খবর৭১ঃ আগামী ১ আগস্ট থেকে রেলওয়ের সব ধরনের জ্বালানি তেল ও লুব্রিকেন্ট সরবরাহ বন্ধ করে দিচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন তিন তেল কোম্পানি। বারবার বলার পরও চুক্তি অনুযায়ী বকেয়া পরিশোধ না করা, চুক্তির শর্তাবলি ভঙ্গ করা এবং কোম্পানিগুলোতে তারল্য সংকট দেখা দেওয়ায় তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেলওয়ের কাছে পাওনা টাকা চেয়ে বারবার বলার পরও চুক্তি অনুযায়ী বকেয়া পরিশোধ করছে না। চুক্তির শর্তাবলি ভঙ্গ করা এবং কোম্পানিগুলোতে তারল্য সংকট দেখা দেওয়ায় তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রেলওয়ের কাছে জ্বালানি তেল বাবদ পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার ২১০ কোটি টাকার বেশি বকেয়া রয়েছে। গত ৯ জুলাই কোম্পানি তিনটি থেকে রেলওয়ের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো পৃথক পৃথক চিঠিতে আগস্টের ১ তারিখ থেকে জ্বালানি তেল বন্ধ করার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
তিন কোম্পানির পক্ষ থেকে পাঠানো পৃথক পৃথক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, রেলওয়ের উভয় জোনের (পূর্ব ও পশ্চিম) কাছে দীর্ঘদিন বিপুল পরিমাণ পাওনা অনাদায়ী রয়েছে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে অনাদায়ী অর্থ পরিশোধের বিষয়ে সহযোগিতা চাওয়া হলে রেলওয়ের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
জ্বালানি তেলের মুল্য বাবদ প্রাপ্য অর্থ পরিশোধের অনুরোধ করে চিঠিগুলোতে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রাপ্য বকেয়া অর্থ পরিশোধ করা না হলে আগামী ১ আগস্ট থেকে রেলওয়েতে বাকিতে আর জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হবে না। অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করলেই কেবল জ্বালানি সরবরাহ করা হবে। এছাড়া বকেয়া অর্থের ওপর চুক্তিনামার অনুচ্ছেদ ১১ (বি) অনুযায়ী সুদ আরোপ করা হবে।
মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর ছাইফুল্লাহ-আল-খালেদ বলেন, ‘রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিম জোন মিলে আমার কোম্পানি পাবে ৭৮ কোটি টাকার বেশি। বকেয়া পরিশোধে বারবার তাগাদা দিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না। বিপুল পরিমাণে টাকা বকেয়া থাকার কারণে আমাদের তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। যে কারণে আমরা ১ আগস্ট থেকে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের মার্কেটিং বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আইয়ুব হোসেন জানান, তেল সরবরাহ আদৌ বন্ধ করা হবে কিনা এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তবে বকেয়া টাকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে তেল সরবরাহ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় ৮৫ কোটি টাকার মতো টাকা পাব। আমাদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেবেন যে তেল সরবরাহ বন্ধ করা হবে কিনা। রেলে দীর্ঘ দিন ধরে যে টাকা পরে আছে, সেটা না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের পক্ষ থেকে তেল সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।‘
‘আমরা বাংলাদেশ ট্রেড পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের থেকে নগদ টাকা পণ্য কিনছি। মাসের পর মাস, বছরের পর পরে থাকছে, ব্যাংকের সুদ বাড়ছে, সেটা কে দিচ্ছে?’
দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ের কাছে টাকা পড়ে থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানটি তারল্য সংকটে ভুগছে বলেও তিনি জানান। বলেন, ‘ব্যাংকে টাকা রাখলে প্রতিদিন হিসেবে সুদ পাওয়া যায়’ সে হিসেবে রেলওয়ের বকেয়া টাকার উপরেও সুদ আরোপ করছে যমুনা ওয়েল কোম্পানি।
বকেয়া টাকা না দিলেও, যমুনা ওয়েল কোম্পানির পণ্য পরিবহণের খরচ নগদ নিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বলেন, ‘আমাদের যে জিনিসগুলো তারা বহন করছে, আমরা সেটার টাকা তাদের দিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু তারা আমাদের বকেয়া টাকাটা দিচ্ছে না।‘
তবে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান জানান, বেশ কয়েকটি নতুন ট্রেন সেবা চালু হয়েছে। যে কারণে জ্বালানি তেলের চাহিদাও বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘এ জন্য সরকারের কাছে আরও ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছি। এই বরাদ্দ পেলেই বকেয়া পরিশোধ করা হবে। বিষয়টি নিয়ে জ্বালানি তেল সরবরাহকারী রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে।’