খবর৭১ঃ একযোগে নির্বাচন হবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের। আগামী ডিসেম্বর বা নতুন বছরের শুরুতেই এ ভোট হতে পারে। এরই মধ্যে বিএনপি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তিন সিটি এবং সামনের সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেবে। ঢাকার দুই সিটির জন্য দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত পর্যায়ে।
উত্তর সিটিতে বিএনপির আগের প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে সংকেত দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণে ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়া হয়েছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন খোকাকে। জানা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে টেলিফোনে দুই সিটিতে তাদের প্রার্থী করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এখন থেকেই দুই সিটির সমস্যাগুলো নিয়ে নিজেদের সাধ্যমতো কাজ করার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তরুণ দুই নেতা নির্দেশিত হয়ে ডেঙ্গুসহ রাজধানীর চলমান সমস্যা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। তারা নেতা-কর্মীদের নিয়ে জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন। দলের ভিতরেও তারা কাজ করে যাচ্ছেন। তবে চট্টগ্রামে বিএনপির প্রার্থী কে হবেন তা এখনো রয়েছে জল্পনার পর্যায়ে।
সেখানে তালিকায় অবশ্য এগিয়ে রয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। এ ছাড়াও মহানগরের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্করও প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন। স্থানীয় বিএনপির একটি অংশ সুফিয়ান বা বক্করের মধ্য থেকে একজনকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান বলে জানা গেছে। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল প্রথমবারের মতো ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে নির্বাচন হয়। একই দিনে নির্বাচন হয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনেও।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী, পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। তাই আগামী নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তিন সিটি ভোটের এখনো অনেক দেরি। আমরা এখন দল গোছানোর কাজ করছি। এ ছাড়া আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে বিভাগীয় পর্যায়ে সভা-সমাবেশ করছি। ঢাকাসহ তিন সিটি ভোট নিয়ে দলের আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। তবে বিএনপি একটি উদারপন্থি গণতান্ত্রিক দল। আমরা নানা প্রতিকূল পরিবেশেও নির্বাচন ও গণতন্ত্রের পক্ষে। কিন্তু সরকার যেভাবে ভোট ডাকাতি করে জনমত ছিনিয়ে নিচ্ছে তাতে ভোটের প্রতি মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
বিএনপি সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকারসহ আসন্ন সব নির্বাচনেই অংশ নেবে বিএনপি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পরও দলের হাইকমান্ড এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ‘সন্ত্রাসী’ দলের তকমা মুছতে এবং গণতন্ত্রের দায়বদ্ধতা থেকেই এ সিদ্ধান্ত হয়। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই বিএনপির পাঁচ এমপি সংসদেও যোগ দেন। পরবর্তীতে বগুড়া-৬ আসনে উপনির্বাচনে অংশ নেয় দলটি। সেখানেও দলীয় প্রার্থী জি এম সিরাজ বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। তিনিও শপথ নিয়ে সংসদে যান। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী আসনেও বিএনপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে মনোনয়ন দিয়ে সংসদে পাঠানো হয়। এর আগে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনে প্রায় এক যুগ মেয়র ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা। অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন ধরেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে। এরই মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। দুই ভাগে প্রথম এ সিটি নির্বাচনে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এবার আব্বাস পরিবারের কেউ নির্বাচন করবেন না বলে জানা গেছে। সেক্ষেত্রে ঢাকা সিটি দক্ষিণে খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন খোকা বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী। এর আগে তিনি সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্বার্থে নির্বাচনে অংশ নেননি। এ প্রসঙ্গে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন খোকা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দল যদি মনোনয়ন দেয়, তাহলে আমি নির্বাচনে লড়ব। আমার বাবা অবিভক্ত সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। আমি প্রকৌশলী। ঢাকাকে অনেক কাছ থেকে দেখেছি। যানজট নিয়েও পড়াশোনা করেছি। তাই বাবার পাশাপাশি আমার অভিজ্ঞতাকেও আমি কাজে লাগাতে পারব। ’ ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা সিটি উত্তরের ভোটে অংশ নিয়েছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনিসুল হক বিজয়ী হন। নির্বাচিত হওয়ার আড়াই বছর পর মারা যান আনিসুল হক। এরপর ওই আসনে উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তাবিথ আউয়াল অংশ নিয়েও পরে বর্জন করেন। তাবিথ আউয়াল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দল চাইলে প্রার্থী হব।
এর আগেও আমি অংশ নিয়েছি। জনগণও পাশে ছিল। কিন্তু ভোট ডাকাতির কারণে হেরে গিয়েছিলাম। ’ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দিয়ে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাও হন। তিনি একবার বিএনপির সমর্থন নিয়ে মেয়রও নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচনের দিন সকাল ১০টায় দলের নির্দেশে ভোট বর্জন নিয়ে তাকে সংবাদ সম্মেলন করতে হয়। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন। কিন্তু বিএনপির হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত মানতে তিনি বাধ্য ছিলেন। এ কারণে পরে তিনি বিএনপির সব পদ থেকে পদত্যাগ করেন। আগামীতে এই সিটিতে বিএনপি নতুন প্রার্থীর চিন্তাভাবনা করছে।