সাংগঠনিক সব ক্ষমতা পাচ্ছেন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত দুই নেতা

0
549
নাহিয়ান-লেখক আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নেবেন সোমবার
আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য। ছবি: সংগৃহীত

খবর৭১ঃ

পরবর্তী সম্মেলন না হওয়া পর্যন্ত সাংগঠনিক সব কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা থাকছে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত দুই নেতা আল নাহিয়ান খান ও লেখক ভট্টাচার্যের। বর্তমান কমিটির বাকি ১০ মাস মেয়াদে সাংগঠনিক কমিটি গঠন থেকে শুরু করে সাংগঠনিক সব কাজ করতে পারবেন তাঁরা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান এসব তথ্য জানিয়েছেন৷

সাম্প্রতিক বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বাদ পড়েছেন। তাঁদের পরিবর্তে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

গতকাল শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে আলোচনার পর দলের সভাপতি শেখ হাসিনা কিছু নির্দেশনা দেন। সভায় আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালের অক্টোবরে কাউন্সিলের মাধ্যমে তিন বছর মেয়াদি আওয়ামী লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

কিছুদিন ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজ থেকে কমিশন দাবি, টাকার বিনিময়ে কমিটিতে পদ দেওয়া, অবৈধভাবে ক্ষমতা প্রদর্শনসহ ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ সামনে আসে। ৭ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের এক সভায় দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। এরপর থেকেই ছাত্রলীগের দুই নেতার ভবিষ্যৎ নিয়ে দলে নানা আলোচনা শুরু হয়।

৭ সেপ্টেম্বরের সভায় ছাত্রলীগের বাদ পড়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ তোলা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিতর্কিত ব্যক্তিদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দেওয়া, দুপুরের আগে ঘুম থেকে না ওঠা, মধুর ক্যানটিনে অনিয়মিত যাওয়া, অনৈতিক আর্থিক লেনদেন প্রভৃতি। একাধিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথিকে কয়েক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করানোর অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা।

সবশেষ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজের কমিশন দাবির অভিযোগটি সামনে আসে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন, গত শুক্রবার গোলাম রাব্বানী এমন অভিযোগ করলে গতকাল শনিবার দুপুরে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্য তা অস্বীকার করেন। তিনি ছাত্রলীগের প্রতি পাল্টা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, ‘তাদের (ছাত্রলীগ) মূল উদ্দেশ্য ছিল যে তারা ঠিকাদারের কাছ থেকে কিছু কমিশন নেবে। তারা এ বিষয়ে আমাকে ইঙ্গিত দিয়েছে। কিন্তু আমার কাছে এসে তারা হতাশ হয়েছে।’ এর প্রতিক্রিয়ায় গতকাল সন্ধ্যায় গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘এটি সত্য নয়। আমরা চ্যালেঞ্জ দিলাম, ম্যাম (উপাচার্য) এর প্রমাণ দিক যে আমরা পার্সেন্টেজ চেয়েছি।’ তিনি ওই সময় শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেওয়া প্রসঙ্গে সুর পাল্টে বলেন, ‘এটা শোনা কথার ভিত্তিতে বলেছিলাম।’

গতকাল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় ছাত্রলীগের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পায়। আলোচনায় আসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়টিও। সভায় উপস্থিত সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের বিষয়টি উল্লেখ করে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা দুই শীর্ষ নেতাকে বাদ দেওয়ার কথা বলেন। এ সময় তিনি তাঁদের পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি আল নাহিয়ান খান ও লেখক ভট্টাচার্যকে নতুন দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন। তাঁরা যাতে সম্মেলনের মাধ্যমে পরবর্তী নেতৃত্ব ঠিক করেন, সে কথাও বলেন।

আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ সূত্র জানিয়েছে, দলীয় প্রধানের নির্দেশের খবর পাওয়ার পর রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও গোলাম রাব্বানী ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেতা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

গত বছরের জুলাইতে ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় এই বছরের মে মাসে। এরই মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বাদ পড়লেন। ছাত্রলীগের ইতিহাসে এ ধরনের নজির খুব একটা নেই বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন।

এদিকে ভারপ্রাপ্ত দুই নেতার দায়িত্ব প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া দুজন ছাত্রলীগের পরবর্তী সম্মেলন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। শোভন-রাব্বানী কমিটির বাকি মেয়াদে তাঁরা দায়িত্বে থাকবেন। ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠন থেকে শুরু করে নিয়মিত সব সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন তাঁরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here