খবর৭১ঃ
মঈনুল হাসান রতন, হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের লস্করপুর ভ্যালীতে চলতি বছর চা উৎপাদনের নতুন রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে। চা শিল্পের ১৬১ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ভ্যালীতে চলতি মৌসুমের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সর্বোচ্চ উৎপাদন অর্থাৎ ৯১ লাখ ৩১ হাজার ২শ ৪৬ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে।যা গত বছরের তুলনায় ১৯.৩৪ শতাংশ বেশী। মওসুমের আগামী ৩ মাস আবহাওয়া অনুকুলে ও রোগ-বালাই কম এবং উৎপাদনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে চায়ের উৎপাদন ভ্যালীতে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।
পাশাপাশি চা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানী বাড়লে নতুন যুগে প্রবেশ করবে চা শিল্প।চা বাগান ও ভ্যালী সুত্রে জানা যায়, চা শিল্পকে টিকিয়ে রাখায় বাগান ব্যবস্থাপনায় আমুল পরিবর্তন, নতৃন বাগান সৃষ্টি, আবহাওয়া অনুকুলে থাকা, চলতি বছর আগাম বৃষ্টি হওয়ায় এবং রোগ বালাই কম থাকার কারণে চলতি মওসুমে (মার্চ-সেপ্টেম্বর) হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার লস্করপুরে ভ্যালীর ১৭টি চা বাগানে ১৯.৩৪ শতাংশ চা বেশি উৎপাদন হয়েছে।২০১৮ সালে ৭ মাসে উৎপাদিত হয়েছিল ৭৬ লাখ ৫১ হাজার ৬শ ২৬কেজি চা। চলতি বছর এ সময়ে ভ্যালীতে উৎপাদিত হয়েছে ৯১ লাখ ৩১ হাজার ২শ ৪৬কেজি চা। যা ভ্যালীর ইতিহাসে এবারই প্রথম। এর মধ্যে শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই ভ্যালীতে উৎপাদন ১১.০৪ শতাংশ বেশি হয়েছে।২০১৮ সালে ভ্যালীতে একই সময়ে উৎপাদিত হয়েছিল ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ১শ ০৪কেজি চা। চলতি বছর উৎপাদিত হয়েছে ১৯ লাখ ৩৫ হাজার ৪শ ৯৮ কেজি।
এখানে উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালে ভ্যালীতে সর্ব্বোচ্চ ১ কোটি ২৯ লাখ কেজি তৈরী চা উৎপাদিত হয়েছিল।চা সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন আগামী অক্টোবর ও নভেম্বর বৃষ্টির পরিমান ভাল থাকলে এ উৎপাদন ১ কোটি ২৯ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এনিয়ে চা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। চলতি চায়ের মওসুমে আগাম বৃষ্টির কারণে মার্চের পরিবর্তে ফেব্রুয়ারী মাসেই উৎসব মুখর পরিবেশে ভ্যালীর ১৭টি চা বাগানে চা উৎপাদন শুরু হয়।চা কন্যারা ধর্মীয় নানা আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ পাতা চয়নের কাজ শুরু করেন। ফলে গত বছরের তুলনায় ভ্যালীতে উৎপাদন প্রায় ২০ শতাংশ বেশি হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখ করার মতো হচ্ছে, এবার সেপ্টেম্বর মাসে ভ্যালীর কোন বাগানেই উৎপাদনে ঘাটতি নেই।
ভ্যালীতে এবার বাগান ভিত্তিক সর্ব্বোচ্চ ৯৩ শতাংশ পর্যন্ত বেশি উৎপাদন হয়েছে। অর্থাৎ বৃদ্ধির হার শতভাগের কাছাকাছি চলে গেছে। অথচ গত বছর বেশ কয়েকটি বাগানে উৎপাদনে ঘাটতি ছিল। ভ্যালীর বৈকন্ঠপুর চা বাগান ২০১৯ সালে ৯৩ লাখ ৮শ ২৫কেজি চা উৎপাদন করেছে। যা ২০১৮ সালের চেয়ে ৭৮.৮০ শতাংশ বেশি।নালূয়া চা বাগান ভ্যালীর সর্বোচ্চ রেকর্ড সংখ্যক ১০ লাখ ৮০ হাজার কেজি চা উৎপাদন করেছে। যা ২০১৮ সালের চেয়ে ১০.১০ শতাংশ বেশি। চান্দপুর বাগান উৎপাদন করেছে ৯ লাখ ৬ হাজার ৬৭০ কেজি চা। যা ২০১৮ সালের চেয়ে ২২.৮১ শতাংশ বেশি। একই ভাবে লালচান্দ ৪৭ শতাংশ, রেমা চা বাগান ৪৫ শতাংশ, দেউন্দি চা বাগানে ৩৭.৭৭ শতাংশ, বৃন্দাবন চা বাগানে ৩৩.২৮ শতাংশ ও জগদীশপুর চা বাগানে ২০ শতাংশ চা উৎপাদন বেশি হয়েছে। ২০১৮ সালে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভ্যালীতে বৃষ্টিপাত হয়েছিল ২২৪.৭৫ সেঃ মিটার।২০১৯ সালে ভ্যালীতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০৯.২৯ সেঃ মিটার। বৃষ্টিপাত কিছুটা কম হলেও আনুপাতিক বৃষ্টির কারনে উৎপাদন বেড়েছে।
চলতি বছর রোগ বালাই কম থাকার কারণে এবং তাপমাত্রা চা গাছের সহনীয় মাত্রায় থাকায় উৎপাদন বেড়েছে দ্রুত।এবিষয়ে জানতে চাইলে দেউন্দি টি কোম্পানীর দেউন্দি চা বাগানের ডিপুটি ম্যানেজার আরমান হোসেন ফরহাদ বলেন, চলতি বছর আগাম বৃষ্টি, অনুকূল আবহাওয়া ও পরিবেশ, নতুন চা এলাকা সম্প্রসারণ, ক্লোন চা গাছের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং চা বোর্ডের নজরদারির ফলে চলতি মৌসুমে চা শিল্পের ইতিহাসে সর্বোচ্চ চা উৎপাদিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু চলতি বছর চায়ের মুল্য কমে যাওয়ায় বাগানগুলো সংকটে পড়তে পারে। কারণ দেশে চা আমদানি এবং চোরাই পথে নিন্মমানের চা আসায় চলতি বছর নিলামে চায়ের মুল্য ২শ থেকে ২শ ২০ পর্যন্ত উঠেছে। কিন্তু গত বছর তা ছিল আড়াইশ টাকার উপর।লস্করপুর ভ্যালীর চেয়ারম্যান ও চন্ডিছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, চা বোর্ড এবং বাগান ব্যবস্থাপকদের আন্তরিক চেষ্ঠা, আগাম ও পরিমিত বৃষ্টি এবং চা শ্রমিকদের আপ্রান চেষ্টার কারণেই এবার ভ্যালীতে উৎপাদন বাড়তে যাচ্ছে। আশা করি এবার রেকর্ড উৎপাদনে যাবে লস্করপুর ভ্যালী।লস্করপুর ভ্যালীর ১৭টি চা বাগানের ফাড়িঁসহ ২৪টি বাগানের উৎপাদনের এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দেশের চা শিল্পের ইতিহাসে চলতি বছর ভ্যালীতে উৎপাদনের রেকর্ড সৃষ্টি হবে এবং চা শিল্পের বিপর্যয়রোধ হবে। পাশাপাশি দেশের চাহিদা মিটিয়ে আবার চা রপ্তানী করা সম্ভব হবে বলে চা সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।