ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : দুই শিশু সন্তানের খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাওয়ানোর পর নিজে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ঘনি মহেষপুর গ্রামের নুরবানু আক্তার (২৫) নামে এক মা। এতে হাসপাতালে আনার পথে ২০ মাস বয়সী সন্তান নুরজামালের মৃত্যু হয়। পরে মারা গেল আরেক সন্তান শাম্মী আক্তার(৬)।বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শাম্মী।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দুই সন্তানকে খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে নিজেও বিষ খেয়ে আত্মহননের চেষ্টা করেন নুরবানু নামে সেই মা। নুরবানু আক্তার ওই এলাকার দিনমজুর সেলিম উদ্দীন এর স্ত্রী। বর্তমানে তিনি ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নুরবানুর স্বামী সেলিম উদ্দীন(৩৫) বলেন, প্রতিদিনের ন্যায় সকালে কাজের সন্ধানে বাসা থেকে বের হয়ে যাই। আমার স্ত্রী দুই সন্তানের মুখে বিষ দিয়ে স্ত্রী নিজেও বিষ খেয়েছে এমন খবর স্থানীয়রা জানালে আমি তিনজনকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি।হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক আমার ছোট সন্তানকে মৃত ঘোষনা করে বাকি দুজনের চিকিৎসা শুরু করে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, রুহিয়া ঘনি মহেষপুর গ্রামের মৃত: হবিবর রহমানের দুই স্ত্রী। এক স্ত্রীর নাম বাচ্চা মাই ও আরেক স্ত্রীর নাম সাহারা বানু। বাচ্চা মাই’র চার সন্তান ও সাহারা বানুর দুই সন্তানের মধ্যে এক মেয়ে গত বছর গলায় ফাস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে আর আরেক সন্তান সেলিম এর সঙ্গে পরিবার সহ তার স্বামীর ১৮ কাঠা জমিতে বসবাস করে আসছে।কিন্তু জমিটি ভোগ দখলের উদ্দেশ্যে ও সেলিমকে ভিটে ছাড়া করতে প্রায় সময় পরিবারে ঝগড়া মারামারি লেগে থাকতো। গতকাল বুধবার রাতে সেলিমের চাচী জোৎস্না তার বউ-বাচ্চাদের বের করে ঘরে তালা দেয়। এ নিয়ে সেলিমের সৎ ভাইরা(সিরাজুল, ইমতাজুল, রিয়াজুল ও মন্তাজুল) সেলিম ও তার বউ নুরবানুকে মারপিট করে। এ ঘটনায় সাহারা বানু তার সন্তান ও বৌমাকে মারধরের বিষয়ে ওই এলাকার মহিলা ইউপি সদস্য হালিমা খাতুনকে অভিযোগ দিলে তিনি রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সালিশ বৈঠক ডাকেন।কিন্তু তার আগেই ঘটে যায় অঘটন।
এদিকে গতকালের রাতের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রথমে ঘরে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে নিজের দুই সন্তানকে খাবারের সাথে বিষ খাইয়ে নিজেও বিষ পানে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন নুরবানু।
রুহিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার রায় জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- স্বামীর সঙ্গে ঝগড়ার কারণে দুই সন্তানের মুখে বিষ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে স্ত্রী। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা বলা যাবে।