সম্প্রচার আইন পাশ হলে চাকরি সুরক্ষা হবে: তথ্যমন্ত্রী

0
586
সম্প্রচার আইন পাশ হলে চাকরি সুরক্ষা হবে: তথ্যমন্ত্রী

খবর৭১ঃ সম্প্রচার আইন পাশ হলে সম্প্রচারমাধ্যম কর্মীদের চাকরি সুরক্ষা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘দেশে সম্প্রচার নীতিমালা হয়েছে। সম্প্রচার আইন ও গণমাধ্যমকর্মী আইন নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া, নবম ওয়েজবোর্ডে স্পষ্ট বলা আছে, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের জন্য একটি আলাদা নীতিমালা করতে হবে। আমি মনে করি নবম ওয়েজবোর্ডের সুপারিশের আলোকে একটি নীতিমালাও করা প্রয়োজন, যাতে করে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার শ্রমিক, কর্মচারী, সাংবাদিক সবার জন্য আইনি সুরক্ষা থাকে।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) সেমিনার হলে বেসরকারি টেলিভিশন সাংবাদিকদের সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) আয়োজিত ‘সম্প্রচার মাধ্যমের সংকট’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এ কথা বলেন।

এ সময় তথ্যমন্ত্রী গণমাধ্যমের মালিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের বলবো, সাংবাদিকদের বঞ্চিত করবেন না। সময়মতো বেতন পরিশোধ করবেন। কারণ গণমাধ্যমকর্মীরা অনেক কষ্টে কাজ করেন, তারা যদি সবাই কর্মবিরতি করে, তাহলে চ্যানেল চলবে না। সেটি তারা করছে না, এইজন্য তাদের ধন্যবাদ। যে খেয়ে না খেয়ে, তিনমাস বেতন না পেয়ে তারা কাজ করছে। তাদের এ দরদ সবার অনুধাবন করা প্রয়োজন, যাতে অহেতুক কারো চাকরি চ্যুতি না ঘটে।’

ড. হাছান বলেন, ‘আপনারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিশ্চয়ই সাধুবাদ দেবেন কারণ তাঁর হাত ধরেই এই প্রাইভেট টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে তিনি যখন সরকার গঠন করেন তখনই তিনি প্রথম প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স দেন। সম্প্রচার মাধ্যম অর্থাৎ ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বাংলাদেশে গত ১১ বছরে তিন গুনের চেয়ে বেশি বেড়েছে। ২০০৯ সালে যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয়বার ক্ষমতা নেন, তখন বাংলাদেশে টেলিভিশন চ্যানেলের সংখ্যা ছিল ১০টি। এখন টেলিভিশনের সংখ্যা সম্প্রচারে আছে প্রায় ৩৪টি, আমরা লাইসেন্স দিয়েছি ৪৫ টি। অর্থাৎ আরও কিছু সম্প্রচারে আসবে। আমি মন্ত্রণালয়ে যে সমস্যাগুলো উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি সেগুলো সমাধানের জন্য প্রথম থেকেই চেষ্টা করেছি। দীর্ঘদিনের পূঞ্জিভুত সমস্যা হঠাৎ করে সমাধান করে দেয়া যায়না, একটু সময় প্রয়োজন।’

‘এরপরও অনেক সমস্যা ইতোমধ্যেই সমাধান হয়েছে’ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যেমন ক্যাবল নেটওয়ার্কে টেলিভিশনের ক্রম ঠিক রাখার জন্যে বা উপরে নেয়ার জন্য ক্যাবল অপারেটরদের সঙ্গে যে দেন-দরবার করতে হতো এবং দেন-দরবারের সঙ্গে আরও অন্যান্য কিছুও করতে হতো। সেটি করে সিরিয়াল ঠিক করা হলো পরে আবার নামিয়ে দিতো, এখন সেই পরিস্থিতির সারাদেশে অবসান ঘটেছে।’

