খবর৭১ঃ
গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ভিসি ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের নির্দেশে বহিরাগতরা এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শনিবার সকাল ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে গোবরা, সোনাকুড় ও নবীনবাগ এলাকায় এসব হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় এক ছাত্রীসহ বিশ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহত অন্তত দশ শিক্ষার্থীকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের আখি, কৃষি বিভাগের ২য় বর্ষের মাসুকুর রহমান, ৩য় বর্ষের শীমান্ত, অর্থনীতি চতুর্থ বর্ষের নাফিস, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২য় বর্ষের ফাহাদ, রসায়ন বিভাগের ৩য় বর্ষের মো. রাকিব হোসেন, আশিকুর রহমান, ফিসারিজ বিভাগের ২য় বর্ষের সৈকত, লোক প্রশাসন বিভাগের ২য় বর্ষের রুদ্র, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের মাসুদ, শাহরিয়ার মিজান ও আল-আমিনের নাম জানা গেছে।
এদিকে হামলার খবর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়লে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসাশনিক ভবনের সামনে, জয় বাংলা চত্বর, মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ ঘটনায় বিভিন্ন স্থানে র্যাব ও পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।
এর আগে সকালে ভিসি অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে শনিবার সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে ভিসির পদত্যাগের আগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশ প্রশাসনিক ভবনের সামনে ও আরেক অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে অবস্থান নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. নূরউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উদ্ভূত জরুরি পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে, বিবদমান গ্রুপসমূহের মতানৈক্য নিরসন এবং সম্ভাব্য অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়াতে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যদের মৌখিক অনুমতির প্রেক্ষিতে পূজার নির্ধারিত ছুটির সঙ্গে ছুটি বাড়িয়ে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে বিদ্যুৎ, পানি ও খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ভিসির স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে নির্যাতিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি টর্চার সেলে পরিণত করা হয়েছে। হলে বিদ্যুৎ, পানি ও খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে যত অত্যাচারই করা হোক ভিসির পদত্যাগ পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
তার আগে গত বুধবার রাত থেকে আন্দোলন শুরুর পর বৃহস্পতিবার রাতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা অনশন কর্মসূচি শুরু করে। অনশনরত শিক্ষার্থীরা ভিসির কুশপুত্তলিকা তৈরি করে তা প্রদর্শন করে এবং বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে অনশন চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১৪টি বিষয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আন্দোলন বন্ধ করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের এক দফা এক দাবি ‘ভিসির পদত্যাগ’।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং দ্যা ডেইলি সানের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে গত ১১ সেপ্টেম্বর সাময়িক বহিষ্কার করে প্রশাসন। পরে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের আন্দোলনের মুখে বাধ্য হয়ে বুধবার তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। ওই দিনই সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিএনপি-জামায়াতপন্থি, অযথা বহিষ্কার ও দুর্নীতিসহ ২০টি বিষয় উল্লেখ করে ভিসির পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন।