সন্ত্রাস, দুর্নীতিতে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না : প্রধানমন্ত্রী

0
467
সন্ত্রাস, দুর্নীতিতে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না : প্রধানমন্ত্রী

খবর৭১ঃ যুবকদের বিশেষ করে নেতা-কর্মীদেরকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, অনিয়মকারীদের কোন ছাড় হবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দিন-রাত দেশের মানুষের জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছি। চলার পথে কেউ যদি বিপথে যায় এবং সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতিতে জড়ায়, সে যেই হোক আমি তাদের ছাড়ব না। তাদের প্রতি আমার কোন সহানুভূতি থাকবে না।’

শেখ হাসিনা শনিবার সকালে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি বলেন, এই দেশ জাতির পিতা শুধু স্বাধীন করেই যান নাই। এর আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য তিনি বুকের রক্তও দিয়ে গেছেন। সেকথা সবাইকে স্মরণ রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘এই দেশ কখনো ব্যর্থ হতে পারে না, এদেশকে আমরা সফল করে তুলেছি এবং সেই সফলতার পতাকা নিয়েই আমরা সামনে এগিয়ে যাব এবং একদিন স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে যে মর্যাদা পেয়েছিল সেই মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা পূরণ করবো।’

এদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেজন্য তার সরকার শতবর্ষ মেয়াদি ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। আদর্শের মধ্যদিয়েই একটি সংগঠন যেমন গড়ে ওঠে তেমনি দেশকেও কিছু দেওয়া যায়। সেই কথাটাই সবসময় মাথায় রাখতে হবে।’

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক চয়ন ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদ এবং সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন শোক প্রস্তাব পাঠ করেন।

এরআগে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসের উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চারনেতা, মুক্তিযুদ্ধের সকল শহিদ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্টের সকল শহিদ, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ সকল গণআন্দোলনের শহিদ এবং ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেস থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের শাহাদৎ বরণকারী নেতা-কর্মীদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সারারদশের ৭৭টি সাংগঠনিক জেলা থেকে ২৮ হাজারেরও বেশি কাউন্সিলর যুবলীগের এই ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।

আওয়ামী যুবলীগ বাংলাদেশের প্রথম যুব সংগঠন যা ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর জাতির পিতার নির্দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট জাতির পিতা এবং তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের শিকার বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে দৈনিক বাংলার বানী সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যুবলীগ সংগঠনের যেন কোনরকম বদনাম না হয়। তারা যেন সম্মান নিয়ে চলতে পারে এবং আদর্শ নিয়ে চলে দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এই সংগঠনটাকে গড়ে তুলতে হবে। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, এই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সৃষ্টি হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে। কোন উড়ে এসে জুড়ে বসা এবং ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোগীদের মাধ্যমে এই সংগঠন গড়ে ওঠে নাই।

তিনি বলেন, ‘এ সংগঠন গড়ে উঠেছে নির্যাতিত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করবার লক্ষ্য নিয়ে। সেই সাথে সাথে আওয়ামী লীগের প্রতিটি সহযোগী সংগঠনও এদেশের মানুষের কল্যাণ ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীনতার সুফল প্রত্যেকটি মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই গড়ে তোলা হয়েছে। সেই আদর্শ থেকে কখনও যদি কেউ বিচ্যুত হয়ে যায় তাহলে সেদেশকে কিছু দিতে পারে না। ’৭৫ এর ১৫ আগষ্টের পর ক্ষমতা দখলকারীরাও মানুষের কল্যাণে কিছু করতে পারে নি। তারা নিজস্ব বিত্তবৈভব অর্জনে ব্যস্ত থেকেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা এদেশকে স্বাধীন করে গেছেন কাজেই কারো কাছে হাত পেতে চলবো না, মাথা উঁচু করে চলবো। কারো কাছে ধার করে ঘি খাবো না, নিজেদের নূন ভাত খাবো তাও ভাল কিন্তু নিজেদের অর্থায়নে নিজেরা চলবো, মর্যাদা নিয়ে চলবো।’

ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার উর্ধ্বে উঠে দেশের কল্যাণে কতটুকু কাজ করতে পারলাম সেই মনভাব নিয়েই সকলকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে আমরা যদি সংগঠন গড়তে পারি তাহলে এই বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেভাবেই এগিয়ে যাবে।’

আর যেন কেউ বাংলাদেশের মানুষের ওপর শোষণ, অত্যাচার, নির্যাতন করতে না পারে। তৃণমূল পর্যায় থেকে যেন মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হয়, সেই জন্য একেবারে গ্রামের মাঠ পর্যায় থেকে তাঁর সরকার সকল আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here