টেলিভিশনে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন বিদেশে চলে যাচ্ছিল; উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘বাংলাদেশে বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেখানো আইনসম্মত নয়, আইন বিরোধী। আমরা ডাউলিংকের পারমিশন যারা পেয়েছে, তাদের সবাইকে চিঠি দিয়েছি, মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছে এবং বিদেশি চ্যানেলগুলোকেও তারা জানিয়েছে। এতে যেটি হয়েছে বাংলাদেশের যে বিজ্ঞাপন বিদেশি চ্যানেলে প্রচার হতো সেটি পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে। তবে, বাংলাদেশের কয়েকটি কোম্পানির ভারতেও কারখানা আছে, ভারতে রেজিস্টারপ্রাপ্ত। ভারতের রেজিস্টার্ড কোম্পানি যখন বিজ্ঞাপন দেয়, এটি আমাদের আওতায় পড়ে না। তবুও এ বিষয়ে আমরা ব্যাখ্যা চেয়েছি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন চলে যাচ্ছিল, সেটি তো আর যাচ্ছে না। এখন যারা মালিকপক্ষ নিশ্চয় জানেন ছয় মাস আগের তুলনায় টেলিভিশনগুলো অনেক ভালো চলছে। যেটা সিঙ্গাপুরে অন্য কোম্পানির মাধ্যমে চলে যেত, আর হুন্ডি হয়ে টাকা চলে যেত, সেটা বন্ধ হয়েছে। সুতরাং পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে। একটি পদক্ষেপ নেওয়ার পর কার্যকর হতে কয়েক মাস সময় লাগে।’

‘এখানে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে সম্প্রচার মাধ্যমে এখনো ডিজিটাল হয়নি, বেআইনি বিজ্ঞাপন বন্ধ বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় অন্তরায়। আমরা সম্প্রচার মাধ্যমকে ডিজিটাল করার জন্য কাজ করছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সম্প্রচার মাধ্যমকে ডিজিটাল করা হবে। এর বাইরেও বিদেশি চ্যানেল যাতে ক্লিন ফিড দেয়, সেজন্য আরও সে চিন্তা-ভাবনাও আমাদের আছে। বিদেশি চ্যানেল বন্ধ করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। বিদেশি এই চ্যানেলগুলোর যেহেতু দর্শক তৈরি হয়েছে, আমরা যখন আইনের কড়াকড়ি করতে যাই, যারা এগুলো ডাউলিংক করে এখানে সম্প্রচার করে তখন এই দর্শকদের কাজে লাগিয়ে তারা ব্ল্যাকমেইলকরার চেষ্টা করে। কিন্তু দেশের আইন বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। যাতে দেশের আইন বাস্তবায়িত হয় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের নাট্যকর্মীরা নাটক পায়না, বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনচিত্রে যারা অভিনয় করে তারা ঠিকমতো কাজ পাচ্ছে না, আমাদের দেশে ছেলেমেয়েরা অনেক স্মার্ট এবং তারা ভালো বিজ্ঞাপন বানায়। ইদানিং আমরা দেখতে পাচ্ছি কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলে বিদেশি সিরিয়াল নিয়ে এসে ডাবিং করে সেগুলো সম্প্রচার করা হচ্ছে, এমনকি ত্রিশ বছরের পুরনো সিরিয়ালও। বাংলাদেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন বিদেশে বানিয়ে নেয়া হচ্ছে, অনেক ভালো ভালো শিল্পী থাকা সত্ত্বেও বিদেশে সেকেন্ড গ্রেডের শিল্পী দিয়ে সেগুলো বানিয়ে নেয়া হচ্ছে। এতে আমাদের ছেলেমেয়েরা বঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা এ ব্যাপারেও উদ্যোগ নিয়েছি, এজন্য ট্যাক্স দিতে হবে। এ উদ্যোগ কেউ নেয়নি।’

ড. হাছান বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই বিদেশি সিরিয়াল প্রচারের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি নিয়ে প্রচার করার জন্য পরিপত্র জারি করেছি। এবং যারা চালাচ্ছে তারা অনুমতি নিচ্ছে। যেখানে একটি সিনেমা সেন্সরবোর্ড অনুমতি নিয়ে আসতে হয়, সেখানে একটি সিরিয়াল যেটিতে ৫০ বা ১০০ পর্ব আছে, সেটি কি সরকারের কাছে একটি চিঠি দিলেই কি আমরা অনুমতি দিয়ে দিবো ? সে কিন্তু হওয়া সমীচীন নয়। সেজন্য আমরা একটি কমিটি করে দিচ্ছি খুব সহসা, সেন্সর বোর্ডে যেমন ছবি প্রদর্শন করতে হয় সে রকম এ কমিটির কাছে।

ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের আহ্বায়ক রেজওয়ানুল হক রাজার সভাপতিত্বে ও মহাসচিব শাকিল আহমেদের সঞ্চালনায় পিআইবি মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের প্রেসিডেন্ট মোল্লা জালাল, একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক বাবু, ডিবিসি২৪ টিভি চ্যানেলের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, মুন্নী সাহা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী প্রমুখ খোলামেলা আলোচনায় অংশ নেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here