বাচ্চার রাগ ও তার প্রতিকার

0
1603

খবর৭১ঃ

আপনার সন্তান কি অল্পেতেই মেজাজ হারিয়ে ফেলছে? ঘনঘন মেজাজ হারিয়ে ফেলা চিন্তারই কথা, কারণ তার মানে এই যে সে তার মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না? জেনে নিন সহজ কিছু উপায়ঃ

আমাদের আলোচনার বিষয় দেখে অনেকের মনে হতেই পারে, বাচ্চার আবার রাগ কী? কিন্তু যাঁদের বাড়িতে খুদে দস্যিরা উপস্থিত তাঁরা খুব ভাল করেই জানেন বাচ্চারা রেগে গেলে বড়দের চেয়ে কোনও অংশে কম যায় না। আসলে রাগ, দুঃখ, অভিমান এই ইমোশনগুলোর কিন্তু কোনও বয়স হয় না। বড়দের মতো ছোটরাও বিভিন্ন ইমোশনের মধ্যে দিয়ে যায়। বরং আমরা বড়রা নিজেদের আবেগ অনেক বেশি সংযত রাখতে পারি। কিন্তু ছোটদের মন তো খুব কোমল। তাই অল্পতেই ওরা যেমন খুব খুশি হয়ে ওঠে তেমনই সামান্য কারণেই দুঃখে ভেঙে পড়া কিংবা রেগে যাওয়া অসম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ, সব বাচ্চা তো একরকম হয় না। কোনও কোনও বাচ্চা অনেক বেশি আবেগপ্রবণ। এদের অন্য যে কোনও ইমোশনের মতো রাগও খুব বেশি বা বলা ভাল রাগের বহিঃপ্রকাশ অনেক বেশি। বেশিরভাগ বাচ্চারাই রাগ হলে চিৎকার করে কাঁদে, নিজের দাবী আদায়ের চেষ্টা করে। এটা খুব একটা গুরুতর বিষয় নয়। কিন্তু বাচ্চা যদি রেগে গিয়ে জিনিসপত্র ছোঁড়াছুড়ি শুরু করে, বাড়ির বড়দের মারধোর করে কিংবা নিজেকে আঘাত করে তখন সেটা শুধু রাগ নয় ‘ব্যাড টেম্পার’ হয়ে দাঁড়ায়। বাচ্চা যদি ঘন ঘন সামান্য কারণে বা বারবার এরকম করতে থাকে, তাহলে কিন্তু সতর্ক হওয়া দরকার। আসলে রাগ এক ধরনের নেগেটিভ ইমোশন। রাগ কিন্তু শরীরেরও ক্ষতি করে। এবং ছোট থেকে যদি রাগ নিয়ন্ত্রণ না করা যায় পরবর্তীকালে এই সমস্যা বাড়তেই থাকে। তাই বাচ্চা ছোট থাকতেই এই ব্যাপারে সতর্ক হওয়া দরকার।

