রোহিঙ্গাদের ফেরাতে কৌশলী অবস্থানে সরকার: ওবায়দুল কাদের

0
844
রোহিঙ্গাদের ফেরাতে কৌশলী অবস্থানে সরকার: ওবায়দুল কাদের

খবর৭১ঃ মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ সরকার কৌশলী অবস্থান নিয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, কূটনীতিক ব্যর্থতার কোনো বিষয় নেই, এখানে কৌশলগত কারণ রয়েছে। অনেক সময় দুই পা এগিয়ে গেলে এক পা পিছিয়ে আসতে হয়। সেই বাস্তব কারণে এক পা পিছিয়ে এলে সেটাকে কূটনীতিক ব্যর্থতা বলা সঠিক হবে না। মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার দায় নিতেই হবে।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শনিবার দুপুরে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটশন মিলনায়তনে বিআরটিসি শ্রমিক-কর্মচারী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, মিয়ানমার সেখানে পরিবেশ সৃষ্টি করেনি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করেনি। সিটিজেনশিপের মতো বিষয়টি সুরাহা করতে পারেনি। এজন্য তাদের বিশ্বাস করতে পারেনি রোহিঙ্গারা। তারা অত্যাচারিত নির্যাতিত হয়েছে। এর দায় মিয়ানমার সরকারকে নিতে হবে। রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে আসার পর এইবার মিয়ানমার সরকার আন্তর্জাতিক চাপ অনুভব করছে। আমরা আরও চাপ অব্যাহত রাখব। সেজন্য আমরা যুদ্ধের পথে যাব না। আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখব। সেই কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।

সেতুমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনে যুদ্ধের পথে গিয়ে জয়ী হওয়া যাবে না। শান্তিকে জয় করতে হবে। এ লোকগুলোকে সম্মানের সঙ্গে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ফেরত পাঠাতে হবে। সেজন্য চেষ্টা চলছে। আজকে যারা বলেন- ‘এখানে কূটনৈতিক প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে।’ আমি বলব, এটা তাদের বিগ মিসটেক। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের মনে রাখতে হবে মিয়ানমারেরও বন্ধু আছে এবং শক্তিশালী বন্ধু আছে। বাস্তবতাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। দীর্ঘদিন স্বৈরশাসন কায়েম করেছে বলে তারা বন্ধুহীন এটা চিন্তা করার কারণ নেই। আজকের পৃথিবীর ডিপ্লোমেসিটা ইকোনোমি ডিপ্লোমেসি। এখানে জিও ফিজিক্যাল কন্ডিশনে মিত্রতা সৃষ্টি হয়। ইকোনোমিক কারণে ফিনান্স্যিয়াল কারণে মিত্রতা হয়। সবার একটা অংক আছে, হিসাব আছে। সেই হিসাবে মিয়ানমারের বন্ধুরা কম শক্তিশালী নয়। কাজেই আমাদের কৌশলী হয়ে এগোতে হচ্ছে।

তারপরও রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের কূটনৈতিক অর্জন কম নয় জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, সবকিছু মিলিয়ে জাতিসংঘ, ইউরোপসহ আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে শেখ হাসিনা সরকার যতটা কূটনীতিক সফলতা অর্জন করেছে এটা অন্য কোনো দেশে সম্ভব হয়নি। এখানকার সমস্যাটা জটিল। এ জটিলতার মধ্যে শেখ হাসিনা যুদ্ধ পরিহার করে ঠাণ্ডা মাথায় যুদ্ধের উসকানির মধ্যে যুদ্ধের পথে না গিয়ে শান্তির মাধ্যমে আলাপ-আলোচনা করে এর সমাধান করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

রোহিঙ্গাদের দীর্ঘমেয়াদে অবস্থানে কক্সবাজার-টেকনাফ এলাকার পর্যটনসহ সবকিছু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, রোহিঙ্গাদের লালন-পালন ও আশ্রয় দেয়ায় আমাদের ট্যুরিজম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইকোলজি অ্যাফেকক্টেড হচ্ছে। আমাদের ইকোনোমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত যা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে, সেই পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

কক্সবাজারে নিজ দলের এক নেতা রোহিঙ্গাদের হাতে নিহত হওয়ার ঘটনায় দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সেখানে রোহিঙ্গারা ১১ লাখ। আর আমরা ৪ লাখ। রোহিঙ্গাদের মধ্যে সবাই যে নিরীহ, শান্ত, সেটি মনে করার কারণ নেই। তাদের মধ্যে হতাশা আছে, বেপরোয়া মনোভাব আছে। সেটির একটি বিচ্ছিন্ন প্রকাশ ঘটেছে। কাজেই এর জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাবে, এটা মনে করা সঠিক হবে না। পরিস্থিতি আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

বিআরটিসিতে লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাচ্ছে : অনুষ্ঠানে বিআরটিসিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান সড়ক ও সেতুমন্ত্রী। তিনি বলেন, দুর্নীতি মুক্ত না হলে বিআরটিসি লাভের মুখ দেখবে না। লাভের গুড় এখানে পিঁপড়ায় খাচ্ছে। লাভের গুড় যখন পিঁপড়ায় খেয়ে ফেলে তখন লোকসান হবে। যারা উপরে আছেন ভাগাভাগি তারাই করেন।

তিনি আরও বলেন, আমি বিআরটিসির ব্যাপারে কঠিন হতে চলেছি। নতুন গাড়িগুলো এসে বহর আরও সমৃদ্ধ করেছে। আপনারা সহযোগিতা করলে বিআরটিসিকে লাভবান করা সম্ভব। বিআরটিসি থেকে দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ করা হবে। এ প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করার যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে দেখাব। আয়োজক সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আবদুল কাদেরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহামুদ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান আকন্দ প্রমুখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here