খবর৭১ঃ রোহিঙ্গা সন্দেহে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে আটকে আছে ১৫০ জনের আবেদন। এর মধ্যে ৩৫ জনকে ইতিমধ্যেই রোহিঙ্গা হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। বাকিদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছে দুদক।
এদিকে সন্দেহজনক ৬৮ জনের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সম্পর্কে দুদকের কাছে তথ্য সরবরাহ করেছে জেলা নির্বাচন অফিস।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ঠিকানায় ভোটার হওয়া এই ৬৮ জনের মধ্যে ৬৭ জনই রোহিঙ্গা বলে নিশ্চিত হয়েছেন নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা। এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্তে নেমেছে দুদক।
নির্বাচন অফিস থেকে ২০১৪ সালে গায়েব হওয়া ল্যাপটপ থেকেই ২০১৬ সালে তৎকালীন ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে স্মার্টকার্ড (এনআইডি) পেয়েছিলেন টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত রোহিঙ্গা ডাকাত নুর আলম নুরু। এই জালিয়াতির সঙ্গে শক্তিশালী চক্র জড়িত। চক্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও আছেন।
এর মূল হোতা জয়নালকে আটকের পরই অনেক অজানা তথ্য বের হয়ে আসছে। রোহিঙ্গাদের ভোটার বানিয়ে জয়নাল এখন অঢেল সম্পদের মালিক। বাঁশখালীতে কোটি টাকা ব্যয়ে তিনি নির্মাণ করছেন বহুতল ভবন। এলাকায় জয়নালের বেশ নামডাকও আছে।
দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গারা কাদের সহায়তায় এনআইডি কিংবা পাসপোর্ট পাচ্ছে তাদের ধরতে চায় দুদক। এর সঙ্গে ইসি কার্যালয়ের কর্মকর্তা বা কর্মচারী, সিটি কর্পোরেশন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজশ থাকার বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
কথা হয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের উপ-পরিচালক আবু সাইদের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গা সন্দেহে কয়েকজনের আবেদন ফরম আটকে দেয়া হয়েছে। তাদের কথাবার্তায় সন্দেহ হওয়ায় ওইসব আবেদন আটকে দেয়া হয়। অথচ ওইসব আবেদনের সঙ্গে যুক্ত আছে নিম্ননিবন্ধনের সত্যায়িত কপি, ইউপি চেয়ারম্যানের সনদসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র। তাদের সব কাগজপত্রই দুদকে দেয়া হয়েছে।’
তিনি জানান, গত এক মাসে পাসপোর্ট অফিসে ৩ রোহিঙ্গাসহ এক দালালকে আটক করে পুলিশে দেয়া হয়েছে। তারা ভুয়া নাম-ঠিকানায় পাসপোর্ট পেতে আবেদন করেছিল।
দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে মঙ্গলবার ৬৮ জনের তথ্য দুদকের কাছে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মোস্তফা আলী নামে একজন বাংলাদেশি ছাড়া সবাই রোহিঙ্গা। যারা ভুয়া তথ্য দিয়ে ভোটার হয়েছেন। এসব রোহিঙ্গা বাঁশখালী উপজেলার বাসিন্দা হিসেবে ভোটার হয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশনের অফিস সহায়ক জয়নালের মাধ্যমেই তারা ভোটার হয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন কি না তদন্ত করে দেখা হবে। কারণ জয়নালের বাড়িও বাঁশখালীতে। নির্বাচন কমিশনের সরবরাহ করা তিনটি ল্যাপটপ ও সার্ভার ব্যবহার করে তারা ভোটার হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে বিভিন্ন সময় বেশ কয়েকটি ল্যাপটপ গায়েব হয়ে যায়। গায়েব হওয়া তিনটি ল্যাপটপ ব্যবহার করে ৬৭ রোহিঙ্গাকে ভোটার করা হয়। এর মধ্যে দুটি ল্যাপটপের নম্বর ছিল ০৩৫১ ও ৪৩৯১। অপরটির নম্বর জানা যায়নি।
দুদকের উপ-পরিচালক শরীফ উদ্দিন জানান, ‘পাসপোর্ট অফিস থেকে দেড় শতাধিক সন্দেহজনক আবেদনকারীর বিস্তারিত আমরা পেয়েছি। এর মধ্যে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারাও রোহিঙ্গা হিসেবে সন্দেহ করছেন। এরই মধ্যে ৩০-৩৫ জনকে রোহিঙ্গা হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। তারা আমাদের রেকর্ডপত্র দিয়েছেন। ওইসব আবেদনে জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যয়নপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া আছে। জনপ্রতিনিধিদের স্বাক্ষর সঠিক কি না, কোন কোন জনপ্রতিনিধি রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের সনদ দিয়েছেন তা খতিয়ে দেখছি। পাশাপাশি রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে যেসব দালালের দ্বারস্থ হয়েছে তাদের সম্পর্কেও খোঁজখবর নিচ্ছি।’