মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর :
সৈয়দপুর অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের প্রথম পর্যায়ের ফিল্ড বুক তৈরী শেষ হয়েছে। শিগগির অধিগ্রহণ করা ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ জন্য নীলফামারী জেলা প্রশাসন,, সিভিল এভিয়েশন,সৈয়দপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও বন বিভাগের সমন্বিত সভা অনুষ্ঠানের পর অর্থ প্রদান প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে। ফিল্ড বুক তৈরীর জরিপের সঙ্গে জড়িত সৈয়দপুর উপজেলা ভূমি দপ্তর সূত্রে এ তথ্য মিলেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৮ এপ্রিল শুরু হয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নীতকরণ প্রকল্পের চিহ্নিত সীমানায় জমি ও স্থাপনা জরিপের কাজ। নীলফামারী জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা (এলএ) জরিপ কাজ শুরু করে। মাঠ পর্যায়ে জরিপ তদারকি করেন নীলফামারীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শাহীনুর আলম, সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম গোলাম কিবরিয়া ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) পরিমল কুমার সরকার। এ কাজ সার্ভেয়ারদের তিনটি দল একটানা জরিপের মাধ্যমের শেষ করেন ফিল্ড বুক তৈরীর কাজ।
সূত্র মতে, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নীতকরণ প্রকল্পের জন্য নতুন করে ৯১২ দশমিক ৯০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এসব জমির মধ্যে সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়ন এবং পার্বতীপুর উপজেলার বেলাইচন্ডী ইউনিয়নভূক্ত জমি রয়েছে। এর মধ্যে সৈয়দপুর অংশে ৫৯৫ দশমিক ১৩ একর জমি। এ জমির মধ্যে সরকারি তিনটি সংস্থার জমি রয়েছে ৬০ একর। অপরদিক পার্বতীপুর অংশে ৩১৭ দশমিক ৭৭ একর ব্যক্তি মালিকানার জমি রয়েছে।
সূত্র মতে, বর্তমান বিমানবন্দরটি রানওয়েসহ অন্যান্য অবকাঠামো ১৩৬ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। এর সঙ্গে আরও ৯১২ দশমিক ৯০ একর জমি যুক্ত করে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মিত হবে। সব মিলিয়ে ১ হাজার ৪৮ একর জমির উপর গড়ে উঠবে এ বিমানবন্দর। এর জন্য যাত্রী টার্মিনাল, অন্যান্য অবকাঠামোসহ ১২ হাজার ফুট দৈর্ঘ্যের রানওয়ে নতুন করে নির্মাণ করা হবে। এ বিমানবন্দরে থাকবে আন্তর্জাতিক মানের যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সুবিধা।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পরিমল কুমার জানান, জমি অধিগ্রহণের চিহ্নিত সীমানায় ফিল্ড বুক তৈরীর জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। জরিপে জমির মালিকানা, স্থাপনার ধরণ ও বনজ সম্পদের তথ্য নিরুপণ করা হয়েছে। এখন ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় জেলা প্রশাসন, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও বন বিভাগের আন্তঃবৈঠক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ক্ষতিপূরণের মূল্য প্রদানের বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে। এর জন্য প্রশাসনিক পর্যায়ে কাজ চলছে। তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নীতকরণ প্রকল্প সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত। সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ নেপাল, ভুটান ও চীনের সঙ্গে উত্তর জনপদে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সৈয়দপুর অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করা হচ্ছে। এ বিমানবন্দরকে প্রতিবেশী দেশগুলোর উড়োজাহাজের অবতরণ ও উড্ডয়নের আঞ্চলিক হাব হিসাবে গড়ে তোলা হবে। ২০১৭ সালে দশম জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বেসামরিক বিমান মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে প্রকল্পের জমি অধিগ্রণে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ পরিশোধে ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নসহ ভারত সরকারের তৃতীয় ঋণ চুক্তির অর্থে। আগামী ২০২০ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যস্থির করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম গোলাম কিবরিয়ার সাথে কথা বললে তিনি জানান, ইতিমধ্যে ফিল্ড বুক তৈরীর কাজ শেষ হয়েছে। যা ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। চলতি মাসেই জমি মালিকদের ৭ ধারা নোটিশ দেয়া হবে। এর পরেই ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।