন, রিফুজি ক্যাম্প নয়াপাড়া ব্লক বি এর ছৈয়দুল ইসলামের পুত্র মাহাবুবুর রহমান, বালুখালী-১ ৮নং ক্যাম্প এর ব্লক-৩৫ এর সফিক আহমদের পুত্র মোৎ আনছার।
মহেশখালী থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর জানান, উদ্ধারকৃতদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মালেশিয়ায় মানবপাচার কাজে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যাচাই-বাচাই পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।