মিজানুর রহমান মিলন,সৈয়দপুরঃ
সৈয়দপুর সরকারি কলেজের এক শিক্ষিকার সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অনৈতিক ঘটনার প্রতিবাদে আজ সোমবার সকালে সৈয়দপুর কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে কলেজে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ ও শিক্ষিকার অপসারণ দাবি করে অধ্যক্ষের কক্ষে ও প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে দেয়। খবর পেয়ে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম গোলাম কিবরিয়া কলেজে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন। পরে অধ্যক্ষের কক্ষসহ প্রশাসনিক ভবন ও ক্লাস রুমের তালা খুলে দেয়া হয়। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সভাপতিত্বে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে অধ্যক্ষ ও শিক্ষিকার অনৈতিক অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে আশ্বাস দেয়ায় শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচিও প্রত্যাহার করে নেয়। শিক্ষক মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে উপজেলা প্রশাসন, শিক্ষক, কর্মচারী ও সাধারণ শিক্ষার্থী পরিষদের নেতারা অংশ নেয়। এ সময় শিক্ষার্থী নেতা আব্দুল্লাহ আল মারুফ, মো. রফিক, মো. সাজ্জাদ, মো. রাকিব, মো. আকাশ, তৌফিক এলাহি লিমন, মো. নাসিম ও মো. রাসেল ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে সৈয়দপুর সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাখাওয়াৎ হোসেন খোকন ও একই কলেজের সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক সুলতানা নওরোজের অনৈতিক কর্মকান্ডের বিষয় উল্লেখ করেন। এ কারণে ওই শিক্ষকদ্বয়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও তাদের অপসারণের দাবি জানানো হয়। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম গোলাম কিবরিয়ার নির্দেশে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয়েছে উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) পরিমল চন্দ্র সরকারকে। এ কমিটির অন্যরা হলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেহানা ইয়াসমিন ও সৈয়দপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল হাসনাত খান। এই কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়। আর এই সময়ে কলেজের দায়িত্ব পালন করবেন উপাধ্যক্ষ নার্জিজ বানু।
এদিকে অনৈতিকতার দায়ে অভিযুক্ত সৈয়দপুর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাখাওয়াৎ হোসেন খোকন বেলা ১১ টায় তাব বাসায় দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি কুচক্রি মহল অসত্য ঘটনার নাটক সাজিয়ে আমাকে সমাজে হেয় করতে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি এ অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। এ ব্যাপারে আজ দুপুরে অভিযুক্ত শিক্ষিকা সুলতানা নওরোজের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, অধ্যক্ষের সঙ্গে আমার অনৈতিক বিষয় নিয়ে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা পুরোপুরি মিথ্যা।
উল্লেখ্য, গত রোববার বিকেলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাখাওয়াৎ হোসেন খোকন কলেজের শিক্ষিকা সুলতানা নওরোজকে নিয়ে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের কার্যালয়ে যান। সেখানে তিনি কার্যালয়ের কক্ষে দরজা বন্ধ করে ভিতরে অবস্থান করার সময় এলাকাবাসী কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে হৈচৈ করতে থাকে। এ সময় খবর পেয়ে সৈয়দপুর পৌরসভার স্থানীয় কাউন্সিলর আল-মামুন সরকারসহ অন্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হৈচৈকারীদের শান্ত করেন। পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও ওই শিক্ষিকা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে এ ঘটনা অনৈতিক উল্লেখ করে মুহুর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।এনিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ফলে ঘটনাটি শহরে টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়।