  • বাচ্চাদের রাগের একটা প্রধান কারণ ওরা যা চাইছে সেটা পাচ্ছে না। অনেকসময় বেশ কিছু অন্যায় দাবীও থাকে। যেমন ধরুন পড়ার সময় আপনার ছেলে টিভিতে কোনও অনুষ্ঠান দেখার জন্য বায়না জুড়ে দিল। কিংবা বাইরে গিয়ে পছন্দের কোনও কিছু কিনে দেওয়ার জন্য জেদ করতে শুরু করল। না দিলেই চিল চিৎকার। এরকম ক্ষেত্রে চটজলদি সমাধান হিসেবে তখনই যদি সেটা কিনে দেন তাহলে ওর জেদ কিন্তু ক্রমশই বাড়তে থাকবে। তাই প্রথমে শান্ত হয়ে সংযতভাবে বোঝান। এতেও কাজ না হলে ওকে চিৎকার করতে দিন।  সন্তান রেগে গিয়ে জিনিসপত্র ভাঙা বা ছোঁড়াছুড়ি করার অভ্যেস থাকলে বাচ্চার হাতের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে রাখুন। এই সময়ে ওকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এতে কিছুক্ষণ ও বুঝতে পারবে রাগ করে কোনও সমাধান হবে না।
  • বাচ্চা যখন রেগে যাবে তখন আপনিও রেগে ওর সঙ্গে তর্ক করতে বা মারধোর করতে শুরু করে দেবেন না। এতে ওর রাগ আরও বেড়ে যাবে। বরং আপনি গম্ভীরভাবে চুপ করে থাকুন। হাবেভাবে ওকে বোঝান ব্যাপারটা আপনার পছন্দ হচ্ছে না। এই সময়ে কিছু বোঝানোর দরকার নেই। বরং ওকে বলুন, আগে তুমি শান্ত হও তারপর এই ব্যাপারে কথা বলব। আলোচনার পাশাপাশি ওর ভাল থাকাটাও আপনার কাছে সমান জরুরি, সেটা যেন ও বোঝে। সেই দায়িত্বটা আপনার।বাচ্চার রাগ ও তার প্রতিকার
  • বাচ্চা একটু শান্ত হলে ওকে যুক্তি দিয়ে বোঝান কেন ওর দাবী আপনি মেনে নেননি। বাচ্চাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বললে অনেকটাই কাজ হবে। বোঝানোর সময় শান্ত এবং সংযত থাকুন। মনে রাখবেন আমরা যতটা যুক্তি দিয়ে জিনিস বুঝতে পারি ছোটরা কিন্তু অত সহজে বুঝবে না। তাছাড়া কোনও বিষয় আপনার কাছে হয়তো খুবই তুচ্ছ, কিন্তু সম্তানের কাছে সেটাই হয়তো অনেক বড় ব্যাপার। এই বিষয়গুলো একটু সহানুভূতির সঙ্গে দেখতে হবে। ওর যুক্তিগুলো মন দিয়ে শুনুন। ওকে বোঝার চেষ্টা করুন। ও যদি দেখে আপনার কাছে ওর কথাকে যথেষ্ট গুরুত্ব আছে তাহলে সমস্যা অনেকটাই কমবে।
  • সন্তান যখন ভাল মুডে থাকবে তখন ওকে  গল্প করে বোঝান অত্যাধিক রাগ যে এক ধরনের খারাপ অভ্যাস। নানারকম গল্প বলে ওকে রাগের খারাপ দিকগুলি ওকে বুঝিয়ে দিন। রাগের বশে কোনও ভুল করেছেন এই ধরনের ঘটনা বা অভিজ্ঞতাও শেয়ার করতে পারেন। এতে ভাল কাজ দেবে।
  • বাচ্চা যদি অত্যাধিক রাগী হয় তাহলে সেখানে পরিবারে ভূমিকাও অনেকটা। প্রথমেই দেখতে হবে বাড়ির কারওর রাগের মাথায় চিৎকার করা বা জিনিসপত্র ভাঙার অভ্যেস আছে কি না। যদি তাই হয় তাহলে কিন্তু প্রথমে নিজেদের শোধরানো দরকার। শিশুরা অনুকরণপ্রিয় হয়। ওরা যা দেখে তাই শেখে। তাই সন্তানের বাবা মা হিসেবে আপনাদেরও এই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
  • বাচ্চা যদি খুব অল্প কারণেই রেগে যায় তার মানে বাচ্চা ওর আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না বরং ইমোশনই ওকে কন্ট্রোল করছে। এক্ষেত্রে দেখা দরকার বাচ্চার রাগের কারণটা কী। যদি দেখেন ছোটখাটো ব্যাপারেও তাই আপনার বাচ্চা বিরক্তিবোধ করছে। এবং ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে বা অন্য কোনওভাবে শান্ত করা সম্ভব নয় সেক্ষেত্রে কিন্তু প্রফেশনাল হেল্পের দরকার হতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here