এ সপ্তাহেই বসবে পদ্মা সেতুর শেষ পাইলটি

0
734
১৪ জুলাইয়ের মধ্যে বসে যেতে পারে সেতুর সর্বশেষ ২৯৪ নম্বর পাইল

খবর৭১ঃ

আবহাওয়া ঠিক থাকলে ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে বসে যেতে পারে সেতুর সর্বশেষ ২৯৪ নম্বর পাইল। এর মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে পদ্মা সেতুর পাইল বসানোর কাজ। সেতু কর্তৃপক্ষের আশা, এ বছর পদ্মা সেতুর ২৯৪টি পাইলের ওপর ৪২টি পিয়ারের সব কটিই তৈরি হয়ে যাবে।

নদীর গভীর তলদেশে নরম মাটির স্তর। কিন্তু পাইল বসাতে গিয়েই দেখা দেয় বিপত্তি। তাই পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরুর পরপরই মুন্সিগঞ্জের মাওয়া থেকে সরানো হয় শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে। এরপর ধীরগতিতে পদ্মা সেতুর কাজ চলতে থাকলেও প্রায় অর্ধেকের বেশি পিয়ারের (খুঁটি) নকশা চূড়ান্ত করা যাচ্ছিল না। গত বছরের শেষ দিকে নকশা পুনর্বিন্যাস করার পর দ্রুতগতিতে প্রমত্তা পদ্মার বুকে বসতে থেকে একের পর এক পাইল।

সোমবার পদ্মা সেতু প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, পাইলগুলো বসানোর কাজ শেষ হলে এ বছরের মধ্যে চেষ্টা করা হবে সব কটি পিয়ারের নির্মাণকাজ শেষ করতে। একই সঙ্গে স্প্যান বসানোর কাজও চলবে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নতুন নকশা চূড়ান্ত করার পর মূল সেতুর নির্মাতা চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে পাইল বসানোর কাজ শেষ করতে চলতি বছরের ৩১ জুলাইয়ের পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। নকশা রি-ডিজাইনের পর এবারই প্রথম নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই সপ্তাহ আগে পাইল বসানোর কাজ সম্পন্ন হবে। নকশা জটিলতার কারণে এর আগে পদ্মা সেতু কোনো কাজই সময়মতো সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এ সপ্তাহের মধ্যে ২৬ ও ২৭ নম্বর পিয়ারের সপ্তম পাইল বসানোর কাজ শেষ হবে।

২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মাওয়া থেকে শুরু হয় পদ্মার সেতুর নির্মাণকাজ। কাজের শুরুতেই নদীর তলদেশের গভীরে পাওয়া যায় নরম মাটির স্তর। তাই হ্যামার দিয়ে পাইল বসাতে গিয়ে ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৫ নম্বর পিয়ারের কাজে সমস্যা দেখা যায়। এ কারণে ১৪টি পিয়ারের নকশা চূড়ান্ত করা যাচ্ছিল না। সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করে ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাউই (সিওডব্লিউআই) ইউকে লিমিটেড। কাউই ইউকের বিশেষজ্ঞরা মাটি পরীক্ষার প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন তথ্য যাচাই করেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয় আরও কয়েকটি বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ দলের কয়েক দফা বৈঠক হয়।

কাদামাটির পরই শক্ত মাটি না পাওয়ায় পদ্মা সেতুর ২২টি পিয়ারে একটি করে পাইলের সংখ্যা বাড়ানো হয়। এসব খুঁটিতে ছয়টি পাইল অন্যান্য পিয়ারের মতোই রেকিং বা কিছুটা বাঁকা করে বসানো হবে। এই ছয়টি পাইলের মধ্যে ৭ নম্বর পাইল ভার্টিক্যাল বা সরাসরি সোজাভাবে বসানো হয়।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের বেশ কয়েকজন প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৪২টি পিয়ারের ওপর ৪১টি স্প্যানে গড়ে উঠবে পুরো পদ্মা সেতু। মূল নদীতে ৪০টি পিয়ার। নির্মাণকাজের শুরুতে মূল নদীর প্রতিটি পিয়ারে পাইলের সংখ্যা ছিল ছয়। আর দুই প্রান্তে ১ ও ৪২ নম্বর পিয়ারে ১২টি করে মোট ২৪টি পাইল। সব মিলিয়ে ৪২টি পিয়ারে পাইল ছিল ২৬৪টি। কিন্তু নদীর গভীর তলদেশে কাদামাটির স্তর থাকায় নতুন নকশা করতে হয়। নতুন এই নকশায় ১ ও ৪২ নম্বর পিয়ারের ১৬টি করে মোট ৩২টি পাইল করা হয়। আর ২২টি পিয়ারে সাতটি করে পাইল ১৫৪টি এবং ১৮টি পিয়ারে ছয়টি করে মোট ১০৮টি পাইল রাখা হয়। সব মিলিয়ে ২৯৪টি পাইলে ৪২টি পিয়ার থাকবে পদ্মা সেতু। ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ১৪টি স্প্যান বসানোর পর পদ্মা সেতুর ২ হাজার ১০০ মিটার এখন দৃশ্যমান।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, মূল বা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল সেতুর পাইল ডাইভিং। এটি সম্পন্ন হয়েছে। এখন তো প্রকল্পের কাজ দ্রুত চলছে। জাজিরায় অনেক স্প্যান বসে গেছে। মাওয়ার কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে দূরত্ব কমে এসেছে। তাই কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে দু–এক দিনের মধ্যেই একটি করে স্প্যান পিয়ারের ওপর বসানো সম্ভব। ১৩টি পিয়ার নির্মাণকাজ শেষ হলে আশা করা যায় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন করতে পারবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here