খবর৭১ঃ সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অডিট আপত্তিসমূহ কমিটির নির্দেশনার আলোকে দ্রুত নিষ্পত্তির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে কমিটির সভাপতি মো. রুস্তম আলী ফরাজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ পরামর্শ দেওয়া হয়।
ওই সভায় অংশ নেন, কমিটির সদস্য ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, আবুল কালাম আজাদ, মো. আব্দুস শহীদ, র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সালমান ফজলুর রহমান, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মনজুর হোসেন, আহসানুল ইসলাম (টিটু), বেগম ওয়াসিকা আয়েশা খান এবং মো. জাহিদুর রহমান।
সভায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ২০১২-১৩ অর্থ বছরের হিসাব সম্পর্কিত মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বার্ষিক অডিট রিপোর্ট ২০১৩-১৪ এর অডিট আপত্তির বিভিন্ন অনুচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সভায় বলা হয়, গ্রাহকের ব্যবসায়িক লেনদেন সন্তোষজনক না হওয়া সত্ত্বেও সীমাতিরিক্ত দায় রেখে সিসি (হাইপে) ঋণ নবায়ন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকের অনুকূলে বিতরণকৃত সিসি (হাইপো) ঋণের সীমাতিরিক্ত দায় স্থিতি রেখে এলটিআর ঋণ সৃষ্টি করায় মেয়াদোত্তীর্ণ ও ক্ষতি হিসেবে শ্রেনীবিন্যাসিত হওয়ায় ব্যাংকের অনাদায়ী ঋণ ১৩ কোটি ৯৫ লক্ষ ৭০ হাজার ৭ শত ৬০ টাকা। এর ওপর উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি চেক ক্যাশ না হওয়াকে প্রতারণা হিসেবে আখ্যায়িত করে। দুই মাসের মধ্যে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অনধিক তিন মাসের মধ্যে অনাদায়ী টাকা আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেওয়া হয়।
সভায় বলা হয়, রড, সিমেন্ট ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে সিসি (হাইপো) ঋণ প্রদান করা হলেও বর্তমানে ব্যবসা বন্ধ এবং প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব না থাকায় অনাদায়ে ঋণটি কু-ঋণে পরিণত হওয়ায় ৯২ লাখ ২৬ হাজার ৫২৭ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এর ওপর উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি চলমান মামলা নিবিড় তদারকির মাধ্যমে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে জামানতকৃত সম্পদ বিক্রয় করে অনাদায়ী টাকা আদায়পূর্বক প্রামণিক জমা দিয়ে অডিটের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে আপত্তি নিষ্পত্তি করার সুপারিশ করা হয়।
সভায় বলা হয়, ঋণ প্রদানের প্রাক্কালে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণ গ্রহীতা ও প্রকল্প নির্বাচনে অদূরদর্শিতার কারণে গ্রাহকের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন এবং ঋণটি দীর্ঘদিন যাবত অনাদায়ী থাকায় শ্রেনীকৃত ঋণে পরিণত হয়ে ৪ কোটি ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৫৭ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এর ওপর উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি আদায়কৃত টাকার প্রমাণিক জমাদান সাপেক্ষে আপত্তিটি নিষ্পত্তির সুপারিশ করে।
সভায় বলা হয়, একই মালিকানাধীন একাধিক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রদত্ত ঋণ ও চলতি মূলধন ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণের পর ঋণের টাকা পরিশোধ না করা সত্ত্বেও বারবার পুনঃতফসিল সুবিধা দিয়ে ও ঋণের টাকা আদায় না হওয়ায় খেলাপি ঋণে পরিণত ৮ কোটি ৯৭ লাখ ৬ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। এর ওপর উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি আদায়কৃত টাকার প্রমাণিক জমাদান সাপেক্ষে নিষ্পত্তি এবং অনাদায়ী টাকা অনধিক ৬০ দিনের মধ্যে আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে।
সভায় বলা হয়, এলসির মাধ্যমে আমদানীকৃত ক্রুড পাম ওয়েলের জাহাজী দলিলপত্র ছাড় করানোর লক্ষে সহায়ক জামানত ব্যতীত তিনটি এলটিআর ঋণ মঞ্জুর করায় মঞ্জুরকৃত ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ, অনাদায়ী এবং মন্দ ঋণে শ্রেণীকৃত ৮৬ কোটি ৬৮ লাখ ৮৬ হাজার ৬৩ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর ওপর উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি দায়েরকৃত মামলার তদারকি জোরদার, দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে অনাদায়ী টাকা অনধিক ৬০ দিনের মধ্যে আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে।
সভায় বলা হয়, যথাযথ যাচাই বাছাই না করে এলটিআর সুবিধা প্রদান করায় মন্দ ও ক্ষতি হিসেবে শ্রেনীবিন্যসিত ঋণের অনাদায়ী ৭৫ কোটি ৭৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এর ওপর উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি দায়েরকৃত মামলার তদারকি জোরদার, দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অনাদায়ী টাকা অনধিক দুই মাসের মধ্যে জমাদানের ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে।
এছাড়াও সভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে একটি আলোচ্যসূচি নির্ধারিত রেখে প্রতি বৈঠকে আলোচনা করে সংসদ সদস্য ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সক্রিয় রাখার সুপারিশ করা হয়।
সিএন্ড এজি মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, অর্থ, মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংক, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, অডিট অফিস এবং সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।