খবর৭১ঃ আইনমন্ত্রী বলেন, বিচারাধীন এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সরকার বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি, আদালতের অবকাঠামো উন্নয়ন, বিচারকদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে
আবুল কালাম আজাদ ও দিদারুল আলমের পৃথক দু’টি প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরও জানান, দেশে বর্তমানে এক হাজার ১৪৮টি আইন প্রচলিত রয়েছে।
লিখিত প্রশ্নোত্তরে মন্ত্রী বিচারাধীন মামলার জেলাওয়ারি তথ্য উপস্থাপন করেন।
মন্ত্রীর দেয়া তথ্যানুযায়ী, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সবচেয়ে বেশি মামলা ঢাকায়।
রাজধানীর ৯টি ট্রাইব্যুনালে ১৩ হাজার ৭৭৭টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জে এক হাজার ৬৭৯, গাজীপুরে ৩ হাজার ৭৭৮, মানিকগঞ্জে ২ হাজার ৩২১, মুন্সীগঞ্জে এক হাজার ২১৫, নরসিংদীতে এক হাজার ৯৯২, কিশোরগঞ্জে ২টি ট্রাইব্যুনালে ২ হাজার ২৩৫, টাঙ্গাইলে ৩ হাজার ৬, ফরিদপুরে এক হাজার ৮৭২, রাজবাড়ীতে এক হাজার ১২৬, গোপালগঞ্জে এক হাজার ৭৯২, মাদারীপুরে এক হাজার ৪৮৩, শরীয়তপুরে ৩৫৯টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
বিচারাধীন মামলার মধ্যে ময়মনসিংহে এক হাজার ৯৫৬, নেত্রকোণায় ২ হাজার ৬৭৩, জামালপুরে ২ হাজার ১২৮, শেরপুরে এক হাজার ৯০৮, চট্টগ্রামে (৭টি ট্রাইব্যুনাল) ১২ হাজার ৪৭৭, ফেনীতে এক হাজার ৩৯২, নোয়াখালীতে (২টি ট্রাইব্যুনাল) ৬ হাজার ৬৫৩, লক্ষীপুরে এক হাজার ৭২৮, কক্সবাজারে ৭ হাজার ৯৫৮, কুমিল্লায় ৪ হাজার ১৬৯, চাঁদপুরে এক হাজার ৩১০, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪ হাজার ৮৬৯, রাঙ্গামাটিতে ৫২৮, বান্দারবানে ৬২৪, খাগড়াছড়িতে ৩৬২, রাজশাহীতে এক হাজার ৩২০, নওগাঁয় ২ হাজার ৮৮০, জয়পুরহাটে ৬০৭, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪২৯, বগুড়ায় ২ হাজার ৭২৯, সিরাজগঞ্জে ৪ হাজার ৪০৮, পাবনায় এক হাজার ৭৮১, নাটোরে এক হাজার ৬২৩ এবং খুলনায় ৪ হাজার ৫৩৭টি মামলা আছে।
বাগেরহাটে ৩ হাজার ১৭৮, যশোরে এক হাজার ৫৫৫, সাতক্ষীরায় এক হাজার ৬২২, ঝিনাইদহে এক হাজার ৩১৯, চুয়াডাঙ্গায় ৫৩৮, মেহেরপুরে ৬০৩, কুষ্টিয়ায় ৪১০, মাগুরায় এক হাজার ৩২, নড়াইলে ৪৭৪, বরিশালে এক হাজার ৯৮০, ঝালকাঠিতে ৪৫৪, পিরোজপুরে ৭১৯, পটুয়াখালীতে এক হাজার ৮০২, ভোলায় ৫ হাজার ৩, বরগুনায় ২ হাজার ৬২৩, সিলেটে ২ হাজার ৫৫, মৌলভীবাজারে ২ হাজার ৬৪১, সুনামগঞ্জে এক হাজার ৬৫২, হবিগঞ্জে ৫ হাজার ৬৬৯, রংপুরে ৬ হাজার ৮০, দিনাজপুরে ২ হাজার ৯৩৬, লালমনিরহাটে এক হাজার ৩৯৪, নীলফামারীতে ৩ হাজার ৭৯৭, পঞ্চগড়ে ৪৭৪, ঠাকুরগাঁওয়ে এক হাজার ৫৮৮, গাইবান্ধায় ৩ হাজার ২৩৪, কুড়িগ্রামে এক হাজার ৯৩৫টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
মামলার জট নিরসনে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, মানুষের হয়রানি এড়াতে ও মামলার জট কমানো ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সুনির্দ্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন মামলার পাশাপাশি পুরানো মামলা দ্রুত নিস্পত্তির কাজ শুরু হয়েছে। এমনকি দেওয়ানি মামলাগুলো নিষ্পত্তির জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুরোনো মামলাগুলো আগে নিস্পত্তির জন্য বলা হয়েছে। এজন্য আদালতের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।
আইনমন্ত্রী মামলা জটের কারণ তুলে ধরে জানান, মামলা দ্রুত বিচার ও নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে অন্যতম একটি প্রতিবন্ধকতা হলো এজলাস সংকট। এজলাস স্বল্পতা দুর করে সর্বোচ্চ কর্মঘন্টা ব্যবহার করে বিচারকাজে গতিশীলতা আনতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে ৩৮টি জেলায় নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এরমধ্যে ২৪টি জেলায় নির্মাণ কাজ শেষে নতুন ভবনে বিচারকাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে জেলা জজ আদালতের এজলাস সংকট নিরসনের জন্য ২৮টি জেলায় আনুসাঙ্গিক সুবিধাদিসহ জেলা জজ আদালত ভবনের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্প ইতিমধ্যে ২৭টি জেলায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সারাদেশে আরো ৪১টি ট্রাইব্যুনাল ও ৭টি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সৃজন করেছে। এছাড়া আদালত সমূহে সহায়ক কর্মচারী নিয়োগের প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের শাস্তি : আবুল কালাম আজাদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিতে আইন, বিচার ও সংসদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্মিলিতভাবে কাজ করছে।
