খবর৭১ঃ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সেবা দিতে শুরু করেছে। বাণিজ্যিকভাবেও এই স্যাটেলাইটের বিভিন্ন ট্রান্সপন্ডার ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে ব্যান্ডউইথ বিক্রির চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে নেপাল, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন ব্যান্ডউইথ কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এখন তাদের সঙ্গে চলছে দর-কষাকষি। শিগগিরই তাদের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে আগ্রহী বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল)।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ ইত্তেফাককে বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি দেশে ব্যবহার হবে, বাকি ২০টি বিদেশে ভাড়া দেওয়া হবে। দেশের জন্য বরাদ্দ থাকা ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে বেশ কয়েকটি ইতিমধ্যে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। একটি বেসরকারি কোম্পানি পাঁচটি ট্রান্সপন্ডার ভাড়া নিয়েছে। এছাড়া টিভি চ্যানেলগুলোর জন্য কিছু ট্রান্সপন্ডার রাখা হয়েছে। মূলত ছয়টি টিভি চ্যানেলের জন্য একটি ট্রান্সপন্ডার লাগে। আগামী তিন মাসের মধ্যে সব টিভি চ্যানেল এই স্যাটেলাইটের আওতায় আসবে। ইতিমধ্যে ৪০টি দ্বীপে সংযোগের কাজ শেষ করা হয়েছে।’
একটি কোম্পানি সারাদেশে সেবা দেওয়ার কথা বলে পাঁচটি ট্রান্সপন্ডার ভাড়া নিলেও তারা কাজ শুরু করেনি। ঐ কোম্পানি ঢাকায় সীমিত পরিসরে কাজ শুরু করলেও সারাদেশে তাদের সেবা মিলছে না। অথচ এতদিনে তাদের সেবা শুরু করার কথা ছিল। সারাদেশে কবে নাগাদ পৌঁছবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি। ঢাকায় যে সীমিত পরিসরে সেবা দেয়া হচ্ছে, সেখানে ভারতীয় পে-চ্যানেল না পাওয়ায় বিরক্ত গ্রাহকরা। অনেক গ্রাহক এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
দেশের ৭৫০ ইউনিয়নে এখন ফাইবার অপটিক ইন্টারনেটের সংযোগ নেই। ইন্টারনেটবঞ্চিত এমন এলাকার মধ্যে রয়েছে পার্বত্য ও হাওর অঞ্চল। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেটসেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ৪০টি দ্বীপে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ঝড় বা বড়ো ধরনের দুর্যোগে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখতেও এটা কাজ করছে। বড়ো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মোবাইল নেটওয়ার্ক অনেক সময় অচল হয়ে পড়ে। তখন এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখা সম্ভব হবে।
ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেছেন, ‘আসলে স্যাটেলাইট আমরা বুঝে পেয়েছি গত নভেম্বরে। এর আগে এটি ছিল ফ্রান্সের থ্যালাস এলিনিয়া স্পেসের নিয়ন্ত্রণে। তারা গাজীপুরে গ্রাউন্ড স্টেশনে আমাদের ঢুকতেই দেয়নি। আমরা পুরো নিয়ন্ত্রণ হাতে পাওয়ার পর বেশ কিছু চুক্তি ইতিমধ্যে করেছি।’ তিনি বলেন, টিভি চ্যানেলগুলো আগে যে দামে কিনত এখন সেই দামই দেবে। প্রতি মেগাহার্ডজ ২ হাজার ডলার করেই পরিশোধ করবে তারা। প্রতিটি টিভি চ্যানেলের ৪ থেকে ৬ মেগাহার্ডজ লাগে। তাদের কাছ থেকে ৮ থেকে ১২ হাজার ডলার করে পাওয়া যাবে। এছাড়া ব্যাংকের এটিএম বুথ আর অনলাইনে অর্থ লেনদেন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর আওতায় আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটি ব্যাংকের একটি বুথ এই স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে সব এটিএম বুথ কোনো ধরনের ব্রডব্যান্ড সংযোগ ছাড়াই এই স্যাটেলাইটের আওতায় আনা হবে। এতে সাইবার অপরাধ কমে যাবে। এটিএম বুথে স্যাটেলাইট ব্যবহারের জন্য নতুন করে কিছু যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের দুর্গম অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হাতিয়ায় পরীক্ষামূলকভাবে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা হলে সেখানেও ইন্টারনেট যোগাযোগসহ ইন্টারনেটভিত্তিক কয়েকটি জরুরি সেবা নিশ্চিত হবে। এর মধ্যে আছে—টেলি মেডিসিন এবং টেলি এডুকেশনসেবা। ঢাকায় বসেই এক জন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নিয়মিত চিকিত্সাসেবা দিতে পারবেন। একইভাবে ঢাকা থেকেই রোহিঙ্গাদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাও সম্ভব হবে।