মিজানুর রহমান মিলন
সৈয়দপুর প্রতিনিধিঃ
সৈয়দপুরে এস আই ট্রাস্ট নামে ভূয়া এনজিও খুলে চাকুরি প্রত্যাশী বেকার যুবকের পৌণে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে সৈয়দপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন মো. সানোয়ার হোসেন ওরফে সজীব। সে এস আই ট্রাষ্ট নামের ওই ভূয়া এনজিওতে কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ হিসেবে পেয়েছিলেন। দায়ের করা মামলায় দুইজনকে আসামী করা হয়েছে। এরা হলেন রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের নায়েব আলীর ছেলে মো. হয়রত বেলাল ওরফে শরিফ (২৫) এবং একই উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের মন্ডলপাড়ার মৃত. খবির উদ্দিনের ছেলে মো. তানভীর মন্ডল ওরফে মিশন (৩৫)। এদের মধ্যে মামলার এক নম্বর আসামী মো. হযরত বেলাল ওরফে শরিফকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মামলার আরজিতে বলা হয়েছে আসামীরা সৈয়দপুর শহরের কয়াগোলাহাট এলাকার আসমতিয়া মাদ্রাসার কাছে একটি ভবন ভাড়া নেয় ওই এনজিওটি। এজন্য তাদের কার্যক্রম প্রচারে আকর্ষণীয় বেতন দেয়া হবে এমন লোভনীয় প্রস্তাবে গত ২৯মে একটি জাতীয় দৈনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য শাখা ব্যবস্থাপক পদে ২০, ফিল্ড অফিসার পদে ১০০ জন এবংঅফিস সহকারি পদে ২০ জন নিয়োগ করা হবে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এতে অনেকেই বেকারত্ব ঘোচাতে চাকুরী প্রার্থী হিসাবে আবেদন করেন। মামলার বাদী সজীব বলেন,পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে তিনি এস.আই ট্রাষ্টের অফিসে যান। এ সময় মো. হযরত বেলাল ওরফে শরিফ নিজেকে প্রতিষ্ঠানের মহা পরিচালক হিসেবে পরিচয় দেন। পরবর্তীতে সজীব ওই প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে আবেদন করেন। আবেদন করার সপ্তাহ খানেক পর গত মাসের ৫ জুলাই তাকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। ওই দিনই তাকে এস আই ট্রাষ্টের কম্পিউটার অপারেটর পদের জন্য একটি সাময়িক নিয়োগপত্র প্রদান করে বলা হয় চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য তাকে ১৫ হাজার টাকা জামানত হিসেবে প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে জমা করতে হবে। পরবর্তীতে সজীব প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালকের নামীয় হিসাব নম্বরে ১৫ হাজার টাকা জমা দেন।
এরপর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থকে তার অনুকুলে চূড়ান্ত নিয়োগপত্র প্রদান করা হয়। এভাবে ওই প্রতিষ্ঠানের ভূয়া মহাপরিচালক শাখা ব্যবস্থাপক, ফিল্ড অফিসার ও অফিস সহকারি হিসেবে ৩০/৩৫ জনকে নিয়োগ দিয়ে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে দেয়। পরবর্তিতে
নিয়োগপ্রাপ্ত বেকার যুবকরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন এস. আই ট্রাষ্ট্র নামে ওই প্রতিষ্ঠানের কোন রেজিস্ট্রেশন নেই। ফলে
নিয়োগপ্রাপ্ত বেকার যুবকরা তাদের জামানতের টাকা ফেরত চাইলে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত লোকজন টালবাহানা শুরু করে। এর এক পর্যায়ে তারা জানায় নিয়োগপ্রাপ্তদের জামানতের টাকা ফেরত পেতে কিছু দিন সময় লাগবে। এদিকে ঘটনার দিন গত ৮ আগষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা বেতন ভাতা ও জামানতের টাকা ফেরত প্রদানের জন্য দাবি করলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয় ঈদের পরে সব টাকা পরিশোধ করা হবে। এ সময় প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালকসহ অন্যান্যদের সঙ্গে নিয়োগপ্রাপ্ত বেকার যুবকদের তুমুল বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটে। এরই ফাঁকে তানভীর মন্ডল ওরফে মিশন কাগজ ফটোকপি করার কথা বলে প্রতিষ্ঠান থেকে সটকে পড়ে। পরবর্তীতে বেকার যুবকরা সৈয়দপুর থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মো. হযরত বেলাল ওরফে শরিফকে (২৫) আটক করে থানা নিয়ে আসেন। পরে ওই দুইজনকে আসামী করে সৈয়দপুর থানায় একটি প্রতারণার মামলা দায়ের করা হয়। সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহজাহান পাশা একটি ভুয়া এনজিওর মহাপরিচালকসহ দুইজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান গ্রেফতার ওই আসামিকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।