তিনি আরও জানান, পলাতক খুনি নুর চৌধুরী কিভাবে কানাডায় বসবাস করছেন (লিগ্যাল স্ট্যাটাস) এ সম্পর্কে তথ্য দিতে কানাডা সরকারকে বাধ্য করতে ফেডারেল কোর্ট অব জাস্টিসের আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
পলাতক আসামি রাশেদ চৌধুরীকে আমেরিকা থেকে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক ও আইনি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আইনগত বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সেখানে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে টাক্সফোর্স কাজ করছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে ইন্টাপোলের মাধ্যমে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে।
৫০টি দেশে মৎস্য রফতানি থেকে আয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বলেছেন, বাংলাদেশ বিশ্বের ৫০টি দেশে মৎস্য ও মৎস্যজাতপণ্য রফতানি করছে। এই খাত থেকে চলতি অর্থ বছরে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা আয় হয়েছে।
মো. আছলাম হোসেন সওদাগরের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, রাশিয়ার দেশসমূহ বাংলাদেশের মৎস্য ও মৎস্যজাতপণ্যের প্রধান আমদানিকারক দেশ।
চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের গত জুলাই থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত ওই সকল দেশে প্রায় ৬৮ হাজার ৬৫৫ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাতপণ্য রফতানি করা হয়েছে। সেখান থেকে প্রায় ৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।
এর মধ্যে ৩১ হাজার ১৫৮ মেট্রিক টন চিংড়ি রফতানি করে দুই হাজার ৯১৬ কোটি টাকা এবং ৩৫ হাজার ১৪৮ মেট্রিক টন ফিনফিস রপ্তানী করে ৮৯৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।
নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ এখন মৎস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টনের বিপরীতে মোট উৎপাদন হয়েছে ৪২ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন।
তিনি আরও জানান, দেশের জিডিপির ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপির প্রায় এক চতুর্থাংশের বেশি (২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ) মৎস্য খাতের অবদান। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ি দৈনিক মাথাপিছু ৬০ গ্রাম চাহিদার বিপরীতে মাছ গ্রহণের পরিমাণ ৬২ দশমিক ৫৮ গ্রাম। ফলে মাথাপিছু মাছের চাহিদা অনুযায়ী মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ।
পুণঃখনন করা হচ্ছে ৪৪৮টি ওছোট নদী ও খাল : মমতাজ বেগমের প্রশ্নের জবাবে পানি সম্পদ মন্ত্রী জাহিদ ফারুক জানিয়েছেন, স্বাধীনতার পর এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জন্য বর্তমান সরকার ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ গ্রহণ করেছে।
এটি গৃহীত হওয়ার পর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে ২ হাজার ২৭৯ কোটি ৫৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুণঃখনন শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন লাভের পর এই বছরের ২৬ ডিসেম্বর সারা দেশে একযোগে এর কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ৪৪৮টি ছোট নদী ও খালের ৪ হাজার ৮৬ কিলোমিটার পুণঃখনন সম্পন্ন হবে।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ৩ লাখ ৮ হাজার ৩৯২টি পদ শূন্য: মো. আনোয়ারুল আজীমের প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ৩ লাখ ৮ হাজার ৩৯২টি পদ শূন্য রয়েছে। এসব পদপূরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ৩৯তম বিসিএসের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারের ৪ হাজার ৭৯২টি পদে নিয়োগের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সুপারিশ প্রেরণ করেছে। একই সঙ্গে ৪০তম বিসিএসের মাধ্যমে ১৯১৯টি বিভিন্ন ক্যাডারের শূন্য পদে নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
শামীম হায়দার পাটোয়ারীর প্রশ্নের জবাবে জন-প্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, সার্কিট হাউজে বাবুর্চি পদে কর্মরত কর্মচারিদের অতিরিক্ত ভাতা দেয়া হয় না। তারা ২০তম গ্রেডভুক্ত (৮,২৫০-২০,০১০) কর্মচারী হিসেবে বেতন-ভাতাদি পেয়ে থাকেন। সার্কিট হাউজে কর্মরত বাবুর্চিদের দক্ষতা ভাতা প্রদানের পরিকল্পনা আপাতত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নেই।