খবর৭১ঃ আগামী ১ জুলাই থেকে আইনটি বাস্তবায়ন করতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু ছাড় দেয়া হবে, আবার অনেক ক্ষেত্রে সংযোজন করা হবে নতুন বিধান। এতে কিছু খাতে ভ্যাটের চাপ বাড়বে। পাশাপাশি চাপ কমবে অনেক খাতে। যেমন টার্নওভার ট্যাক্সের সীমা বাড়ানো হচ্ছে, এতে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হলেও এর সঙ্গে ট্যাক্স হার বাড়ানো হচ্ছে। আবার ভ্যাট অব্যাহতির সীমা বাড়ানো হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে পেট্রোলিয়াম ও ওষুধের জন্য বিশেষ স্কিম করা হচ্ছে। আইনের এসব পরিবর্তন আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে আনা হবে। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ৩১ জানুয়ারি এনইসি ভবনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে এনবিআরের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করে। সেখানে এনবিআরের পক্ষ থেকে নতুন ভ্যাট আইনের বেশকিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়া হয়। এর মধ্যে টার্নওভার ট্যাক্সের সীমা বৃদ্ধি, ভ্যাট অব্যাহতির সীমা বাড়ানো উল্লেখযোগ্য।
দুই বছর আগে থেকেই ঘোষণা দেয়া হয়েছে যে, আগামী বাজেটে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা হবে। ফলে এবার ভ্যাটের আওতা বাড়বে। একই সঙ্গে এর হারও হবে ভিন্ন ভিন্ন। এছাড়া ভ্যাট ফাঁকি রোধে অনলাইনে ভ্যাট আদায়ের অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে।
রবিবার সংসদে বাজেট পাশ হচ্ছে। এর আগে আজ শনিবার সংসদে অর্থবিল পাশ হবে। অর্থবিলে এসব সংশোধনী আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দিতে পারেন বলে বাজেট সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্সের বর্ধিত ফিও কিছুটা কমতে পারে। ট্যাক্স বারের সদস্য হওয়া ছাড়াই অবসরপ্রাপ্ত কর কর্মকর্তাদের আয়কর আইনজীবী হওয়ার প্রস্তাবও বাতিল হচ্ছে।
তবে সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় করহার ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত তা বাতিলের পক্ষে নয় এনবিআর। বিদ্যুত্ সংযোগে সিটি করপোরেশনসহ পৌরসভা পর্যায়ের গ্রাহকের টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) নেওয়া বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবটি বাতিলের জন্য বিদ্যুত্ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। এটিও বাতিলের পক্ষে নয় কর বিভাগ। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন বাজেট সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাজেটে কী ধরনের পরিবর্তন আনা যায়, তা নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বাজেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ওই বৈঠকে ব্যবসায়ীদের বেশকিছু দাবি নিয়ে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাজেটে পরিবর্তনের দাবির একটি বিশাল ফর্দ তুলে ধরে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। ওই আলোচনা শেষে এফবিসিসিআই নেতৃবৃন্দ তাদের দাবির তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে। বাজেটে সব ধরনের আমদানির উপর ৫ শতাংশ অ্যাডভান্স ট্যাক্স আরোপ করে এনবিআর। অবশ্য এটি রিটার্ন দাখিল করে ফেরত বা সমন্বয় করা যাবে। আগে কেবল বাণিজ্যিক আমদানি পণ্যে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতে হতো। নতুন এ সিদ্ধান্ত বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই কার্যকর হয়। এর ফলে বন্দরে পণ্য ও যন্ত্রপাতি ছাড়ে জটিলতা তৈরি হয়। যন্ত্রপাতি আমদানিতে ১ শতাংশ শুল্কের বাইরে আরো ৫ শতাংশ অ্যাডভান্স ট্যাক্স ছাড়া পণ্য খালাস করা যাচ্ছিল না। কেবলমাত্র রপ্তানির কাঁচামাল (বন্ডের আওতায়) আমদানিতে তা অব্যাহতি ছিল। এতে হয়রানি ও ব্যবসায়ের খরচ বাড়ার শঙ্কায় আমদানিকারকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ বেশ কয়েকটি খাতে অ্যাডভান্স ট্যাক্স প্রত্যাহার হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অবশ্য এনবিআর একটি নির্দেশনার মাধ্যমে অগ্রিম কর ছাড়াই এসব পণ্য প্রত্যাহারের সুযোগ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ স্টিল মিল্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনোয়ার হোসেন সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটের এই কর ও ভ্যাট বাস্তবায়ন হলে প্রতিটন রডের দাম ১২ হাজার ৩০০ টাকা বৃদ্ধি পাবে। ফলে খুচরা পর্যায়ে রডের দাম টনপ্রতি বিদ্যমান ৬২ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৭৫ হাজার টাকায় গিয়ে ঠেকতে পারে। এর ফলে সব ধরনের অবকাঠামোসহ সরকারের উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সূত্র জানিয়েছে, রড ও স্টিল জাতীয় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে ভ্যাট ও করের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হতে পারে।
এফবিসিসিআইয়ের দাবিসমূহ
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই বাজেটে পরিবর্তনের জন্য যেসব দাবি জানিয়েছে, সেগুলো হলো: কোম্পানির কর্পোরেট করহার আড়াই শতাংশ কমানো, গার্মেন্টসহ সব রপ্তানি খাতে একই ধরনের সুবিধা দেওয়া, নগদ প্রণোদনার করহার ১০ শতাংশ থেকে তিন শতাংশে নামিয়ে আনা, রিটেইনড আর্নিংস ও স্টক ডিভিডেন্ডে আরোপিত ১৫ শতাংশ কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা, ট্রেড লাইসেন্স নবায়নে অগ্রিম কর মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় নির্ধারণ করা, শিল্পের কাঁচামালের উপর অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ৫ শতাংশ থেকে তিন শতাংশে নামিয়ে আনা, মূলধনী যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার, সব ধরনের রপ্তানিতে উেস আয়কর ০.২৫ শতাংশ বহাল রাখা, কর সংক্রান্ত বিরোধের আপিলে দাবিকৃত অর্থের জরিমানার হার কমিয়ে ১০ শতাংশ করা ইত্যাদি।