খবর৭১ঃ
হাসান রতন, হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার নজিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছে গাছতলায়। ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে স্কুলের ভবন নির্মাণ কাজ বিলম্ব হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। এদিকে শিশুরা পাঠ গ্রহণ করছে খোলা আকাশের নিচে গাছতলায় প্লাস্টিকের বস্তায় বসে। এমন পরিবেশে পাঠদান কার্যক্রম চলায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে অনেক শিশু শিক্ষার্থী।
অনেকে আবার স্কুলে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।জানা যায়, দরপত্রের মাধ্যমে ‘মেসার্স উজ্জ্বল মিয়া’ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ পায়। এক বছর সময়সীমা বেঁধে দিয়ে ২০১৮ সনের এপ্রিল মাসে নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হলেও জুলাই মাসে কাজ শুরু হয়। ঠিকাদার এক বছরে কাজ সম্পন্ন করেছেন মাত্র শতকরা ৫৫ ভাগ। এদিকে শ্রেণিকক্ষের অভাবে গাছতলায় বসে চলছে শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান। স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১৮ জন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের কৃপেন্দ্র দাশের বাড়ির সামনে খোলা আকাশের নিচে প্লাস্টিকের বস্তায় বসে শিশু শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। সরু ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে পাঠদান কার্যক্রম। শিক্ষার্থীরা বলছে, মাঝে মধ্যে গাছের পিঁপড়া ও পাতা পড়ে তাদের গায়ে। রোদ-বৃষ্টি ও সহ্য করতে হয় তাদের। বৃষ্টি হলে ক্লাস বন্ধ থাকে।
আরও পড়ুনঃ আন্দোলনে উত্তাল ঢাবি, উপাচার্যকে ছাত্রলীগের স্মারকলিপি।
শিক্ষক শেফালি আক্তার ও কল্পনা দাশ জানান, খোলা জায়গা। উপকরণ ব্যবহার করা যায় না। মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। পড়াশুনায় মনোযোগও নষ্ট হচ্ছে তাদের।রাম দয়াল দাস নামের এক অভিভাবক বলেন, লেখাপড়ার পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীরা ঠিকমত বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না। এছাড়াও কয়েক শিক্ষার্থী রোদ-বৃষ্টি কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ায় অভিভাবকরা শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। আশ করি কর্তৃপক্ষ দ্রুত ভবন নির্মাণেও কাজ শেষ করে বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনবেন।
প্রধান শিক্ষক পীতাম্বর চন্দ্র জানান, কৃপেন্দ্র দাশের পরিত্যক্ত বাংলা ঘরটি ম্যানিজিং কমিটির সহায়তায় মেরামত করে শ্রেণি কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। ছোট্ট এ ঘরে এক সঙ্গে দুইটি শ্রেণির ক্লাস নেয়া সম্ভব হলেও অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পাঠদান করে বাহিরে বসে। এছাড়া ঝড়-তুফানে বাংলা ঘরের বেড়া উড়ে গেছে। এ অস্বস্তিকর পরিবেশের কারণে শিক্ষার্থীদের মাঝে মানসম্মত শিক্ষা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
স্কুল কমিটির সদস্য রবীন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, নির্মাণ কাজে ঠিকাদারের গাফিলতি রয়েছে। সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও কাজ শেষ করছে না। মাঝে মাঝে ৩-৪ জন শ্রমিক দ্বারা কাজ করায়। ছাদ ঢালাইয়ের পর এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী আল নূর তারেক বলেন, স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখে তিন মাস দেরিতে কাজ শুরু হয়। ঠিকাদার আরও তিন মাস সময় চেয়েছে। স্কুল কমিটি পাঠদানে বিকল্প ব্যবস্থা চালু করলে কিছুটা টাকা-পয়সা লাগলে দেয়া যাবে।