খবর৭১ঃ
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জের সেনুয়া নামক এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশানের প্রায় ৫ বিঘা জমি, পুকুর ও বাঁশঝাড় দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী সিরাজ উদ্দিন ওরফে সিরাজ সিকদারের বিরুদ্ধে। দখলে বাঁধা দিতে গেলে তিনি বাঁধাদানকারিদের প্রাণ নাশের হুমকিসহ শ্মশানঘাটটি ‘কারবালার প্রান্তর’ করার হুশিয়ারী দেন।
জানা যায়, ব্রিটিশ আমল থেকে ভাঙ্গাব্রীজ তিলিপুকুরটিতে মাছ চাষ ও তিলি পুকুরের চারপাশের প্রায় ৫ বিঘা জমিতে তিন গ্রামের (বেগুনগাঁও, দক্ষিণ সেনুয়া ও নাপিত পাড়া) স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা মৃত ব্যক্তিদের দাহ্যকার্য সম্পাদনসহ পুকুরের মাছ বিক্রি করে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান পালন করে আসছিলেন।বিগত বছর দশেক আগে মৃত-সলেমান আলীর প্রভাবশালী ছেলে সিরাজ উদ্দিন ও তার তিন ভাই জাহিদ, জিয়া এবং কালাম ও মৃত: খমিরউদ্দিন এর ছেলে দবির উদ্দিন ওরফে গুনাই পুকুরটি জবর দখল করে পুকুর ধারে বসতঘর নির্মাণ করে বসবাস শুরু করে। সেসময় তাদের বাঁধা দেওয়া হলে তারা জানায় জমিটি তারা পত্তনক্রয় করেছেন। তবে তারা কোন কাগজ দেখাতে পারেননি, প্রভাবশালী হওয়ায় গায়ের জোরে জবরদখল করে রাখেন। সম্প্রতি তারা শ্মশানের পুকুর ধার ও বাঁশঝাড় কেটে ফেলেন এবং শ্মশানের জায়গায় ইট, বালু ও খোয়া মজুত করে বিল্ডিং নির্মাণের উদ্দেশ্যে গর্ত করা শুরু করলে ফুসে উঠে তিন গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। তারা বিল্ডিং নির্মাণ কাজে বাধা দিয়ে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে অবৈধ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন।
এ ঘটনায় সুষ্ঠ বিচার চেয়ে জেলা প্রশাসক ঠাকুরগাঁও, পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ ঠাকুরগাঁও, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ ঠাকুরগাঁও, ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাব, পীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন তিলি পুকুর শ্মশানঘাট সংরক্ষণ কমিটি। এদিকে লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১ নভেম্বর বিকেলে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিরসনে স্থানীয়ভাবে এক সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পীরগঞ্জ পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক প্রফুল্ল শর্মা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ পীরগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি অতুল চন্দ্র রায়, সা: সম্পাদক অধ্যাপক গোপীনাথ, জেলা পরিষদ সদস্য মো: আছির উদ্দিন, পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সুকুমার রায়, ভোমরাদহ ইউপি চেয়ারম্যান হিটলার হক, তিলি পুকুর শ্মশানঘাট সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি পুলিন চন্দ্র শীল, সাধারণ সম্পাদক মনোরঞ্জন শীল, সাবেক মেম্বার ধীরেন সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সকলের সম্মতিক্রমে শ্মশানের জমি পুণরুদ্ধারে স্বল্প সময়ের মধ্যে পীরগঞ্জ উপজেলা ভূমি কমিশনার, সরকারি সার্ভেয়ার ও আমিনদের নিয়ে সমস্ত জমি মাপজোক করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। তিলি পুকুর শ্মশানঘাট সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি পুলিন চন্দ্র শীল জানান, আমাদের পূর্বপুরুষরা সেই ব্রিটিশ আমল থেকে এই শ্মশানে মৃত ব্যক্তির সৎকার করে আসছে, এখন আমরা তিন গ্রামের মানুষ এ শ্মশানঘাট ব্যবহার করি।কিন্তু সিরাজ সিকদার ও তার ভাইয়েরা আমাদের সেই শ্মশানের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা করছে।
আমরা এর প্রতিকার চেয়ে বিভিন্নদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। সাবেক মেম্বার ধীরেন জানান, সিরাজ সিকদার প্রভাবশালী হওয়ায় আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে।আমরা ন্যায় বিচার চাই। স্থানীয় যুবক বিষ্ণু শর্মা বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষদের ব্যবহৃত শ্মশানঘাটটি আমরা ব্যবহার করে আসছি, কিন্তু প্রভাবশালী সিরাজ সিকদার আমাদের বিভিন্ন রকম ভয়-ভীতি দেখিয়ে শ্মশানঘাটের পুকুর জবর দখল করে শ্মশানের জায়গাটিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের পায়তারা করছে। আমরা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।শ্মশানের জমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সিরাজ সিকদারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার রায় জানান, সেনুয়ায় শ্মশানের জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ গিয়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়।