খবর৭১ঃ
ক্রিকেট তীর্থ লর্ডসে আজ স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের স্বপ্নের ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামছে ২০১৯ বিশ্বকাপের। এর আগে তিনবার ফাইনালে হারা ইংল্যান্ড বিষাদের করুণ সুর আর শুনতে চায় না। লর্ডসেই লর্ড হয়ে চিরকালের আক্ষেপ ঘোচাতে উন্মুখ ক্রিকেটের জনকরা।
উপমহাদেশের কোনো দল ফাইনালে উঠতে না পারায় টিকিটের চাহিদা এখন অনেকটাই কমে গেছে। কোহলিরা ফাইনালে খেলবেন ভেবে ভারতের সমর্থকরা নাকি ৭০ ভাগ টিকিট আগেই কেটে রেখেছিলেন। তারাই এখন কালোবাজারে ইংল্যান্ডের সমর্থকদের কাছে টিকিট বিক্রি করছে। তবু ফাইনাল বলে কথা। গ্যালারিতে যে আজ আকাশি-নীল ঢেউ উঠবে সেটা ভালোই টের পাচ্ছে নিউজিল্যান্ড।
কৈশোরে এমন এক গ্রীষ্মের ছুটিতে লর্ডসের এমসিসি গ্রাউন্ড স্টাফ হিসেবে কাজ করেছিলেন গ্যারি স্টিড। ক্রিকেট তীর্থে জানালা পরিষ্কার করা ও স্কোরকার্ড বিক্রির পাশাপাশি বিখ্যাত ক্রিকেটারদের কাছ থেকে দেখে নিজেও বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন স্টিড। আজ এত বছর পর সেই লর্ডসেই ট্রফি হাতে বিজয় মঞ্চে দাঁড়ানোর সুযোগ তার সামনে।
এ নিয়ে আলাদা রোমাঞ্চ ছুঁয়ে যাচ্ছে কিউই কোচকে। যে জানালা একদিন নিজের হাতে পরিষ্কার করেছেন, সেগুলোই আজ তার শিষ্যরা ছক্কা বৃষ্টিতে ভেঙে ফেলবে আর সেটা দেখে স্মৃতিকাতর হবেন স্টিড, এমন কতশত ভাবনা। ফাইনাল নিয়ে স্টিড বলেন, ‘আর তো মাত্র একটি ম্যাচ। আমাদের জেতার সম্ভাবনা ৫০ ভাগ। অনেকেই ভাবছেন, এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডের যা ফর্ম, তাতে তারাই ফেভারিট। কিন্তু ফাইনালে যখন উঠেছি, তখন জেতার জন্যই ঝাঁপাব।’
দু’দলেরই নামের পাশে এতদিন চিরদুঃখী ট্যাগ লেগে ছিল। কেউই আগে বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। এবার অন্তত একটি দলের সেই আক্ষেপ ঘুচবে। এর আগে তিনবার ১৯৭৯, ১৯৮৭ এবং ১৯৯২ আসরের ফাইনালে উঠেও ট্রফি ছোঁয়া হয়নি ইংল্যান্ডের। আর নিউজিল্যান্ড গতবার অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে সুযোগ হারিয়েছে।
এবার চেনা মাঠ, চেনা কন্ডিশন, দর্শক সমর্থন- সবই ইংলিশদের অনুকূলে। মরগ্যান যেখানে আগ্রাসী মন্ত্রে দীক্ষিত, সেখানে উইলিয়ামসনের ঠাণ্ডামাথার নেতৃত্ব এই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা বিজ্ঞাপন। বাজির দরে তাই মরগ্যানরা যতই এগিয়ে থাকুক না কেন, বড় মঞ্চে বড় কিছুরই স্বপ্ন দেখছে কিউইরা।
২০১৫ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মার্টিন গাপটিলের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে টুর্নামেন্টই শেষ হতে যাচ্ছে। তবু ফাইনালে সেই গাপটিলেই আস্থা রাখছে নিউজিল্যান্ড। সঙ্গে চোখ থাকবে অধিনায়ক উইলিয়ামসন ও রস টেলরের দিকে। যদিও বোলিংই নিউজিল্যান্ডের মূল শক্তি।
এবারের আসরে সবচেয়ে বেশি রান ভারতের রোহিত শর্মার, সবচেয়ে বেশি উইকেট অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্কের। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে আবার এগিয়ে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। আসরের সেরা তিন পারফরমারের কারও দলই ফাইনালের টিকিট পায়নি। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই ফেভারিট বলা হচ্ছে ইংল্যান্ডকে। নিউজিল্যান্ড সেখানে ছিল সর্বোচ্চ কালো ঘোড়া। দু’দলের সাম্প্রতিক মুখোমুখি লড়াইয়েও অনেক এগিয়ে ইংলিশরা।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ নয় ম্যাচের সাতটিতেই জিতেছে ইংল্যান্ড। এর মধ্যে এ বিশ্বকাপের লিগ পর্বে ১১৯ রানের দাপুটে জয়ের স্মৃতিও আছে। ফাইনালের আগে তাই আত্মবিশ্বাসে ফুটছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক মরগ্যান, ‘এখনও ইংল্যান্ড এই ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরতে পারেনি। এটাই আমাদের সেরা সুযোগ। ছেলেরা সবাই সেটা জানে।
সেভাবেই ফাইনালে নামতে চায় সবাই। নিজেদের খেলাটা খেলতে পারলেই আমাদের ট্রফি জয়ের সম্ভাবনা বেশি থাকবে।’ গত পাঁচ বছর ইংল্যান্ডের রান মেশিন হয়ে উঠেছেন জো রুট। চলতি আসরে ১০ ইনিংসে তার রান ৫৪৯। সঙ্গে জফরা আর্চারের নেতৃত্বে ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণও বেশ ভীতিজাগানিয়া।
পুরো বিশ্বকাপে বৃষ্টি বারবার বাগড়া দিলেও ফাইনালে সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ। বিকেলে শুধু হালকা বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ইংল্যান্ডের উইকেটে পরে ব্যাট করে কেউ চাপে পড়তে চায় না। আশা করা হচ্ছে ফাইনালের উইকেট হবে ব্যাটিং সহায়ক। তাই টস জিতলে দুই অধিনায়কই আগে ব্যাটিংয়ে নামতে চাইবেন।