প্রশাসনেও ভর করেছে আতঙ্ক

0
585
প্রশাসনেও ভর করেছে আতঙ্ক

খবর৭১ঃ দুর্নীতি ও মাদকবিরোধী চলমান অভিযানের ঢেউ প্রশাসনেও লেগেছে। ধরা পড়ার আতঙ্কে আছেন প্রবলভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তারা। বিশেষ করে যেসব প্রভাবশালী কর্মকর্তা এতদিন ধরাকে সরাজ্ঞান করে দোর্দণ্ড প্রতাপে ক্ষমতার অপব্যবহারের ছড়ি ঘুরিয়েছেন, নিজেকে সরকারি দলপন্থী কর্মকর্তা জাহির করে দু’হাতে হাতিয়ে নিয়েছেন ঘুষ-কমিশনের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা, হাত নোংরা করেছেন পর্দার আড়ালে।

দশ বছরের ব্যবধানে যাদের জীবনযাপনের চিত্র অস্বাভাবিক মাত্রায় পাল্টে গেছে। দেশের অভ্যন্তরে বিলাসী জীবনের স্বাদ ভোগ করা ছাড়াও নানাভাবে বিদেশে বিপুল অঙ্কের অর্থ নিয়ে গেছেন, তাদের কপালে দুশ্চিন্তার বলিরেখা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে।

ইতিমধ্যে তারাও পেয়ে গেছেন মহাবিপদ সংকেত। সাধারণ জনগণের কাছে দারুণভাবে প্রশংসিত চলমান হাই ভোল্টেজের এ অভিযান শুধু অসৎ রাজনীতিবিদদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, এর শক্ত হাত শিগগির প্রশাসনকেও স্পর্শ করবে। প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ পেলে কেউ ছাড় পাবে না।

দু’দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে রোববার প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয় এমন আলোচনায় ছিল সরগরম। অধিকাংশ কর্মকর্তার দফতরে চলমান এ অভিযানের চুলচেরা বিশ্লেষণ চলে দিনভর। তবে এ বিষয়ে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিক্রিয়া ছিল খুবই উচ্ছ্বসিত। দেশ ও জনগণের স্বার্থে এ ধরনের সাহসী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন। ধন্যবাদ জানিয়েছেন অভিযান সংশ্লিষ্টদের, যারা রাত-দিন পরিশ্রম করে দেশপ্রেমের কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

তারা মনে করেন, নানা কারণে প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের কোনো স্থায়ী রং নেই। সুবিধামতো তারা রংবদল করে। মূলত এদের কারণে রাজনৈতিক দল ও সরকারের বদনাম হয়। তাই যারা নামে-বেনামে আয়বহির্ভূতভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। কেননা আমলাদের সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া কোনো পর্যায়ে অনিয়ম-দুর্নীতি হওয়ার সুযোগ নেই।

কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আলোচিত ক্যাসিনো অভিযানের মধ্য দিয়ে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক পদধারী যেসব বিগশট ঠিকাদার গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের কাছ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যরা অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন। যেখানে ঠিকাদারি কাজ পাওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের ঘুষ লেনদেনের তালিকায় প্রশাসনের অনেক ক্ষমতাধর আমলার নাম-পরিচয় বেরিয়ে আসছে। বড় বড় কাজে ঘুষ কমিশন লেনদেন নেটওয়ার্কের পুরো চিত্র এখন জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তাদের হাতে। এ বিষয়ে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হলেও সেখানে বিস্মিত হওয়ার মতো অনেক খবরও আছে। নানা সূত্রে এমন তথ্য পেয়ে সন্দেহভাজনদের অনেকে দেশত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু এক পা বাড়িয়ে দু’পা পিছিয়ে আসছেন। যদি বিমানবন্দরে আটকে দেয়া হয়- এমন চিন্তায় সাহস পাচ্ছেন না।

এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন এবং অভিযান সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দেশকে সত্যিকারার্থে দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একেবারে অটল। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় না দিতে জিরো টলারেন্সের নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ জন্য এ বিষয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে অভিযান শুরু হয়েছে। এ অভিযান থেকে সমাজের কোনো প্রভাবশালীই বাদ পড়বেন না- তিনি সমাজের যত প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিই হোন না কেন। শুধু বড় বড় প্রকল্প নয়, মন্ত্রণালয় ও বিভাগের যে কোনো কেনাকাটার হিসাব-নিকাশ খতিয়ে দেখা হবে। কোন জিনিসের বাস্তবে কী দাম এবং সেটি কত দিয়ে কেনা হয়েছে- অনুসন্ধানের প্রধান কাজ হবে এটি।

দ্বিতীয়ত, বছরের পর বছর কারা কীভাবে সরকারি কেনাকাটা করে আসছেন, কেন অব্যাহতভাবে এক ব্যক্তিই ঠিকাদারি কাজ পেয়ে আসছেন, দরপত্র প্রক্রিয়া, প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ, দরপত্রের শর্ত এবং বাস্তব কাজ কীভাবে হয়েছে- সবকিছুই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা হবে। কেনাকাটা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আয়কর নথি ও বাস্তব জীবনযাপনের চিত্র এবং কারা কীভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন- সবকিছু অনুসন্ধানের আওতায় আসবে। বিদেশে কারা সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের লেখাপড়া করানোসহ তাদেরকে কীভাবে সেটেল কিংবা প্রতিষ্ঠিত করেছেন- সব খবরই নেয়া হচ্ছে। অনেকের বিষয়ে বহু আগে থেকে তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষিত আছে।

এ ছাড়া উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে বিভিন্ন বরাদ্দ কীভাবে দেয়া হয়েছে, কারা পেয়েছেন, বিশেষ করে, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সহায়-সম্পত্তির খোঁজখবর নেয়া শুরু হয়েছে। যেসব কর্মকর্তা আগে থেকে সন্দেহের তালিকায় ছিলেন, তারা আছেন তদন্ত অনুসন্ধানের প্রথম ধাপে। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে যাদের তদন্ত সম্পন্ন করে ফাইনাল রিপোর্ট প্রদান কিংবা নথিজাত করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সমাজে যাদের বিষয়ে খারাপ পারসেপশন রয়েছে, তাদের জন্য দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে। প্রয়োজনে এমন ব্যক্তিদের নথি পুনরায় অনুসন্ধানের আওতায় আনা হবে।

অপরদিকে যেসব সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা চাকরিজীবন শেষে বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি কিংবা শিল্পগ্রুপে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত আছেন, তাদের মধ্যে সন্দেহভাজনদের প্রোফাইল পর্যালোচনা করা হবে। বিশেষ করে তিনি এখন যেখানে কর্মরত আছেন, চাকরিজীবনে ওই প্রতিষ্ঠানকে কোনো বিশেষ সুবিধা দিয়েছেন কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।

তবে সূত্রগুলো বলছে, এ অভিযান নিয়ে প্রশাসনে কর্মরতদের ঢালাওভাবে আতঙ্কিত কিংবা উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। প্রশাসন তার নিজস্ব গতিতে আরও গতিশীলতার সঙ্গে এগিয়ে যাবে। কিন্তু যারা দুর্নীতি করেছেন কিংবা দুর্নীতিতে সহায়তা দিয়েছেন, তাদের জন্য কোনো সুখবর নেই। অর্থাৎ যাদের বিষয়ে অকাট্য তথ্য-প্রমাণ মিলবে, তাদের কাউকে ছাড়া হবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here