খবর৭১ঃ
নীতিনির্ধারকরা কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করছেন। এ মুহূর্তে তৃণমূলের পাশে দাঁড়িয়ে প্রত্যাশা ও সাহস জোগানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
আট বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড।
বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গাভাব লক্ষ্য করা গেছে। সমাবেশ সফল করতে মহানগর ও জেলা নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও তারা বসছেন।
আগামী দিনে করণীয় সম্পর্কেও তাদের গাইডলাইন দেয়া জরুরি। ফলে নির্বাচনের পর ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হবে। এর ওপর ভিত্তি করে আগামী দিনে আন্দোলন-সংগ্রামসহ সার্বিক কর্মকাণ্ডেও গতি আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কমিটি পুনর্গঠনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে বিএনপির তৃণমূল চাঙ্গাও করা হচ্ছে। মনোবল ফিরিয়ে এনে নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি আট বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, যোগ্য ও ত্যাগীদের বাদ দিয়ে অযোগ্য ও সুবিধাবাদীদের নেতৃত্বে আনা হচ্ছে। এতে দল সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হবে না। উল্টো যারা মামলা-হামলা সহ্য করে রাজনীতি করছেন, তারা নিরুৎসাহিত হবেন। ক্ষোভে-অভিমানে অনেকে রাজনীতি থেকে ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে একধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে। আমাদের এখন মূল কাজই হচ্ছে হতাশাগ্রস্ত নেতাকর্মীদের জাগিয়ে তোলা। তাদের স্বপ্ন দেখানো।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে আমরা জেলাগুলোর কমিটি আপডেট করছি। যারা যোগ্য ও ত্যাগী এবং আন্দোলন-সংগ্রামে যারা রাজপথে ছিলেন, তাদেরই নেতৃত্বে আনা হচ্ছে। এতে তৃণমূলে প্রাণ ফিরে আসবে বলে তিনি আশা করেন।
নানা কারণে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে। সেই অবস্থা থেকে উত্তরণে বারবার পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মাঠের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন নেতাকর্মীরা।
নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর তৃণমূলের লাখ লাখ নেতাকর্মীকে উজ্জীবিত করতে কোনো গাইডলাইন বা দিকনির্দেশনা ও মনিটরিং ছিল না। ফলে হতাশ হয়ে পড়েন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
এমন পরিস্থিতিতে দলটিতে ফের পুনর্গঠন শুরু হয়েছে। এ বছরের শেষ নাগাদ জাতীয় কাউন্সিল করার টার্গেট নিয়ে এ প্রক্রিয়ায় হাত দিয়েছে দলটি। দ্রুত সময়ের মধ্যে পুনর্গঠন কাজ শেষ করা হবে।
৮১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ইতিমধ্যে ৩৩টি জেলার নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কয়েকদিনে নাটোর, রাজশাহী, পাবনা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুরসহ কয়েকটি জেলার আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে।
বাকি ৪৮টি সাংগঠনিক জেলার কাজ দ্রুত সময়ে শেষ করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। বেশ কয়েকটি জেলার নতুন কমিটি গঠনের কাজ প্রায় শেষ। শিগগিরই তা ঘোষণা করা হবে। জেলা কমিটিগুলোকে দ্রুত উপজেলা ও পৌর কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রের এমন নির্দেশনা পেয়ে জেলা নেতারাও কাজ শুরু করেছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে আট বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। পবিত্র ঈদুল আজহার আগেই এ কর্মসূচি শেষ করা হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এসব সমাবেশ হলেও এর মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে চান নীতিনির্ধারকরা।
জানতে চাইলে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও শিল্পপতি সোহরাবউদ্দিন বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর তৃণমূলে এক প্রকার হতাশা সৃষ্টি হয়। এ হতাশা দূর করতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যারা রাজপথে ছিলেন, বিশেষ করে ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক নেতাদের খুঁজে বের করে সংগঠনের দায়িত্ব দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
গাজীপুর মহানগরের প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডের কমিটিগুলোর কাজ পুরোদমে শুরু করেছি। নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা চাঙ্গাভাব তৈরি হয়েছে। সারা দেশে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে শেষ করা সম্ভব হলে দল দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করি।
বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, আহ্বায়ক কমিটি দেয়ার পর আমরা যেভাবে কর্মকাণ্ড করছি, তাতে তৃণমূল নেতাকর্মীরা দারুণ উজ্জীবিত। মনে হয়, ১০ বছর ধরে নেতাকর্মীরা জিম্মি ছিল। আশা করি, তিন মাসের মধ্যে থানা, ইউনিয়ন, পৌরসভাসহ তৃণমূলের সব কমিটি ভালোভাবে দিতে পারব। যেখানে ত্যাগী ও পরীক্ষিতরা থাকবেন।
রাজশাহী জেলার আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, আমরা কর্মকাণ্ড ইতিমধ্যে শুরু করেছি। নেতাকর্মী ব্যাপক উজ্জীবিত। আশা করছি তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী দল গোছাতে পারব।
টাঙ্গাইল জেলা বিএনপিকে হঠাৎ উত্তর-দক্ষিণ দুটি সাংগঠনিক অংশে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি।
দলের কোন্দল নিরসনে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, এতে দলের কোন্দল আরও বাড়বে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু যুগান্তরকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, এবার পার্টিতে পুরোপুরি গণতন্ত্র থাকতে হবে।
তৃণমূল পর্যায় থেকে নেতাকর্মীদের ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে। নিজ যোগ্যতায় নেতৃত্বে আসতে হবে। কাউকে অনুকম্পা বা দয়া করা যাবে না। আমরা বিশ্বাস করি এ প্রক্রিয়াটিই সঠিক।