খবর৭১ঃ
ঘুষের ৮০ লাখ টাকাসহ গ্রেফতার সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি প্রিজন পার্থ গোপাল বণিকের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। এর আগে তার বিরুদ্ধে ঢাকা জেলা সমন্বিত কার্যালয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ আয় ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। আসামি পক্ষে আইনজীবী ঢাকা বারের সভাপতি গাজী শাহআলম, সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান খান রচি, আব্দুর রহমান হাওলাদার জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল জামিনের বিরোধিতা করেন।
এর আগে দুদকের পরিচালক মুহাম্মদ ইউসুফ ও সহকারী পরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি টিম রোববার বিকালে পার্থ গোপাল বণিকের গ্রিন রোড সংলগ্ন ভূতের গলির বাসায় তল্লাশি চালিয়ে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করে। এর আগে সকালে চট্টগ্রাম কারাগারের দুর্নীতি, ঘুষ ও অবৈধ সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে পার্থ দুদক টিমের কাছে বক্তব্য দিতে সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে হাজির হন।
অবৈধ সম্পদ, ঘুষের টাকা, মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেয়া অর্থ সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে গত বছর অক্টোবরে ঘুষের ৪৭ লাখ টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার চট্টগ্রামের জেলার সোহেল রানার দেয়া কিছু তথ্য সম্পর্কে তার কাছে জানতে চায় দুদক টিম।
সোহেল রানা গ্রেফতারের পর বলেছিলেন, তিনি পার্থ গোপাল বণিককেও ঘুষের বেশ কয়েক লাখ টাকা দিয়েছেন। সেই সূত্র ধরে পার্থর কাছে দুদকের কর্মকর্তারা জানতে চান, আপনি ঘুষের এত টাকা কী করেছেন?
দুদক কর্মকর্তারা সোহেল রানার দেয়া তথ্য ছাড়াও আরও কিছু প্রমাণ সামনে তুলে ধরে তার কাছে জবাব চান। এ সময় পার্থ নিজেকে আড়াল করে বক্তব্য দেয়ার চেষ্টা করেন। জেরার একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন, রাজধানীর গ্রিন রোড সংলগ্ন তার নিজের ফ্ল্যাটে ৫০ লাখ টাকা রেখেছেন।
বাসায় এত টাকা কেন রেখেছেন- এমন প্রশ্নে তিনি অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলেন, এফডিআর করার জন্য রেখেছি। দুদক কর্মকর্তারা জানতে চান- এ টাকার উৎস কী? এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি পার্থ বণিক। তার দেয়া তথ্যানুযায়ী দুদকের ওই অনুসন্ধান টিম তাকে নিয়ে রাজধানীর ২৭/২৮/১, নর্থ গ্রিন রোড (ভূতের গলি) তার ফ্ল্যাটে যায়।
যাওয়ার পর তার ঘরের আলমিরা, তোশক, ওয়ারড্রোবসহ বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি করে লুকানো অবস্থায় ৮০ লাখ টাকা পায়। এই টাকা খুঁজে বের করতে কর্মকর্তাদের এক ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়েছে। টাকা উদ্ধারের পর তা গুনতে লেগেছে আরও এক ঘণ্টা। কিছু টাকা তিনি বালিশের কভারের ভেতরও রেখেছিলেন।
জানা গেছে, দুদক টিম যখন পার্থ বণিককে নিয়ে তার নর্থ রোডের বাসায় যায় তখন তার স্ত্রী রতন মনি সাহা তাদের বাসায় ঢুকতে বাধা দেন। প্রায় দুই ঘণ্টা তিনি দরজা আটকে রাখেন। পরে তারা দরজা ভেঙে ঢুকার কথা জানালে দরজা খুলে দেয়া হয়। এরই মধ্যে পার্থর স্ত্রী বেশ কিছু টাকা বাজারের ব্যাগে ভরে পাশের বিল্ডিংয়ের ছাদে ফেলে দেন।
উদ্ধার হওয়া ৮০ লাখ টাকা জব্দ করার পর প্রতিটি নোটের নম্বর রেজিস্টারে লিখে নেন দুদকের সদস্যরা। এ কারণে রাতে মামলাটি করতে সময় নিতে হয় বলে জানান টিমের একজন সদস্য। মামলায় পার্থ বণিকের সঙ্গে তার স্ত্রী রতন মনি সাহাকেও আসামি করা হতে পারে। কারণ তিনি ওই অবৈধ টাকা লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি টাকাগুলো এখানে-ওখানে লুকিয়ে রেখে দুদকের কাজে অসহযোগিতা করেছেন। তার বাড়িতে কালো রঙের একটি দামি গাড়ি পাওয়া গেছে।
দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে পার্থ বণিক জানিয়েছেন, গাড়িটি তার এক বন্ধুর কাছ থেকে উপহার পেয়েছেন। তিনি ডমইনোর ৭ তলায় ২০০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটে থাকেন। যার বাজারমূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। তিনি এই গাড়ি এবং ফ্ল্যাটের তথ্য তার আয়কর নথিতে উল্লেখ করেননি।