মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর থেকেঃ খবর৭১
সৈয়দপুরে ট্রাফিক আইন মেনে চলাসহ সচেতনতা সৃষ্টি করতে অটোরিক্সা চালকদের ট্রাফিক আইন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হলেও কাজের কাজ হয়নি। তাদের বেশিরভাগ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই আগের মতই সড়কে বেপরোয়া হয়ে অটোরিক্সা চালাচ্ছেন। যদিও অটোরিক্সা চালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটি সৈয়দপুর উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ কর্মশালার সিদ্ধান্ত মানতে অটোরিক্সা চালকদের সচেতন হতে উদ্যোগ নিলেও ফল মিলছে না। তবে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ট্রাফিক আইন মানতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে অটো চালকদের। তারা এসব নির্দেশনা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র জানায়, সৈয়দপুর ইউনাইটেড ভলেন্টিয়ার্স এসোসিয়েশন (সুভা)’র উদ্যোগে সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসন গত ২২ জুন অটোরিক্সা চালকদের মাঝে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে। সৈয়দপুর পৌরসভা ও নীলফামারী জেলা ট্রাফিক বিভাগের সহযোগিতায় কর্মশালাটি হয় উপজেলা পরিষদের হলরুমে। দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সৈয়দপুরের বিভিন্ন রুটের প্রায় ৩০০ অটোরিক্সা চালক অংশ নেন। এতে ট্রাফিক আইন মেনে চলা ও সচেতনতা সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য বলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম গোলাম কিবরিয়া, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পরিমল কুমার সরকার, পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. জিয়াউল হক জিয়া ও মো. শাহীন আক্তার শাহীন, ট্রাফিক বিভাগের শহর ও যানবাহন উপ-পরিদর্শক মো. রাশেদুল ইসলাম ও মো. আশরাফ কোরায়শী প্রমুখ। প্রশিক্ষণে অটোচালকদের ট্রাফিক আইন বিষয়ে সব ধরণের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। কর্মশালায় ট্রাফিক আইন মেনে অটোরিক্সা চালনার জন্য চালকদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়।
সূত্র মতে, এসব নির্দেশনার মধ্যে ছিল ট্রাফিক মেনে চলা, নির্ধারিত স্থানে অটো থামানো এবং যাত্রী ওঠা নামা করা, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের হাতে অটোরিক্সা না দেয়া, স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালানো, যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য ও দুর্ঘটনা এড়াতে অটোরিক্সার ডান দিকে লক সিস্টেম চালু করা, নির্দিষ্ট রুটে গাড়ি চালানো ও বিভিন্ন রুটের ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন করা। ওই প্রশিক্ষণে অটোরিক্সা চালকরা এসব মেনে চলার অঙ্গীকার করলেও বেশির ভাগ চালক এ নির্দেশ কার্যকর করছে না। আগের মতই বেপরোয়াভাবে অটোরিক্সা চালাচ্ছে তারা। ট্রাফিক আইন না মেনে যত্রতত্র সড়কের ওপরে যাত্রী ওঠানামা করছে তারা। এছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্কদেরও অটোরিক্সা চালাতে দেখা গেছে।
শহরের সচেতন মহল ও একাধিক সূত্রের অভিযোগ, সৈয়দপুরে যানজটের অন্যতম কারণ অটোরিক্সা। এসব বাহনের চালকরা ট্রাফিক আইন না মেনে সড়কের যেখানে সেখানে স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছে। ফলে এ শহরে যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক মোড় (তাজির হোটেলের সামনে), শেরে বাংলা সড়ক (তামান্না সিনেমা হল এলাকা), ট্রাফিক বক্সের সামনে, বিমানবন্দর সড়ক, শহীদ তুলশীরাম সড়ক, শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়ক, বিজলী সিনেমা মোড় থেকে শুরু করে থানা মোড় পর্যন্ত অটোরিক্সার স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। এসব সড়কে অটোরিক্সার কারণে অন্যান্য যানবাহনসহ পথচারীদের চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়েছে। অথচ প্রশিক্ষণে বলা হয়েছিল যেখানে সেখানে গাড়ি দাঁড় করানো এবং যাত্রী ওঠানামা করা যাবে না।
এ ব্যাপারে কয়েকজন অটোরিক্সা চালকের সাথে কথা হলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২/১ জন চালক নিয়ম মানলে চলবে না, ট্রাফিক আইন সবাইকে মানতে হবে। কিন্তু যাত্রী ওঠানামার প্রতিযোগিতায় সবাই মেতে ওঠায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির সৈয়দপুর উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দের সাথে কথা হলে তারা বলেন, প্রশিক্ষণ কর্মশালার পর অটো চালকরা যাতে ট্রাফিক আইন মেনে চলে সেজন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এজন্য বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে মাইক প্রচারও করা হয়েছে। এসব নির্দেশনা মানতে একটি শাখা সংগঠন অটোচালকদের মাঝে পরিচয়পত্র, এ্যাপ্রোন (পোশাক) সহ ভাড়ার তালিকা প্রদান শুরু করেছে। এছাড়া দুর্ঘটনা রোধে অটোরিক্সার ডান পাশে নিরাপত্তা লক লাগানো শুরু করেছে। এরপরেও যদি অটো চালকরা সংগঠনের নির্দেশনা না মানলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে।
জানতে চাইলে, নীলফামারী জেলা ট্রাফিক বিভাগের শহর ও যানবাহন পরিদর্শক মো. আবু নাহিদ পারভেজ চৌধুরী বলেন, শহরের যানজট পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক বিভাগের প্রতিটি সদস্য সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। অটোবাইক এবং ব্যাটারীচালিত রিক্সা ভ্যান চালকরা যদি ট্রাফিক আইন মেনে চলে তাহলে যানজট পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। কিন্তু তারা ট্রাফিক আইন না মানায় যানজট পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক বিভাগকে।