খবর৭১ঃ
শুক্রবার ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের মাঠে কিশোরদের মাসিক পত্রিকা কিশোর আলোর বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে এসে বিদ্যুস্পর্শে নিহত হয়েছেন ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার। তার মৃত্যুর সংবাদ জানার পরও বিষয়টি দর্শকদের কাছে চেপে রেখে অনুষ্ঠান চালিয়ে গেছেন আয়োজকরা।
এমনকি মহাখালীর বেসরকারি ইউনিভার্সেল হাসপাতাল থেকে যখন আবরারের মৃত্যুর সংবাদ শুনলেন তারা, তখন মঞ্চে গান চলছিল। সে গান বন্ধ করেননি আয়োজকরা। এ কথা জানিয়েছেন গতকাল ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা বেশ কয়েকজন দর্শক ও রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট মোরশেদ শিশু বলেন, আবরার যখন বিদ্যুস্পর্শে আহত হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে তখন মঞ্চে গান গাইতে উঠেছিলেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী তাহসান। আয়োজকরা সে সময় তাহসানকে গান পরিবেশন বন্ধ করতে দেননি। এরপর আমরা যখন জানলাম আবরার আর বেঁচে নেই, তখন মঞ্চে গান গাইছিলেন জনপ্রিয় শিল্পী অর্নব। অর্নবকে দিয়ে গান পরিবেশনও নির্বিঘ্নে চালিয়ে গেছেন আয়োজকরা।
মিশু ছাড়াও রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, আবরার যখন বিদ্যুস্পর্শে আহত হলো তখন কিশোর আলো কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটা উপস্থিত সবাইকে জানাতে কিংবা বৈদ্যুতিক তারের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক পর্যন্ত করেননি। অনুষ্ঠান আয়োজক ও কলেজ কর্তৃপক্ষের এ দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
শিক্ষার্থী নাঈমুল আবরারের মৃত্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন একই কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াজ। তার প্রশ্ন, মৃত্যুর খবর চেপে রেখে কেন গান চলল, অনুষ্ঠান চলল?
এক শিক্ষার্থী বলেন, বিকেল সাড়ে তিনটার সময় সে আহত হয়েছে, ডাক্তাররা বলছে মারা গেছে। তখন কেন ঘটনাটা জানানো হয়নি। অনুষ্ঠানস্থলের পাশেই ওর ডেডবডিটা ছিল। কেন অনুষ্ঠানটা চলল। এরপরেও কেন দুই ঘণ্টা ধরে গান চলল। বিষয়টি নিয়ে গতকাল রাত থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড় বইছে।
বিকালে গুরুতর আহত আবরাকে কেন মহাখালীর বেসরকারি ইউনিভার্সেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো সে প্রশ্নও ছুড়ছেন আবরারের সহপাঠীরা।
আবরারের এক সহপাঠী বলেন, এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটল অথচ আবরারকে মোহাম্মদপুর থেকে নিয়ে যাওয়া হলো মহাখালীতে। এতদূর নিতে হলো কেন? আশপাশেই তো কত হাসপাতাল ছিলো, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ছিল।
এদিকে জানা গেছে, আবরার মৃত্যুর ঘটনাকে একটি দুর্ঘটনা আখ্যা দিয়ে লাশের ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ খবরেও ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদ জানান, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পর সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এরপর এখানে যে চিকিৎসকরা ছিলেন তারা তাকে দেখেন। কিন্তু তারা পালস পাচ্ছিলেন না। তাই দ্রুত তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। হাসপাতাল থেকে জানানো হয় সে আগেই মারা গেছে।
তিনি বলেন, আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষ, কিশোর আলো কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ পুলিশ এবং মৃতের বাবা-মা; আমরা সবাই একসঙ্গে বসেছিলাম। আমরা একটা বিষয়ে একমত হয়েছি, এর জন্য কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে দায়ী না করে এটাকে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নিয়ে পোস্টমর্টেম ছাড়া লাশ নিয়ে এসেছি।
প্রসঙ্গত দৈনিক প্রথম আলোর সাময়িকী কিশোর আলোর আনন্দ আয়োজনে বিদ্যুৎস্পর্শে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার নিহত হয়েছে। শুক্রবার ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের মাঠে কিশোরদের মাসিক পত্রিকা কিশোর আলোর বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে এসেছিল আবরার। সেখানে বিকালে অনুষ্ঠান চলাকালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হয় সে।
পরে ওই মাঠে স্থাপিত জরুরি মেডিকেল ক্যাম্পের দুজন বিশেষজ্ঞ (এফসিপিএস) চিকিৎসক নাইমুলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। এরপর তাকে মহাখালীর বেসরকারি ইউনিভার্সেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আবরারকে মৃত ঘোষণা করেন।