খবর৭১ঃ দেশে কর্মে নিয়োজিতদের বড়ো অংশ যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাচ্ছে না। তাদের বেশির ভাগ খণ্ডকালীন কাজে এবং কম বেতনে কাজ করে যাচ্ছে। দেশে আন্ডারএমপ্লয়মেন্ট বা অর্ধবেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৩৯ লাখ ২১ হাজারে। তাদের মধ্যে ১ কোটি ১৫ লাখ ৬৯ হাজার পুরুষ এবং সাড়ে ২৩ লাখ নারী। দেশে অর্ধবেকারদের ৭০ ভাগেরই বয়স ৩০ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে। ‘স্টাডি অন এমপ্লয়মেন্ট প্রডাক্টিভিটি অ্যান্ড সেক্টরাল ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এই প্রতিবেদনটি সম্প্রতি প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে জিইডি সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, এটি একটি গবেষণামূলক প্রতিবেদন। নমুনা জরিপের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে। দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান নিয়ে জাতীয় পরিকল্পনা তৈরিতে এ তথ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে আগামী ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এর প্রতিফলন থাকবে।এতে দেশের অর্ধবেকারদের তিন ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যারা কর্মসংস্থানে থাকার পরেও বাড়তি আয়ের চেষ্টা করছেন, যারা নতুন কাজ খুঁজছেন অথবা আয় বাড়াতে বাড়তি শ্রম দিতে চেয়েও পারছেনা না। এ ধরনের শ্রমশক্তিকে আন্ডারএমপ্লয়মেন্ট বা অর্ধবেকার বলা হচ্ছে। তাদের সংখ্যা গ্রামের তুলনায় শহরে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
বাংলাদেশে মোট ১৬ কোটি ৬৩ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ১১ কোটি ১৫ লাখ মানুষ কর্মক্ষম, যাদের বয়স ১৫ বছরের ওপরে। এদের মধ্যে শ্রমবাজারে রয়েছে ৬ কোটি ৩৯ লাখ মানুষ। আর কর্মে নিয়োজিত রয়েছে ৬ কোটি ১৯ লাখ। অর্থাত্ বেকার রয়েছেন ৩ দশমিক ১ শতাংশ বা ২০ লাখ শ্রমশক্তি। ২০১৭ সালের তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপে বলা হয়েছে, দেশে বেকার রয়েছে ৪ দশমিক ২ শতাংশ বা ২৬ লাখ ৮০ হাজার। অন্যদিকে ২০১৮ সালের তথ্যের ভিত্তিতে জিইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বেকারের সংখ্যা ২০ লাখ। অর্থাত্ দৃশ্যত বেকারত্বের হার কমে এসেছে। কিন্তু বড়ো অংশ তাদের কর্মসংস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। আন্ডারএমপ্লয়মেন্ট বা অর্ধবেকার সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে সেবা খাতে ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত বাংলাদেশের উন্নয়ন হালনাগাদ প্রতিবেদনেও মানসম্পন্ন শিক্ষা ও শোভন কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, শিক্ষার সঙ্গে কর্মসংস্থানের অনেক ফারাক রয়েছে। দেশে একদিকে যেমন যোগ্যরা চাকরি পাচ্ছে না অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানগুলো যোগ্য লোক খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থা কাটাতে হলে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের পাশাপাশি কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষাব্যবস্থা সাজাতে হবে। শোভন কর্মসংস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থানের চাহিদা বাড়বে, এটা একটা দিক। আবার শোভন কর্মসংস্থান অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। কর্মপরিবেশ, ভালো বেতন, নিরাপত্তা, চাকরির নিশ্চয়তা, নিয়োগপত্র প্রদান, চাকরিচ্যুতির পর পাওনা আদায়, আইনি সুরক্ষা ইত্যাদি বিষয় এর সঙ্গে জড়িত। কিন্তু দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানে অনেকক্ষেত্রে নিয়োগপত্রই দেওয়া হয় না। আবার নিয়োগপত্র দেওয়া হলেও চুক্তি মানা হয় না। এজন্য অনিশ্চয়তা থাকায় অনেকে অন্য চাকরি খুঁজতে থাকেন। শোভন কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে এ বিষয়গুলোও নিশ্চিত করতে হবে।
জিইডির প্রতিবেদনে অর্ধবেকারদের নানা চিত্র উঠে এসেছে। ১ কোটি ৩৯ লাখ আন্ডারএমপ্লয়মেন্টের মধ্যে খণ্ডকালীন কর্মসংস্থানে রয়েছে ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ। বর্তমান চাকরি হারানোর ফলে বাধ্য হয়ে নিম্নমানের কাজ করে যাচ্ছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ ব্যক্তি, বেশি বেতনের আশায় নতুন চাকরি খুঁজছে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ, আরো বেশি সময় কাজ করতে চায় ৯ শতাংশ শ্রমশক্তি, উচ্চ পদে চাকরি প্রত্যাশা করছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ, আরো ভালো মানের কিছু করার চেষ্টা করছে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ, ভালো কর্মপরিবেশ প্রত্যাশা করছে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ, নিজের দক্ষতা ও শিক্ষা দিয়ে উন্নত কাজের চেষ্টা করছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ শ্রমশক্তি। অর্থাত্ এই শ্রমশক্তি তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাচ্ছে না