বিদেশিরা নেতাদের নিয়ন্ত্রণে ক্যাসিনো চালায়ঃ গোয়েন্দা তথ্য

0
466
বিদেশিরা নেতাদের নিয়ন্ত্রণে ক্যাসিনো চালায়ঃ গোয়েন্দা তথ্য

খবর৭১ঃ
ঢাকায় ক্যাসিনো ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কয়েক নেতার হাতে থাকলেও এর বড় অংশীদার (মালিকানা) বিদেশিরা। অবৈধ এ ব্যবসার ৪০-৬০ শতাংশের মালিক বিদেশিরা।

বাকি ৪০ ভাগ নেতাদের হাতে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ক্যাসিনো সামগ্রী তারাই দেশে নিয়ে আসে। ক্যাসিনো ব্যবসা শুরু হয় বিদেশিদের হাত ধরেই। জুয়ার সিংহভাগ টাকাই তারা অবৈধ চ্যানেলে বিদেশে পাচার করছে।

এগুলো পরিচালনা করছে অন্তত অর্ধশত নেপালি। তাদের সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন ক্যাসিনোতে কাজ করছে আরও শতাধিক বিদেশি। এরই মধ্যে ১৪ বিদেশির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে।

তারা ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসে ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনা করছে। পাশাপাশি তারা অবৈধ চ্যানেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এসব বিদেশি নাগরিকের বিষয়ে খোঁজখবর শুরু করেছেন গোয়েন্দারা।

এদিকে বুধবার অস্ত্র ও মাদক মামলায় গ্রেফতারের পর যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদকে জিজ্ঞাসাবাদে ক্যাসিনো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে আসছে।

গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, ক্যাসিনোর মূল নিয়ন্ত্রক যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোল্লা আবু কাউছারসহ কয়েক নেতা।

পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে ক্যাসিনোর ভাগের টাকা পৌঁছে দেয়া হতো বলেও তিনি জানান। অপরদিকে টেন্ডার, চাঁদা ও অস্ত্রবাজি এবং অর্থ পাচারের অভিযোগে শুক্রবার যুবলীগ নেতা জি কে শামীমকে অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব।

জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে ২০-২৫ জন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আছেন। যারা টেন্ডার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দাদের একটি দল।

জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ আরও জানান, বিদেশিদের সহায়তায় ক্যাসিনো ব্যবসার যন্ত্র চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয়।

এদিকে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শতাধিক বিদেশির মাধ্যমে ঢাকার ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনোর প্রসার ঘটে। তারা ক্যাসিনো পরিচালনায় অভিজ্ঞ। ক্যাসিনোর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে যাচ্ছে।

তাদের মধ্যে ১৪ বিদেশির বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। তারা হল- দীনেশ শর্মা, রাজকুমার, অজয় পারমাল, প্রদীপ কুমার, হিলমি, ছোট রাজকুমার, কৃষ্ণা, বিনোদ মানালি, বল্লভ, বিজয়, বাবা, সুরেশ কাটেল, হেমন্ত ও দীনেশ কুমার।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ক্যাসিনো ব্যবসার মূল নিয়ন্ত্রক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট।

এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাউছার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একেএম মমিনুল হক সাঈদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোবাশ্বের, যুবলীগ নেতা আরমান, তছলিম, জসিম উদ্দিন, এটিএম গোলাম কিবরিয়া ক্যাসিনো ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। ওই ১৪ বিদেশি তাদের ক্যাসিনো ব্যবসার অংশীদার এবং মূল পরিচালক।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম যুগান্তরকে বলেন, ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অনেক বিদেশির বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের খুঁজে বের করতে এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।

বিদেশিরা পরিচালনা করত যেসব ক্লাব : গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালে ভিক্টোরিয়া ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসা শুরু হয় যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের হাত ধরে। তিন নেপালি নাগরিকের মাধ্যমে ভিক্টোরিয়া ক্লাবে এ ব্যবসা শুরু হয়।

এরপর মতিঝিলের ক্লাবপাড়া এবং আশপাশে ক্যাসিনো ব্যবসা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এ ব্যবসার প্রসার ঘটলে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কয়েক নেতার হাতে পুরো ক্যাসিনো ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ চলে যায়।

এসব নেতার অনেকেই আগে যুবদল, ফ্রিডম পার্টির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। সরকার বদলের পর এরা রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন করে ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় আশ্রয় নেন।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়-ভিক্টোরিয়া ক্লাব, কলাবাগান ক্লাব, মৌচাকের সৈনিক ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, ইয়ংমেনস ক্লাব, ঢাকা গোল্ডেন ক্লাব, এজাক্স ক্লাব, দিলকুশা ক্লাব, আরামবাগ ক্লাব, মোহামেডান ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব এবং উত্তরার একটি ক্লাবের ক্যাসিনোর ব্যবসার মূল অংশীদার ছিল বিদেশিরা। সেখানে আরও অন্তত অর্ধশত বিদেশি কর্মরত ছিল।

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন শামীম : গোয়েন্দা সূত্র জানায়, টেন্ডার, চাঁদা ও অস্ত্রবাজি এবং অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার যুবলীগ নেতা জি কে শামীম অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন।

এ ধরনের অন্তত ২৫ কর্মকর্তাকে তিনি তার প্রতিষ্ঠানে অলিখিতভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। এ কর্মকর্তারা বিভিন্ন সরকারি দফতরে তার হয়ে লবিং করতেন। এমনকি তার প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে বিভিন্ন দফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঘুষ দেয়ার ব্যবস্থাও করতেন তারা।

এ কাজের জন্য সাবেক সরকারি কর্মকর্তারা এক থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন পেতেন।

জি কে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, গণপূর্ত বিভাগের কোনো টেন্ডার শামীম সিন্ডিকেটের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেখানে শামীমের একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে। টেন্ডারবাজির সঙ্গে যুক্ত আছেন এ বিভাগের ২০ জনের বেশি সাবেক কর্মকর্তা।

তার হয়ে তারা সেখানে লবিং করতেন। প্রয়োজনে ঘুষও দিতেন। শামীম জিজ্ঞাসাবাদে সরকারি বিভিন্ন দফতরের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে কীভাবে, কত শতাংশ হারে ঘুষ দিতেন-এ বিষয়েও বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।

জিজ্ঞাসাবাদে অনেক সরকারি কর্মকর্তার নামও বলেছেন, যাদের বিভিন্ন সময়ে তিনি মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here