রাজীবের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি

0
443
রাজীবের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি
তারেকুজ্জামান রাজীব

খবর৭১ঃ রাতভর অভিযান শেষে র‍্যাব- ১ এর প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি)৩৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবকে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বন্ধুর বাসা থেকে গ্রেফতারকৃত রাজীবকে প্রথমে তার নিজ বাসভবন এবং পরবর্তীতে দাপ্তরিক কার্যালয়ে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব।

শনিবার দিবাগত রাত থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় রাজীবের ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয়ে সাদেকুর রহমান সাদেক নামের এক ব্যক্তিকে ৩ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। এছাড়া রাজীবের বিরুদ্ধে অস্ত্র এবং মাদক আইনে দুটি পৃথক মামলা হবে বলে জানান তিনি।

অভিযান শেষে র‍্যাবের এই ম্যাজিস্ট্রেট গণমাধ্যমকে বলেন, বেশকিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বিশেষ করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি ও ভুমি দখলের অভিযোগে রাজীবকে বেশ কিছুদিন ধরে আমরা খুঁজছি। বিষয়টি তিনি টের পেয়ে গত কয়েকদিন আগে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তাকে আজ (শনিবার) সন্ধ্যার পর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার তার এক বন্ধুর বাসা থেকে আটক করতে সমর্থ হই। আমার জানতে পারি, উনি এই মাসের ১৩ তারিখ থেকে আত্মগোপনে আছেন।

সারওয়ার আলম বলেন, আজকে যখন এই কাউন্সিলরকে আটক করতে সমর্থ হই, তখন তার কাছ থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল এবং ৩ রাউন্ড গুলি ও বিদেশি কিছু মদ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব আলামত নিয়ে আমরা মোহাম্মদপুরে তার বাসা ও অফিসে তল্লাশি করেছি। তবে আমরা তেমন কিছু পাইনি। কারণ,আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত যেসব ডকুমেন্ট ছিল, সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পরে তারই একজন সহযোগীর আত্মীয়র বাড়ি থেকে চেক বইগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলো চেক করে দেখলাম ব্রাক ব্যাংকের একটি একাউন্টে একদিনে তিনি ৫ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন। আমরা এগুলো তদন্ত করে দেখছি কোথায় জমা দিয়েছেন, টাকাগুলো কোথায় গিয়েছে।

সারওয়ার আলম জানান, রোববার ভাটারা থানায় আপাতত রাজীবের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে এবং মাদক আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হবে। পরবর্তী সময়ে অন্যান্য যেসব অভিযোগগুলো রয়েছে, সেসব মামলায় সমন দেখানো হবে। এই যে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছেন এবং এই অর্থ তিনি কোথায় খরচ করেছেন এবং যদি এখানে মানি লন্ডারিং ও মুদ্রা পাচারের কোনও বিষয় থাকে, তখন মানি লন্ডারিং মামলা দায়ের করা হবে।

কি কি অভিযোগ আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাউন্সিলর রাজীবের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ রয়েছে ভুমি দখলের বিরুদ্ধে এবং উনি কাউন্সিলর হওয়ার পরপরই ২০১৬ সালে তিনটি কোম্পানি খুলেছেন সিলিকন, এক্কা, নাইমা এন্টারপ্রাইজ।দুঃখজনক হলেও এই তিনিটি প্রতিষ্ঠানের আড়ালে আসলে জমি দখল করেছেন।কিছু কিছু যায়গায় লোকজনকে অত্যন্ত কম মূল্যে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করেছেন-এমন তথ্য আমরা পেয়েছি। সেসব অভিযোগ আমরা খতিয়ে দেখব। আর দ্বিতীয়ত হচ্ছে, এসব অপরাধ করতে গিয়ে যেসব লোকজনকে ব্যবহার করেছেন, আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমরা আশা করছি, তদন্তে এ বিষয়গুলো বেরিয়ে আসবে। আমরা যেকোনো মূল্যে এই ধরনের অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে চাই। আমার চাই না, এদেশে কোনো ধরনের ভূমিদস্যুর ঘটনা ঘটুক। যারা তার সহযোগী এবং জড়িত রয়েছেন, আত্মীয় বা অনাত্মীয় প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমার তো আসলে তার বৈধ আয়ের কোনও কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।

র‍্যাবের এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, রাজীবের একটি রাজকীয় বাড়ি রয়েছে। এই বাড়িটির বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকার মতো। বাড়ির প্রত্যেকটা আসবাবপত্র থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা জিনিস তিনি বাহির থেকে আমদানি করে নিয়ে এসেছেন। এটা তার জ্ঞাত আয়ের বর্হির্ভূত বলে আমাদের মনে হয়েছে। তার কিন্তু আসলে কাউন্সিলর হওয়ার আগ পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ধরনের ব্যবসা বা পেশা ছিল না। সিটি করপোরেশন থেকে যে সম্মানী পায়, সেটা তার প্রধান আয় । এছাড়া বাকিসব অবৈধ লেনদেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here