মশার ওষুধের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো এক সপ্তাহ

0
1230

খবর৭১ঃ মশা মারার কার্যকর ওষুধের জন্য আরো এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। এই সময়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কীভাবে সামলাবে জানে না ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এ কয়দিনে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে সর্বমহলে আলোচনা চলছে।

আলাপকালে সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, আল্লাহ আল্লাহ করেন, এবার কার্যকর ওষুধ আসছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মশা মারার কার্যকর ওষুধ দেশে এসে পৌঁছাবে। ইতিমধ্যে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ হাজার ছাড়িয়েছে। এখন প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর রেকর্ড ভাঙছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৪৭৭ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নেত্রকোনা জেলা বাদে দেশের বাকি সব কয়টি জেলাতে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। এরমধ্যে রাজধানীতে আক্রান্ত হয়েছেন ৯২৬ জন।

বুধবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পুলিশের এক এসআইসহ তিন জন মারা গেছেন। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিবের স্ত্রী, তিন জন চিকিত্সক ও এক নার্সসহ ৫৪ জন মারা গেলেন।

এতদিন মশা নিধনের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে এসেছে দুই সিটি করপোরেশন। উত্তর সিটি করপোরেশনের কালো তালিকাভুক্ত ওষুধ ছিটাচ্ছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। মশক নিধনে ব্যর্থ হওয়ায় এবার ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেড়েছে। অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পুলিশ ফাঁড়ি এসব এলাকায় ডেঙ্গুর ঝুঁকি বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কীটতত্ত্ববিদ ঢাকায়:

ডেঙ্গুর ভয়াবহতা রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজনকে কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞকে ঢাকায় আনা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কীটতত্ত্ববিদ ডা. নাগপাল এসেছেন। ইতিপূর্বে নাগপাল থাইল্যান্ড, ভারত, ফিলিপাইনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মশা নিধনে পরামর্শ দিয়েছেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মহাপরিচালক বলেন, ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে এক মশা একজনকে কামড়ে রক্ত খেয়ে পেট ভর্তি করে ফেলে। আর অ্যাডিস মশা দিনে কামড়ায় এবং এক মশা ৫ জনকে কামড়ায়। এতে ৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন।

ডা. নাগপাল বলেছেন, অ্যাডিস মশা সোফার নিচে, টেবিলের নিচে, খাটের নিচে থাকে। দিনে মশারি টাঙিয়েও রেহাই পাওয়া যায় না। অফিস, আদালত, স্কুল-কলেজে বেশি কামড়ায়। পরিষ্কার জমাট পানিতে জন্ম নেয়। নির্মাণ কাজের স্থলে পানি জমে থাকলে এডিস মশার বংশবিস্তার ঘটে। এক্ষেত্রে লিকুইড ওষুধে কাজ হয় না। দানাদার জাতীয় ওষুধ দিলে ওই জায়গায় তিন সপ্তাহ মশার জন্ম হবে না।

আজ বৃহস্পতিবার আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে অ্যাডিস মশা নির্মূলে পরামর্শমূলক বক্তব্য রাখবেন ডা. নাগপাল। অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের সুচিকিত্সা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। তবে দিনদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ায় চিকিত্সক-নার্সরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকের আইসিইউয়ের প্রয়োজন হলেও দেওয়া যাচ্ছে না।

মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা না হলে বিপদ বাড়বে :সেব্রিনা ফ্লোরা

গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা না হলে বিপদ বাড়বে। মশার প্রজননস্থল নির্মূলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমরা সবাই মিলেই জোরেশোরে মশা প্রজননের উত্সস্থল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। যদি উত্স নির্মূলে সফল হই তাহলে এটাকে থামাতে পারব। যদি কোনো কারণে কার্যকরভাবে এটা নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে প্রতিবছর এটা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যায়। পিক টাইম সেপ্টেম্বরে। সুতরাং এখানে একটাই পদ্ধতি সেটা হচ্ছে ‘সোর্স রিডাকশন’। তিনি বলেন, যত রকম ওষুধই ব্যবহার করি না কেন যদি সোর্স রিডাকশন না হয় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে বলা হয়েছে, এ বছর গতকাল পর্যন্ত ১৭ হাজার ১৮৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক সানিয়া তহমিনা, জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম এম আক্তারুজ্জামান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আয়েশা আক্তার উপস্থিত ছিলেন।

ডেঙ্গু পরীক্ষায় প্রয়োজনীয় রি-এজেন্টের সঙ্কট দেখা দেওয়ায় কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক সানিয়া তহমিনা বলেন, জরুরি ভিত্তিতে ৫০ হাজার এনএসওয়ান কিট আমদানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এগুলো যেহেতু দেশে তৈরি হয় না এজন্য এগুলো আনতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে না। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও এক লাখ কিট দেবে যেগুলো আমরা বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠিয়ে দেব। এগুলো বিনা পয়সায় দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ডেঙ্গু পরীক্ষায় ব্যবহৃত আরডিডি কিট সব জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান সানিয়া তহমিনা। এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু গাইডলাইনও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর বাহক অ্যাডিস মশার উত্পত্তিস্থল ধ্বংসে প্রশিক্ষণ দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৪০০ দল ঢাকা শহরের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের দুই লাখ শিক্ষার্থীর কাছে যাবে। তারা ডেঙ্গুর উত্সস্থল নির্মূলে কিভাবে করা যায় সে বিষয়ে শিশুদের প্রশিক্ষণ দেবে, তারা যেন আবার বাসায় গিয়ে তা প্রয়োগ করতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here