খবর৭১ঃ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে ধর্মঘট-অবরোধে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। আন্দোলনের কারণে গত শুক্র ও শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন কোর্সেরও কোন ক্লাস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এদিন সকাল থেকে পূর্বঘোষিত ধর্মঘট-অবরোধের সমর্থনে বিভিন্ন অনুষদ ভবনের সামনে অবস্থান করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা ভবনগুলোর দরজায় তালা লাগিয়ে দেন। এতে সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষার্থীরা শ্রেণি কক্ষে প্রবেশ করতে পারেননি।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘উপাচার্য ফারজানা ইসলাম আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে তদন্তের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি আমরা। আন্দোলন দমন করতে এর আগে নানা পাঁয়তারা করেছে প্রশাসন। এবার মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ তুলে মামলা করা হয়েছে। আমাদের এ আন্দোলন চলবে।’
অন্যদিকে ভিসি পন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং উন্নয়নের পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর’ প্লাটফর্মের শিক্ষক অধ্যাপক বশির আহমেদ বলছেন, যেসব অভিযোগ তারা করেছেন এর কোন ভিত্তি নেই। তারা ক্লাসে না এসে আন্দোলনে নামলেও আমরা ক্লাস পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু বিভিন্ন ভবনে তালা লাগানোর ফলে ভেতরে ঢুকতে পারছিনা। আমরা চাই একটি সুষুম তদন্ত হোক। আর এভাবে আন্দোলন করে তো কোন সমাধান হয়না। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চায় কিন্তু তাদের কারণে ক্লাস পরীক্ষা বিঘ্নিত হচ্ছে।
এদিকে এ সমস্যার উত্তরণ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে শিক্ষক সমিতি। তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান সংকট নিরসনে গত ২৮ অক্টোবর শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে। কমিটি ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’, ও ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং উন্নয়নের পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর’ নামের দু’টি প্লাটফর্ম এবং উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করে। সব পক্ষ সংকট নিরসনে আচার্যের হস্তক্ষেপের বিষয়ে একমত হয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থা উন্নয়নে শিক্ষক সমিতি আচার্যের কাছে আবেদন জানানোর সিন্ধান্ত নেয়।
অন্যদিকে আন্দোলনের সময় এক সহকারী প্রক্টরকে আহত করার অভিযোগে অজ্ঞাত ৫০-৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীনের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আশুলিয়া থানায় এ মামলা করা হয়। তবে আন্দোলন ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ এই মামলা করেছে বলে দাবি করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ আন্দোলনের কারণে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস পরীক্ষা। গত সোমবার থেকে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বন্ধ রেখেছে সকল একাডেমিক কার্যক্রম। যার কারণে বিভিন্ন বিভাগের টিউটোরিয়াল পরীক্ষা ও ক্লাস অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এর ফলে দীর্ঘ সেশন জটের আশংকা দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের দাবি জানিয়েছে তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বক্তব্য: একাধিকবার ফোন দেওয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার বরাত দিয়ে উপচার্যপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, উপাচার্য তো এ বিষয়ে সুষ্ঠ তদন্তের জন্য আচার্যকে জানিয়েছেন। তিনি তো তার বিষয়ে তদন্ত করতে পারেন না। তিনি আন্দোলনকারী শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আলোচনার মাধ্যমে ক্লাসে ফিরে আসার আহবান জানিয়েছেন।
ছাত্রলীগের সভাপতির বক্তব্য: শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘অবরোধের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। শিক্ষার্থী হিসেবে এটা আমাদের কাম্য নয়। আমরা ক্লাস-পরীক্ষাকে আন্দোলনের আওতামুক্ত রাখার জন্য আন্দোলনকারীদের কাছে দাবি জানিয়েছি। আর ক্লাস-পরীক্ষা ছাত্রদের অধিকার। এই অধিকার হরনের ক্ষমতা কারো নেই। আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা ভিত্তিহীন।