খনর৭১ঃ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে দুপুরে রান্না করা খাবার পরিবেশনের পরিবর্তে ডিম-কলা অথবা ডিম-রুটি দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে তিন দিন সিদ্ধ ডিম-কলা, বাকি দিনগুলো ডিম-রুটি দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য মাথাপিছু ২০ থেকে ২২ টাকা বরাদ্দ দেয়া হতে পারে। এ বাবদ মাসিক প্রায় ৭৮০ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে।
সময়ের অপচয় এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ নষ্ট হবে- এমন চিন্তা থেকে নতুন এ সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এ কার্যক্রম শুরুর চিন্তাভাবনা রয়েছে। তবে আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে আগামী অক্টোবর থেকে দেশের ১৬ উপজেলায় ‘মিড ডে মিল’ হিসেবে রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফও) আওতায় ২০১০ সালে স্কুল শিক্ষার্থীদের বিস্কুট দেয়ার কর্মসূচি শুরু হয়। সারা দেশের ১০৪টি দরিদ্রপ্রবণ উপজেলার সবগুলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং হিসেবে বিস্কুট বিতরণ শুরু হয়। আগামী ৩১ ডিসেম্বর এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া ২০১৩ সালে বরগুনার বামনা, জামালপুরের ইসলামপুর এবং বান্দরবানের লামা উপজেলায় ডব্লিউএফপির আওতায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে ‘মিড ডে মিল’ বা দুপুরে রান্না করা খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়।
মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘জাতীয় স্কুল মিল’ নীতিমালা প্রণয়নের জন্য ২০১৬ সালে একটি কমিটি গঠন করে। ২০১৭ সালে এ নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করা হলেও তা কার্যকর হয়নি। সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘জাতীয় স্কুল মিল নীতিমালা- ২০১৯’ চূড়ান্ত করেছে, যা এখন অনুমোদনের অপেক্ষায়।
বর্তমানে মন্ত্রণালয় থেকে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) তৈরি হচ্ছে। এটা তৈরি হলে তা কেবিনেটে (মন্ত্রিসভা) পাঠানো হবে। এরই অংশ হিসেবে পুরোপুরি সরকারিভাবে পাইলট প্রকল্প হিসেবে দেশের ১৬ জেলায় আগামী অক্টোবর থেকে চালু হতে পারে ‘জাতীয় স্কুল মিল’ কার্যক্রম। এরপর দেশের আরও ১০৪টি উপজেলায় এ কর্মসূচি চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রতি বছর এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার কোটি টাকা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রান্না করা খাবার তৈরিতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়, এটা পরিবেশন করতেও বেশ সময় লাগে। বিদ্যালয়ের পরিবেশেরও ক্ষতি হয়। বরাদ্দ না থাকায় এসব কাজের জন্য বাড়তি কোনো কর্মচারী নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয় না।’
তিনি বলেন, ‘এ কারণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহায়তায় রান্না করা খাবার তৈরি করতে হচ্ছে। বাড়তি এ কাজে রুটিন অনুযায়ী সব ক্লাস করানো অসম্ভব হয়ে পড়ে শিক্ষকদের। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটে।’
সচিব বলেন, ‘এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে স্কুল ফিডিং বা মিড ডে মিল হিসেবে রান্না করা খাবার দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার চিন্তা চলছে। এর পরিবর্তে সপ্তাহে তিন দিন সিদ্ধ ডিম-কলা, বাকি দিনগুলো ডিম-রুটি দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য মাথাপিছু ২০ থেকে ২২ টাকা বরাদ্দ দেয়া হতে পারে। এ বাবদ মাসিক প্রায় ৭৮০ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে।’
সচিব জানান, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ বাবদ অর্থ বরাদ্দ দিতে কোনো আপত্তি নেই। আগামী বছরের শুরু থেকে সারা দেশের সব বিদ্যালয় এর আওতায় আনা হবে। বর্তমানে ১০৪ উপজেলায় ‘মিড ডে মিল’ চালু রয়েছে। তাদেরও এর আওতায় আনা হবে।
জানা গেছে, সরকারের স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের আওতায় বিস্কুট কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীপ্রতি আট টাকা করে খরচ হয়। রান্না করা খাবার দেয়া হলে এ খরচ দাঁড়াবে ১৮ টাকায়। আর ডিম-কলা অথবা ডিম-রুটি দিলে ২০ থেকে ২২ টাকার মতো ব্যয় হবে।
‘মিড ডে মিল’ খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত হয়েছে। বর্তমানে ডিপিপি তৈরি হচ্ছে। এটা তৈরি হলে কেবিনেটে পাঠানো হবে। কেবিনেটে পাস হলে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে যাবে। খসড়া নীতি অনুযায়ী, একজন শিশুর দৈনিক শক্তির চাহিদার ৩০ শতাংশ এবং পুষ্টি চাহিদার ৫০ শতাংশ স্কুলের খাবারে নিশ্চিত করা হবে।
অক্টোবরে যেসব উপজেলায় রান্না করা খাবার
স্কুল মিল কর্মসূচির আওতায় উপজেলা নির্বাচন করা হয়েছে দারিদ্র্য-ম্যাপ অনুযায়ী। সরকারি কর্মসূচির আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খাবার দেয়া হবেÑ কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারি ও রাজিবপুর উপজেলায়, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, পাবনার বেড়া, নওগাঁ জেলার পোরশা, গাইবান্ধার সাঘাটা, শেরপুরের নলিতাবাড়ি, জামালপুরের ইসলামপুর, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া ও কাউখালী, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, যশোরের ঝিকরগাছা, খুলনার বাটিয়াঘাটা, বরগুনার বামনা, লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলা এবং সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায়।
ডব্লিউএফপি পরিচালিত পাইলট প্রকল্পটি চলছে বান্দবানের লামা উপজেলায়। এখানে পাইলট প্রকল্পটি শেষ হলে নির্বাচিত ১৬ উপজেলার সঙ্গে লামা উপজেলাও যুক্ত হবে।