খবর৭১ঃ
হেপাটাইটিস সংক্রমণ এক ধরনের নীরব ঘাতক। এ রোগ রক্তের মাধ্যমে বা অবাধ যৌনাচারের মাধ্যমে ছড়ায় বলে অনেকে এইডস-এর মতো বলে অভিহিত করেন। তবে এবার হেপাটাইটিস-বি এর ভ্যাকসিন ‘ন্যাসভ্যাক’ খুব শিগগিরি বাজারে আসছে বলে জানিয়েছে বিকন ফার্মাসিউটিক্যালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবাদুল করিম বুলবুল।
তিনি বলেন, দেশে উদ্ভাবিত প্রথম হেপাটাইটিস-বি এর ওষুধ ‘ন্যাসভ্যাক’। যেটির অনুমোদন পেয়েছে বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস। আগামী এক বছরের মধ্যে এ ওষুধ বাজারজাত করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এছাড়া এটি অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যাবে বলেও জানান বিকন ফার্মাসিউটিক্যালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
আজ রোববার (২৮ জুলাই) বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। এ দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘আসুন খুঁজি লক্ষ অজানা রোগীদের’।
এ দিবস উপলক্ষে শনিবার (২৭ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ফোরাম ফর দি স্টাডি অব দি লিভার বাংলাদেশ’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এবাদুল করিম বুলবুল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, হেপাটাইটিস নিয়ে সমস্যা হচ্ছে আমরা নিজেরাই জানি না যে, আমাদের হেপাটাইটিস ভাইরাস আছে কি না। প্রত্যান্ত অঞ্চলের লোকেরা তো জানেই না। এ জন্য যথেষ্ট প্রচারের পাশাপাশি আমাদের সাবাইকে সচেতন হতে হবে। এছাড়া রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে আমাদের আপডেট থাকা দরকার।
দেশের দুই প্রতিভাবান চিকিৎসকের নিরলস প্রচেষ্টায় উদ্ভাবিত প্রথম ওষুধ হিসেবে ‘ন্যাসভ্যাক’ ইতিমধ্যে আনুমোদন পেয়েছে। হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় অধিকতর কার্যকর এ ওষুধ উদ্ভাবন করেন বাংলাদেশের দুই গবেষক। জাপান প্রবাসী বাংলাদেশি লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন-আল-মাহতাব (স্বপ্নীল)।
ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর প্রথমে ওষুধটি উদ্ভাবনের জন্য মৌলিক গবেষণা সম্পন্ন করেন। পরে ডা. স্বপ্নীল ওষুধের কার্যকারিতা যাচাইয়ের প্রধান পরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পর ২০১৭ সালে এটি পূর্ণাঙ্গ রুপ পায়।
অধ্যাপক আকবর ২৫ বছর ধরে হেপাটাইটিস-বি এর নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করছেন। তার গবেষণার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, হেপাটাইটিস- বি’র বিরুদ্ধে মানুষের নিজের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে বাড়িয়ে দিয়ে ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণ করা। এ উদ্দেশে ডা. আকবর প্রথমে ইঁদুরের ওপর গবেষণা করেন। পরে জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে হেপাটাইটিস-বি রোগীদের ওপর ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিচালনা করেন।
হেমাটোলজিস্টদের মতে, বর্তমানে হেপাটাইটিস- বি ভাইরাসে আক্রান্ত মারাত্মক রোগীদের চিকিৎসায় যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হয় সেগুলোর পূর্ণ কোর্সের খরচ পড়ে সাড়ে চার লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা। আবার কিউবায় উৎপাদিত ন্যাসভ্যাক ব্যবহার করলে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু দেশে ন্যাসভ্যাক উৎপাদন করা হলে এর দাম পড়বে ২ লাখ টাকার মতো। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটির নিবন্ধন পাওয়া গেলে সিভিয়ার হেপাটাইটিস-বি রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসবে।
ডা. স্বপ্নীল বলেন, বিশ্ব বাজারে হেপাটাইটিস-বি’র প্রতিরোধক ভ্যাকসিন থাকলেও বাংলাদেশে ছিল না। ফলে বাইরের ভ্যাকসিন বেশি দামে কিনতে হতো। তবে ‘ন্যাসভ্যাক’ নামে একটি ওষুধ তৈরি হয়েছে, যার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং যেটি অত্যন্ত কার্যকরি।
তিনি বলেন, আমাদের বড় সমস্যা হচ্ছে আমাদের ১০ শতাংশ মানুষই জানেন না যে তারা হেপাটাইটিস-বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত। ফলে আমাদের অবশ্যই উচিত প্রতি বছর রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এসব ভাইরাসে আছে কি না তা যাচাই করা।
অধ্যাপক ডা. মামুন-আল-মাহতাব বলেন, ন্যাসভ্যাক কোনো জাদুকরি ওষুধ নয়। কিন্তু এই ওষুধের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। আর লিভারের প্রদাহে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আরোগ্য লাভের হার শতভাগ।
অনুষ্ঠানে শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আলী শিকদার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিপিএম ডা. শ ম গোলাম কায়সার, অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের হেপাটাইটিস ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. প্রদীপ ভৌমিক ও সাধারণ সম্পাদক দিবাকর দেবনাথ প্রমুখ।