খবর৭১ঃ
বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের রেললাইন বাস্তবে রূপ পেতে যাচ্ছে। এত দিন এ অঞ্চলে রেললাইন স্থাপন গল্পের মতো শোনালেও এবার তা যেন বাস্তব হতে চলেছে। ভাঙ্গা-পায়রা রেললাইন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ গত বুধবার বরিশালে ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে মতবিনিময়সভা করে। এ ঘটনাকে স্থানীয়রা দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়নের সূচনা হিসেবে মনে করছে।
গতকাল বরিশাল ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নিয়োগ করা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্ট ও ডেভেলপমেন্ট সেভ গার্ড কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সরাসরি কথা বলেছেন। সকাল ১১টায় ওই ওয়ার্ডের মাঝিবাড়ী চত্বরে অনুষ্ঠিত সভায় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কাছে ক্ষতিগ্রস্তরা ভূমি অধিগ্রহণ বিষয়ে নানাবিধ প্রশ্ন তুলে ধরে।
বিশেষ করে রেললাইনের জন্য অধিগ্রহণ করা ভূমির মধ্যে থাকা মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান শ্মশানগুলোর অবস্থা কী হবে? কৃষিজমি, অকৃষি জমি এবং বসতভিটার জমির মূল্য নির্ধারণ, মাছের খামার, গাছ, গবাদি পশুর খমার, পারিবারিক জমি বণ্টন, জমি রেকর্ডের ক্ষেত্রে নানাবিধ জটিলতা, অর্থ গ্রহণের সময় ঘুষ বাণিজ্য বন্ধের দাবি জানায় ক্ষতিগ্রস্তরা।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এত দিন শুনেছি রেললাইন স্থাপন হবে। কিন্তু গতকাল প্রকল্প পরামর্শকরা আমাদের সঙ্গে সভা করায় তা দৃশ্যমান মনে হয়েছে। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে সরকার চাইলে আমাদের জমি-বাড়ি-ঘর দিতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সেখানে কিছু আবেগ-অনুভূতি জড়িত রয়েছে। যেমন এই মাঝিবাড়ী এলাকায় দুটি মসজিদ, কয়েকটি কবরস্থান ও শ্মশান রয়েছে। সেগুলোর অবস্থা কী হবে? মন্দির-মসজিদ সাধারণ মানুষের একটি ধর্মীয় অনুভূতির জায়গা।
মনিরা আক্তার নামের এক নারী বলেন, ‘রেললাইন স্থাপন এখন দেখছি গল্প না, সত্যিই। তবে আমার নির্মাণাধীন চারতলা বাড়ির জমি আমার নামে, কিন্তু বাড়ির নকশা স্বামীর নামে, সরকার থেকে প্রাপ্ত অর্থের দাবিদার কে হবেন, জমির মালিক না বাড়ির নকশার মলিক? এ বিষয়টি প্রকল্প পরামর্শকদের কাছে জানতে পেরেছি।’
জসীম উদ্দিন নামে এক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বলেন, ‘ঘুষ ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অর্থ পাওয়া যায় না। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ অর্থপ্রাপ্তির ক্ষেত্র সহজীকরণের জন্য কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেবে বলে আশা রাখি। এ ছাড়া কৃষিজমি, বসতভিটার মূল্য কিভাবে নির্ধারণ করা হবে—সে বিষয়ে স্পস্ট কোনো ধারণা ছিল না। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে ধারণা পাওয়া গেছে।’
২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার বলেন, ‘স্বাভাবিক কারণে সরকারের পক্ষ থেকে ভূমি অধিগ্রহণের কথা শুনলেই মানুষের মনের মধ্যে নেতিবাচক একটা ধারণা জন্মায়। গতকালের মতবিনিময়সভায় সেই নেতিবাচক ধারণা পাল্টে গেছে। তারা সবাই সরকারের উন্নয়নের সঙ্গে শরিক হতে চায়। আমরাও চাই সরকারকে বিতর্কিত না করে রেললাইন স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে সহযোগিতা করতে। তবে সরকারের কাছে দাবি থাকবে, ভূমি অধিগ্রহণের সময় যেসব আইনি জটিলতা ও ক্ষতিগ্রস্তরা যে হয়রানির শিকার হয় তা যেন সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত সমাধান করে দেয়।’
প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োগ করা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্ট কম্পানি লিমিটেডের পরামর্শক আহসান এলাহী জাহির বলেন, ২১২ কিলোমিটারের ভাঙ্গা-পায়রা রেললাইন প্রকল্পের প্রশস্ততা হবে ১০০ মিটার। দুটি রেললাইনের বিষয়টি মাথায় রেখেই ১০০ মিটার জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে একটি লাইন নির্মাণ করা হবে। এতে কী পরিমাণে পরিবার বা মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের তালিকা তৈরি হচ্ছে। এ সমীক্ষা শেষ হতে আরো কয়েক দিন লাগবে।
তিনি আরো জানান, ২১২ কিলোমিটার রেললাইনে মধ্যে ১২টি প্রধান স্টেশন হবে। এর মধ্যে বরিশাল নগরের মধ্যে থাকবে দুটি এবং বিমানবন্দর এলাকায় একটি স্টেশন থাকবে। এ ছাড়া বড় ধরনের আটটি ব্রিজ এবং কয়েক শ ছোট ও মাঝারি আকারের ব্রিজ-কালর্ভাট নির্মাণ করা হবে।
ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্ট কম্পানি লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক আকতারুল ইসলাম খান বলেন, এই ২১২ কিলোমিটারের মধ্যে মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান, শ্মশানসহ যেসব ধর্মীয় উপাসনালয় থাকবে সেগুলো প্রকল্পের ব্যয়ে অন্যত্র পুনঃস্থাপন ও স্থানান্তর করে দেওয়া হবে। অধিগ্রহণকৃত জমির কাগজপত্র ঠিক থাকলে কোনো দপ্তরই ক্ষতিপূরণের অর্থ আটকে রাখতে পারবে না। তাই সবার উচিত হবে জমির কাজপত্র পুরোপুরি ঠিক করে রাখা। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্দেশে আরো বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী সব মালিককে পাওনা পরিশোধ করা হবে। সেখান থেকে কেউ বঞ্চিত হবে না।