উচ্চ হারে কর জালে বন্দি হচ্ছে মুঠোফোন ব্যবহারকারী

0
768
উচ্চ হারে কর জালে বন্দি হচ্ছে মুঠোফোন ব্যবহারকারী

খবর৭১ঃ

নতুন বাজেট প্রতি পদে পদে উচ্চ হারে কর নিয়ে হাজির হয়েছে মুঠোফোন ব্যবহারকারীদের সামনে। সিম কেনা, কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহার, সিম হারিয়ে গেলে পরিবর্তন, অপারেটর বদলানো—সব ক্ষেত্রেই উচ্চ হারে কর দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কিন্তু সেবার মান উন্নত হচ্ছে না, বরং অবনতির অভিযোগ প্রবল।

নতুন করকাঠামোয় মুঠোফোনে কথা বলার জন্য ১০০ টাকা রিচার্জ করলে ২২ টাকার মতো যাবে সরকারের ঘরে। ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ১০০ টাকার মধ্যে মোট কর সাড়ে ১৬ টাকা। সিম কেনায় কর ২০০ টাকা। হারিয়ে গেলে সেটা পরিবর্তনেও কর ২০০ টাকা। নতুন করে বাড়ল মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটির (এমএনপি) মাধ্যমে অপারেটর বদলের ব্যয়। অপারেটররা বলছে, ৫৮ টাকা থেকে বেড়ে এ ব্যয় ২৫৮ টাকা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ১৩ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন। ওই দিন থেকেই মুঠোফোন ব্যবহারে ব্যয় বেড়ে যায় সাধারণ মানুষের। জানতে চাইলে টেলিযোগাযোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার জ্যেষ্ঠ পলিসি ফেলো আবু সাঈদ খান বলেন, টেলিযোগাযোগ খাতের ওপর সহজে কর আরোপ ও আদায় করা যায়। এ কারণে এ খাতে কর বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু আনুপাতিক হারে সেবার মান বাড়ছে না। অবকাঠামোতে বিনিয়োগ কম হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘উচ্চ হারে কর দিয়ে আমরা নিম্নমানের সেবা পাচ্ছি। এ ধরনের কর আরোপের ফলে বেশি চাপে পড়ে নিম্ন আয়ের মানুষ। এ নিয়ে লার্ন এশিয়ার গবেষণাও আছে।’

বাজেটে কত বাড়লঃ


নতুন বাজেটে কর বেড়েছে সব ক্ষেত্রেই। সিম কেনায় ১০০ টাকার কর বেড়ে ২০০ টাকা হয়েছে। এনবিআর যেহেতু পুরোনো সিম বদলানোর ক্ষেত্রেও কর নেয়, সেহেতু ২০০ টাকা আরোপ হবে সেখানেও। মুঠোফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ফলে কথা বলার ক্ষেত্রে মোট কর দাঁড়াল ২৭ শতাংশ। ইন্টারনেট ব্যবহারে ভ্যাট কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছিল। তাতে সুফল তেমন একটা পাননি গ্রাহকেরা।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আহমেদ ফয়সাল বলেন, বাজেটের পরই ৪৮ টাকায় তিন দিন মেয়াদে দুই গিগাবাইটের একটি প্যাকেজের দাম ৫৪ টাকা করেছে গ্রামীণফোন। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারে মাসে ৬০ টাকা ব্যয় বেড়ে গেল।

এমএনপি সেবা চালু হয় গত বছরের অক্টোবরে। তখন অপারেটর বদলে মোট ব্যয় ছিল ১৫৮ টাকা, যার ১০৮ টাকা ছিল কর। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) চেষ্টা করে এটি কমিয়ে ৫৮ টাকায় নামিয়ে আনে। অপারেটররা জানিয়েছে, নতুন বাজেটের পর তা বেড়ে ২৫৮ টাকা হয়েছে। এর মধ্যে সিম কর দাঁড়িয়েছে ২০০ টাকা এবং মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) সাড়ে ৭ টাকা। এ ছাড়া বাজেটে মোবাইল অপারেটরগুলোর মোট আয়ের ওপর ন্যূনতম কর শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে।

উচ্চ হারে কর জালে বন্দি হচ্ছে মুঠোফোন ব্যবহারকারী
সূত্রঃ প্রথম আলো

বাজেটে স্মার্টফোন আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। ফলে এ ক্ষেত্রে মোট শুল্ককর দাঁড়ায় ৫৭ শতাংশ। এতে বিদেশি মুঠোফোন আরও খরুচে হলো। অবশ্য এ ক্ষেত্রে দেশীয় শিল্প সুরক্ষার যুক্তি তুলে ধরে এনবিআর।

এদিকে অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব এস এম ফরহাদ বলেন, ‘যত সময় যাচ্ছে, ততই গ্রাহক ও অপারেটরের ওপর কর বাড়ছে। এটা ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরির পথে বাধা।’

সর্বশেষঃ


এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, বাজেটে টেলিযোগাযোগ খাতের ওপর নতুন করে যেসব কর আরোপ করা হয়েছে, তা এ খাতের জন্য কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার মতো একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছে। নতুন করহার গ্রাহকদের ক্রয়ক্ষমতা সীমিত করার পাশাপাশি এ খাতের প্রবৃদ্ধি আটকে দেবে।

অন্যদিকে বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ সময় ধরে সিম করের অর্থ ভর্তুকি দিয়ে আসছিলাম। কিন্তু করের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আমাদের পক্ষে সম্পূর্ণ অর্থ ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব হবে না।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here