খবর৭১ঃ
হাবিবুর রহমান নাসির, ছাতক প্রতিনিধি ঃ একজন আদর্শ শিক্ষককে এক বাক্যে সংজ্ঞায়িত করা খুবুই কঠিন, তবে সাধারণভাবে আদর্শ শিক্ষক হলো উনিই যাঁকে তাঁর শিক্ষার্থীরা চিরকালের জন্য স্বরণ রাখে। আদর্শ শিক্ষকের তাঁর ছাত্র-ছাত্রীর জীবনের উপর প্রভাব হলো অতি দীর্ঘ। ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে মহিমা তৈরি ও একজন আদর্শ মানুষ হতে তাদের অনুপ্রাণিত করেন।
আমাদের শ্রদ্ধেয় স্বপন কুমার তালুকদার স্যার ঐ রকমই একজন আদর্শ শিক্ষক ছিলেন। একজন সাধারণ শিক্ষক একটি নির্দিষ্ট বৃত্তের মধ্যে চিন্তা করেন কিন্তু স্বপন কুমার তালুকদার স্যার ছিলেন এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি ছিলেন সর্বদা “ Out of the box thinker”.। ক্লাসরুমে আদর্শ শিক্ষকগণ অন্যদের তুলনায় আলাদা থাকেন। শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ, পাঠ্যবইই নয় কিন্তু তার সাথে বাস্তবতার সম্মিলন ঘটিয়ে প্রকৃত জ্ঞান প্রদান করাই হচ্ছে আদর্শ শিক্ষকের কাজ। আমাদের অঞ্চলের অধিকাংশ পিতা-মাতা অসচেতন থাকার কারণে আমাদের স্বপন কুমার তালুকদার স্যার নিজেই তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের অভিবাবকের ভূমিকা পালন করতেন।
তিনি শুধু অভিবাবকই ছিলেন না তিনি ছিলেন তার চেয়েও বেশি, শিক্ষার্থীদের পড়ানোর পাশাপাশি তাদের সাথে তাঁর ছিল এক অন্যরকম সখ্যতা। নিজের জীবন ও পরিবারের চেয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতি তাঁর গুরুত্ব ছিল অসীম। শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রেরণা যোগানোই ছিল তাঁর কাজ শিক্ষা ছাড়া যে সমাজ পরিবর্তন করা যায়না তা ভালোভাবে বুঝে ছিলেন আমাদের স্বপন কুমার তালুকদার স্যার। তাঁর কাছে শিক্ষার্থীরা ছিল শুকনো কাঠের মতো, আর শুকনো কাঠ হচ্ছে আগুন কিন্তু শুকনো কাঠ নিজে নিজে জ¦লেনা কেউ না কেউ তাতে আগুন জ্বালিয়ে দিতে হয়। আর একবার আগুন জ্বালালে তা জ্বলতে থাকে, নেভেনা। আমাদের স্বপন কুমার তালুকদার স্যার শ্রীকৃষ্ণপুরে অসংখ্য শুকনো কাঠে আগুন জ্বালিয়েছেন, তার ছাত্র-ছাত্রীরা জ্বলে ওঠেছে।
স্যার যে আগুন জ্বালিয়েছিলেন তা আজ আলো ছড়াচ্ছে। কারণ শিক্ষার আলোই হচ্ছে পৃথীবির সবচেয়ে শক্তিশালী আলো। স্যার যখন ক্লাস নিতেন, শিক্ষার্থীরা সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনত। শুধু দৃষ্টি আকর্ষণ নয়, মন-মগজ ও আকর্ষণ করার এক অভিনব ক্ষমতা ছিল তার। স্যারের আরেকটি গুণ হচ্ছে, তিনি কোনো সময় রাগ করতেন না। ভালোবাসা দিয়ে জয় করে নিতেন সব ভুল। বাড়ীর পাশে স্কুলটি থাকার সুবাধে প্রায়দিন স্কুলটিতে যাওয়া হতো আমার!সাংবাদিকরা যেকোন প্রতিষ্টানে একটু ঘন ঘন যাওয়া আসা করলে সবারই বিরক্তই আসে,কিন্তু স্যারের কাছে ছিল সেটি উল্টো কোন দিন কোন কারণে বিরক্তই করেন নি বা বুঝা যায়নি একদিন দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম, স্যার আপনি কেন এখানে সবার আগে এসে দাঁড়িয়ে থাক? তিনি বললেন—আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। আমি যদি সবার শেষে আসি আর সবার আগে যাই তাহলে আমার অন্য শিক্ষকেরা কীভাবে নিয়মানুবর্তী হবেন? আর আমার শিক্ষার্থীরা এতে করে শিখতে পারছে যে যার যত বড় চেয়ার তাঁর তত বেশি দায়িত্ব।
বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য যুবকদের নিয়ে তিনি উন্নয়ন কমিটি প্রতিষ্ঠায়ও তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য। এ জন্য তিনি যেমন বাহবা পেয়েছেন এবং হয়ে উঠেছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও সমাজ হিতোষীদের নয়নের মণি। অন্যদিকে এক শ্রেণির মানুষ তাঁকে নিয়েও সমালোচনা করতে দিধা করেননি। সমাজ থেকে গতানুগতিক কুসংস্কার ও সমাজকে একটি নির্দিষ্ট বৃত্তের বাহিরে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি কিছু সমালোচনার স্বীকার হলেও আজ এলাকার মানুষ তাঁকে সত্যিকার অর্থে উপলদ্ধি করতে পেরছে। বর্তমানে স্যার উজিরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন।