খবর৭১ঃ
পুলিশের সাবেক ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে জামিন দেননি হাইকোর্ট। আদালত জামিন বা জামিন প্রশ্নে রুল জারি করতে রাজি না হওয়ায় আইনজীবী জামিনের আবেদন ফেরত নিয়েছেন।
বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ মঙ্গলবার দীর্ঘ শুনানির পর এনামুল বাছিরের আইনজীবী জামিনের আবেদন ফেরত নেন। এনামুল বাছিরের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম এম জামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্টের অন্য কোনো বেঞ্চে জামিনের আবেদন শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হবে।
এদিকে মঙ্গলবার শুনানিকালে জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান আদালতে বলেন, পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে এই খন্দকার এনামুল বাছির দুদকের ভাবমূর্তি ও প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করেছেন। তাই তিনি জামিন পেতে পারেন না।
তিনি বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে দুদকের একজন কর্মকর্তা হয়ে একজনের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু নেই। তিনি বলেন, ডিআইজি মিজানুরের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন এনামুল বাছির। তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়ার পর দুদক নিজস্বভাবে অনুসন্ধান করে এজাহার দাখিল করেছে।
এনামুল বাছিরের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল শুনানিতে বলেন, মামলাটি করা হয়েছে পুলিশের সাবেক ডিআইজি মিজানুর রহমানের কথার ভিত্তিতে। এই মিজানুর রহমান পরিকল্পিতভাবে এনামুল বাছিরকে ফাঁসিয়েছেন।
তিনি বলেন, দুদকের করা মামলার এজাহারেই বলা হয়েছে যে, মিজানুর রহমান অসৎ উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে এনামুল বাছিরের সঙ্গে ঘুষ লেনদেনের বিষয় রেকর্ড করে মিডিয়ায় সরবরাহ করেছে। এরপর দুদক মিজানুরের কথা শুনে মামলা করেছে। মিজানুর রহমান যদি এই ঘুষের তথ্য ফাঁস না করতেন তখন কি দুদক মামলা করতো? দুদকতো ওই ঘুষের খবর জানতে পারতো না। সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী এই এজাহার গ্রহণযোগ্য নয়।
এ সময় আদালত তার কাছে জানতে চান, মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের মামলায় তদন্ত চলাকালে তারসঙ্গে দেখা করতে আপনি রমনা পার্কে গেলেন কেন? তারসঙ্গে টেলিফোনে কথা বললেন কেন?
জবাবে আইনজীবী বলেন, এনামুল বাছির আদৌও রমনা পার্কে গেছেন কি না সেটা সাক্ষ্য-প্রমাণের বিষয়। এটা বিচারে নির্ধারিত হবে। কিন্তু জামিনের বিষয়ে এই আদালতের হাত প্রসারিত।
শুনানি শেষে আদালত বলেন, আমরা জামিন দিচ্ছি না। এ সময় আইনজীবী বলেন, জামিন প্রশ্নে রুল জারি করুন। সে ক্ষমতাতো আদালতের রয়েছে।
আদালত বলেন, না। আমরা তাও দিচ্ছি না। এ সময় আইনজীবী জামিনের আবেদন ফেরত নিতে চাইলে আদালত আবেদনটি ফেরত দেন।
ডিআইজি মিজানের সঙ্গে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে গত ১৬ জুলাই মামলা করে দুদক। ডিআইজি মিজানুর রহমান গত ৮ জুন দাবি করেন, এনামুল বাছির তার কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন।
এ বিষয়ে এনামুল বাছিরের সঙ্গে মিজানুর রহমানের টেলিফোনে কথোপকথনের অডিও পরীক্ষা করা হয়। ফরেনসিক পরীক্ষায় ঘুষ লেনদেন নিয়ে তাদের কথোপকথনের অডিওর সত্যতা পাওয়ার পর তাদের দুইজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করে দুদক। ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে গত ১৩ জুনের মধ্যে রমনা পার্কে এই লেনদেনের ঘটনা ঘটে বলে মামলার এজাহারে বলা হয়। এই মামলায় গত ২২ জুলাই রাতে এনামুল বাছিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পরদিন ২৩ জুলাই তাকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। ওইদিন এনামুল বাছিরের করা জামিনের আবেদনও খারিজ করে আদালত। এ অবস্থায় মঙ্গলবার হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করা হয়।
অবৈধভাবে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫ টাকার সম্পদ অর্জন ও দুদকের কাছে ৩ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার ৪২১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে গত ২৪ জুন ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করে। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন এনামুল বাছির। এ কারণেই ডিআইজি মিজানের কাছ থেকে ঘুষ নেন এনামুল বাছির।