ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিষয়ক সর্বোচ্চ ফোরাম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দল ও সাদা দলের অধ্যাপকদের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। অবৈধভাবে ৩৪ ছাত্রলীগ নেতার ভর্তি ও ডাকসু জিএস গোলাম রাব্বানীকে অনিয়মের মাধ্যমে এম.ফিলে ভর্তির সুযোগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। পৌনে দুই ঘণ্টার এই অধিবেশনে দীর্ঘ ১ ঘণ্টা যাবৎ বাক-বিতন্ডা চলতে থাকে। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এ সভার আয়োজন করা হয়।বিকেল তিনটা থেকে পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত এ সভা চলে।
সভা সূত্র জানায়, ডাকসু নিবাচনকে সামনে রেখে ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান ৩৪ নেতাকে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধীনে পরিচালিত সান্ধ্যকালীন “মাস্টার্স অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট প্রােগ্রামে” বিনা ভর্তি পরীক্ষায় বিধি বহির্ভূতভাবে ভর্তি করানো এবং ডাকসুর জিএসের ক্রিমিনােলজি বিভাগে এম.ফিল ভর্তি সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়টি উপস্থাপিত হলে একে রাজনীতি বলে আখ্যায়িত করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দলের শিক্ষক এবং আওয়ামী পন্থী নীল দলের শিক্ষকদের মধ্যে তুমুল আলোচনা সমালোচনা হয়।
সভার একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেন, সাদা দলের শিক্ষকদের মধ্যে আহ্বায়ক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মো. লুৎফর রহমান, অধ্যাপক ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক লায়লা নূর ইসলাম বক্তব্য রাখেন। অন্যদিকে বক্তব্যে জানানো তাদের দাবির বিপরীতে নীল দলের শিক্ষকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক জিনাত হুদা, অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদ, অধ্যাপক ড. মো. অহিদুজ্জামান, অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ হোসেন, অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান প্রমুখ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিকেল তিনটার দিকে ঢাবির সিনেট ভবনে একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অধ্যাপক, বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালকবৃন্দ এই একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য। উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় প্রায় দেড়শতাধিক শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়।
সভাসূত্র বলছে, সভায় কথা বলার জন্য একাধিকার সুযোগ চান ঢাবির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম। তবে সভার শেষ দিকে তাকে সুযোগ দেয়া হয়। তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনকে বিশেষ সুবিধা দানের উদ্দেশ্যে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ব্যাংকিং এন্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধীনে পরিচালিত “মাস্টার্স অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে’ ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে অবৈধভাবে ভর্তির প্রতিকার না হতেই ডাকসুর নির্বাচিত জিএস’র অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ে এম.ফিল ভর্তি সংক্রান্ত অনিয়মের কথা প্রকাশিত হয়েছে। আমরা মনে করি এটি ঢাবির ঐতিহ্য ও সুনামের জন্য অত্যন্ত হানিকর ঘটনা।’
‘সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া ঢাবির দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য। কিন্তু আজ এ ঐতিহ্যটিও নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। আমরা প্রথম থেকেই এ অন্যায় কাজের প্রতিবাদ এবং এর সাথে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দাবি করে আসছি। ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে অবৈধ প্রক্রিয়ায় ৩৪ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল ও সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দাবি করে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন, উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেও আমরা এর কোনো প্রতিকার পাইনি। এ বিষয়ে সম্প্রতি আমাদের বক্তব্য ও অবস্থান তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষকের কাছে আমরা খোলা চিঠিও প্রদান করেছি। আর এরই মধ্যে আমরা ডাকসুর বর্তমান জিএস’র (গোলাম রাব্বানী) বিধি বহির্ভূতভাবে এমফিল ভর্তির সংবাদ জেনে বিস্মিত ও হতবাক হয়েছি। আমরা আবারো এর তীব্র নিন্দা এবং ভর্তি বাতিল ও একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপকর্মের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার জন্য দাবি জানাচ্ছি।’
ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, আজকের এই একাডেমিক কাউন্সিলের সভা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বডির সভা। এই সভায় মোট ৩৫ জন অবৈধ ভর্তি প্রক্রিয়ার তদন্ত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বরেণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তাব করছি। এই তদন্ত কমিটির কাজ হবে ওই ভর্তির অনিয়ম তদন্ত করে দায়িদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যের পরই আওয়ামী লীগ সমর্থিত নীল দলের অনেক শিক্ষক হট্টগোল শুরু করেন। তারা বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান। এসময় উপাচার্য বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা এখানে রাজনীতি করতে এসেছেন। এখানে তো রাজনৈতিক দলের নেতাও আছে!’ তুমুল বাকবিতণ্ডা আর হট্টগোলের মধ্যেই অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলামের বক্তব্য এক্সপাঞ্জের ঘোষণা দেন ভিসি আখতারুজ্জামান।