খবর৭১ঃ দ্রুত ত্রুটিপূর্ণ তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর সংস্কার কার্যক্রম শেষ করতে তাগাদা দিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। গতকাল বুধবার ও বৃহস্পতিবার অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত জাতীয় উদ্যোগের আওতাধীন ৩২৩টি পোশাক কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় দ্রুত সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দুদিন অনুষ্ঠিত সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং বিজিএমইএ-এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন কারখানাকে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করার জন্য কয়েক সপ্তাহের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংস্কার কাজ সম্পন্ন না করলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ও বিজিএমই-এর পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার ব্যাপারে মালিকপক্ষকে সতর্ক করা হয়।
বুধবার অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সচিব কেএম আলী আজম বলেন, সরকার কখনোই কোনো কারখানা বন্ধ করতে চায়না। যত বেশি কারখানা ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবে তত বেশি দেশের ও সরকারের লাভ। কিন্তু কারখানাগুলো অবশ্যই পরিবেশ বান্ধব হতে হবে। কারখানায় শ্রমিকের সেইফটি, স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয়ে যত প্রকার সহযোগিতা প্রদান করা দরকার আমরা সেটা দিতে প্রস্তুত। তবে কারখানার সেইফটির ক্ষেত্রে আমরা কোন প্রকার বিচ্যুতি সহ্য করবো না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারখানার ত্রুটিগুলো সংস্কার না করলে কারখানায় সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে কঠোর হওয়া ছাড়া আমাদের উপায় থাকবে না।
পোশাক কারখানার সংস্কারে সরকারের তাগাদা
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায় বলেন, সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার জন্য ত্রুটিপূর্ণ কারখানার মালিকপক্ষকে বারবার চিঠি প্রদান করা সত্ত্বেও কারখানা সংস্কার কাজ সম্পন্ন করছেন না। এখন আপনাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার আগে আমরা মনে করেছি আপনাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা দরকার। জানা দরকার আমাদের পক্ষ থেকে কোন দুর্বলতা আছে কিনা, অথবা আপনারা কোন সমস্যায় আছেন কিনা, সমস্যা থাকলে কিভাবে সমাধান করা যায়? নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম শতভাগ নিশ্চিত না হলে কারখানাকে লাইসেন্স প্রদান করা সম্ভব হবে না।
অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ-এর সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, ত্রুটিপূর্ণ কারখানাগুলোকে আমরা তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছি। আগামী ১২, ১৫ ও ১৯ অক্টোবর কারখানাগুলোর মালিকপক্ষের শুনানি গ্রহণ করবো। শুনানির পর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে সুপারিশ প্রেরণ করা হবে। পরে সরকার এ বিষয়ক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
ডাইফ-বিজিএমইএ-এর সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব কারখানার ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) ২০ এর উপরে (ফাস্ট ট্রাক) সেসব কারখানার সংস্কার কাজ সম্পন্ন করার জন্য ২ থেকে ৪ মাস এবং যেসব কারখানার ইউডি ২০ এ নিচে এবং ১০ এর উপরে তাদেরকে সংস্কারের জন্য ছয় মাস সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব রাখা হয়েছে। যাদের বার্ষিক ইউডি ১০ এর নিচে তাদের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে কারখানা ভিত্তিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের ইউডি বন্ধ করে দেওয়া হবে। অপরদিকে বিকেএমইএ-ভুক্ত কারখানাগুলোর সঙ্গে ডাইফ পুনরায় আলোচনার মাধ্যমে সংস্কার কাজ ত্বরান্বিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি কায়েস জামান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. জয়নাল আবেদীন, আরসিসির প্রকল্প পরিচালক একেএম সালেহউদ্দিন, যুগ্ম মহাপরিদর্শক (সেইফটি) ফরিদ আহম্মেদ, উপমহাপরিদর্শক (ঢাকা) আহমেদ বেলাল, সহকারী মহাপরিদর্শক (সেইফটি) আব্দুল মুমিন, বিজিএমইএ-এর পরিচালক রেজওয়ান সেলিম, উপদেষ্টা মো. লিয়াকত হোসেন ও অন্য পদস্থ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ৯ অক্টোবর ঢাকা, নরসিংদী, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের ১৪৭ টি কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে এবং ১০ অক্টোবর গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের ১৭৬টি কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়।