খবর৭১ঃ
দোর্দন্ড প্রতাপশালী খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও টেন্ডারবাজ জি কে শামীমের অস্ত্রের ভাণ্ডারের সন্ধান পেয়েছে জিজ্ঞাসাবাদকারী পুলিশ কর্মকর্তারা। অস্ত্র ও মাদক মামলায় তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এই দু’জন তাদের অস্ত্রের ভাণ্ডারের তথ্য দিয়েছেন।
অস্ত্রগুলো কারা বহন করতেন- সে ব্যাপারে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডারদের নামের তালিকা দিয়েছেন। খালেদের আপন দুই ভাই মাকসুদ ও হাসান ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রন করতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য জানতে পেরেছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা। খালেদের ‘ভুঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া’ নামে কোম্পানী দিয়ে টেন্ডারবাজি করা হতো।
জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তাদের একটি সূত্র জানায়, শামীম ও খালেদের অস্ত্র বিভিন্ন ক্যাডারদের হাতে বহন হয়। খালেদের অস্ত্র তালিকায় রয়েছে চারটি একে-২২ রাইফেল। এর আগে ডিবির হাতে দুইটি একে-২২ রাইফেল ধরা পড়ে। এই চারটি একে-২২ রাইফেল পার্বত্য এলাকা থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এগুলো বড় ধরনের অপারেশনের জন্য খালেদ সংগ্রহ করেছেন। তবে অস্ত্রের যারা বাহক, তাদের বেশ কয়েকজন পূর্বে ছাত্রদল বা যুবদলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। খালেদের হাত ধরে তারা দল পরিবর্তন করে ছাত্রলীগ বা যুবলীগের থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিভিন্ন পদ দখল করেন। তার ক্যাডার বাহিনীর হাতে নাইন এমএম ক্যালিবারের পিস্তল রয়েছে অর্ধশতাধিক। এসব পিস্তল ক্যাডারদের মধ্যে হাত বদল হয়।
মাঝে মধ্যে গণপূর্ত, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, রেল ভবন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ওয়াসার ফকিরাপুল জোনসহ বেশিরভাগ সংস্থার টেন্ডারবাজি করার সময় প্রতিপক্ষ বা সরকারি কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখাতে তার ক্যাডার বাহিনী পিস্তল বহন করতেন। জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ যাদের নাম বলেছেন তারা হলেন, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের নেতা ইসমত জামিল অংকুর ওরফে লাবলু, রামপুরার আলোচিত ট্রিপল মার্ডার মামলার আসামী রইছ, খিলগাঁওয়ের শাহাদত হোসেন সাধু, ১১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা কবির, শাজাহানপুরের পোল্ট্রি রিপন, ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা সেলিম, ১১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের শীর্ষ নেতা রিডি, রামপুরার রনি, মগবাজারের সজীব, শাজাহানপুর থানা ছাত্রলীগের নেতা আমিনুল ইসলাম রাজু, ১১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরমান বাবু, খিলগাঁও থানা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা কাজী, পল্টন থানা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা মাহবুবল হক হীরক, মতিজিল এজিবি কলোনীর আমিনুল, শাজাহানপুরের উজ্জ্বল, রুবেল ওরফে মোটা রুবেল, রামপুরা-মগবাজারের মাসুদ, তুহিন, ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক খায়রুল, ১২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা মাজহারুল ইসলাম তুহিনসহ অর্ধশত ক্যাডার।
অপরদিকে, জি কে শামীমের কাছে ৮ টি শটগান রয়েছে। এসব শটগান টেন্ডারবাজিতে ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার করা হতো। শটগান মাঝে মধ্যে খালেদের ক্যাডারদেরও ব্যবহার করতে দেয়া হয়। এজন্য খালেদকে টেন্ডারের ১০ ভাগ কমিশন মানি দেয়া হতো।
জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তারা আরো জানান, খালেদের ক্যাডার বাহিনীর হাতে একে-২২ রাইফেলসহ শতাধিক অস্ত্রের ভান্ডারে আনুমানিক বিভিন্ন ক্যালিবারের ৫ হাজার রাউন্ড গুলি রয়েছে। এসব অস্ত্র ও গুলি নির্দেশনা অনুযায়ি নির্দিষ্ট ক্যাডারের কাছে চলে যায়। তবে এসব আগ্নেয়াস্ত্র টেন্ডারবাজি ও ক্যাসিনোর চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রন ছাড়াও জমি দখল, প্রতিপক্ষের পাওনা টাকা উদ্ধার করার জন্যও ব্যবহার করা হয়।