খবর৭১ঃ সিঙ্গাপুর সিটিতে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘গত এক দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। শক্তিশালী নেতৃত্ব, সুশাসন, সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনা, স্থিতিশীল সরকার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মজবুত করে তুলেছে। বাংলাদেশকে উন্নয়নের মডেল বানিয়েছে।’
বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের রাজধানী সিঙ্গাপুর সিটিতে অনুষ্ঠিত ‘ডুইং বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মশালায় এসব কথা বলেন মন্ত্রী। আন্তর্জাতিক ফিন্যান্স কর্পোরেশন, এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার এশিয়া এ কর্মশালার আয়োজন করে।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। বাংলাদেশ বৈদেশিক সহায়তা গ্রহণকারী দেশ থেকে এখন বিনিয়োগের অনুকূল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেড়ে এখন জিডিপির ৩১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বেসরকারী বিনিয়োগ আগের দশকের তুলনায় পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৭০ দশিমক শূন্য ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, পিপিপির ভিত্তিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ত্রিশতম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এবং উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি অর্জন করছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক আউটলুক ২০১৯ উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। এইচএসবিসি তাদের ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে ২৬ তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এবং বিশ্বের তিনটি দ্রুততম অর্থনীতির একটি হয়ে উঠবে বাংলাদেশ।’
মন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় মধ্যে বাংলাদেশেই সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ নীতি রয়েছে। এখানে বিদেশী বিনিয়োগ সুরক্ষার জন্য আইনী ব্যবস্থা রয়েছে, উদার কর অবকাশ নীতি রয়েছে, যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে, বিদেশীদের বিনিয়োগের পর লভ্যাংশ এবং মূলধনের সম্পূর্ণ নিয়ে যাওয়ার সুবিধা রয়েছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ জাতীয় সংসদে পাসকৃত আইন এবং দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি দ্বারা সুরক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সার্ভিস আইন বিনিয়োগকারীগণ ব্যবসা শুরু করার আগে যে সব সমস্যার সম্মুখীন হন তা দূর করতে সহায়তা করছে। এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যকে সহজ করতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এছাড়া বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সরকার ২০১০ সালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইনও কার্যকর করেছে।’
আনিসুল হক বলেন, গত দশ বছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ৭ শতাংশ। যা গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশে পৌঁছেছিল। চলতি অর্থবছরে এটি ৮ দশমিক ২ শতাংশ হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়ে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে; মাথাপিছু আয় বেড়ে ১৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, রফতানি আয় তিনগুণেরও বেশি হয়ে ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। মানব উন্নয়ন সূচক বার্ষিক ১ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্পেকটেটর সূচক ২০১৯ অনুসারে, বাংলাদেশ গত ১০ বছরে সর্বাধিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০১৮ সালে ৩০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি জানান, বিশ্বে বাংলাদেশ এখন সবজি উৎপাদনে তৃতীয়। চাল উৎপাদনে চতুর্থ। অভ্যন্তরীণ মৎস্য উৎপাদনে পঞ্চম এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রফতানিকারী দেশ। অন্য সমৃদ্ধ খাত হলো ফার্মাসিউটিক্যালস, সিরামিকস, শিপ বিল্ডিং, চামড়া এবং আইসিটি।
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসাবে গড়ে তোলার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইতিমধ্যে তার সরকার “ভিশন ২০২১” অর্জনের কাছাকাছি। তার সরকারের মূল লক্ষ্য “ভিশন ২০৪১” বাস্তবায়ন করে উন্নত দেশে পরিণত হওয়া। এই দর্শনের উপর ভিত্তি করে, বাংলাদেশে ব্যাপক আর্থ-সামাজিক রূপান্তর শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্বপ্ন ছিলো সোনার বাংলা বিনির্মাণ করা। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর তার স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যায়। দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ দীর্ঘ দুই দশক ধরে তীব্র ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলো। একুশ বছরের সামরিক ও আধা-সামরিক শাসনের পরে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করেছিলেন এবং জাতির পিতার অসম্পূর্ণ কাজটি আবার শুরু করেছিলেন।’