খবর ৭১ঃ
দাঁতের সাধারণ সমস্যাঃ
অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরা প্রায়ই বলেন যে তাঁরা ব্রাশ করতে সময় পান না। ব্যস্ততার মধ্যে কোনও মাউথওয়াশ ব্যবহার করেই তাঁরা ক্ষান্ত থাকেন। সমস্যার মূলে কিন্তু এই বদভ্যেস। ব্রাশ না করা কিন্তু দাঁতে পাথর জমা বা গাম ব্লিডিংয়ের মতো সমস্যার মূলে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল জাঙ্ক ফুড আর কোল্ড ড্রিংক খাওয়া। দিনের পর দিন কোল্ড ড্রিংক খেলে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হতে থাকে। স্টিকি ফুড বা জাঙ্ক ফুড বেশি খেলে ক্যাভিটির আশঙ্কাও বাড়ে বহুগুণ।
দাঁতের রংয়ের তুলনায় যদি আরও দু’-তিন শেড সাদা রং পেতে চান, তাহলে অনেকেই আজকাল ব্লিচিংয়ের দিকে ঝোঁকেন। যাঁরা নিয়মিত ধূমপান করেন, প্রচুর চা-কফি বা পান মশলা খান তাঁদের দাঁতে অনেকসময় ছোপ পড়ে যায়। তবে একবার ব্লিচিং করলেই যে সারাজীবন ঝকঝকে দাঁত পাবেন, তা কিন্তু ভুল। ছ’মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত ব্লিচিংয়ের প্রভাব থাকতে পারে। কিন্তু ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত ফলো আপ প্রয়োজন। আপনার জীবনযাত্রা যদি সঠিক না হয়, তাহলে ব্লিচিংয়ের প্রভাব চলে যায়। ব্লিচিং দু’ধরনের হয়: ডাক্তারের চেম্বারে একবার ব্লিচিং করে দেওয়ার পরে রোগীকে বাড়িতেই হোম ব্লিচিংয়ের পরামর্শ দেওয়া হয়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরোপুরি ডাক্তারের চেম্বারেই পাওয়ার ব্লিচিং করা হয়। তবে যাঁদের দাঁত খুব সংবেদনশীল বা মাড়ির সমস্যা আছে, তাঁদের ব্লিচিং না করাই ভাল। এছাড়া এখনকার আধুনিক ব্যবস্থায় ব্লিচিংয়ের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সেভাবে হয় না।
চল্লিশের উপরের সমস্যাঃ
বয়স চল্লিশের উপরে পৌঁছে গেলে দাঁতের একটু বেশিই যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এর আগে পর্যন্ত কোনও মাড়ির অসুখ না থাকলে সেভাবে এনামেল ক্ষয় হয় না। তবে ৪০-৪৫ বছরের পরে এনামেল ক্ষয় দ্রুত হয় বলে দাঁতের সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়। এর থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে সেনসিটিভ টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। দিনে দু’বার ব্রাশ করবেন অবশ্যই। তার মধ্যে অন্তত একবার সেনসিটিভ টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করে নিন। অনেকের ধারণা টুথপেস্ট বদল করলে বোধহয় দাঁতের ক্ষতি হয়! এই ধারণা একেবারে ভুল। প্রয়োজন হলে টুথপেস্ট বদল করতেও পারেন। শুধু খেয়াল রাখবেন ভাল ব্র্যান্ডের এমন টুথপেস্ট যেন হয় যাতে ফ্লোরাইডের পরিমাণ সঠিক থাকে। সাধারণত ৪০-এর উপরে বয়স যাঁদের তাঁদের অনেকেরই দাঁতে হলদেটে ছোপ পড়ে যায়। এর কারণ দাঁতের সাদা রংয়ের জন্য যে এনামেল দায়ী, তাঁর ক্ষয়। তবে সকলেরই যে এধরনের সমস্যা দেখা দেবে তা নয়। দাঁত ও চোয়ালের সেটিংয়ের উপরেও নির্ভর করে এনামেলের ক্ষয় কতটা হবে বা আদৌ হবে কি না! ঠিক এই কারণে অনেকের খুব কম বয়স থেকেই দাঁতের ক্ষয় হয়, অনেকের আবার বয়সকালেও ক্ষয় হয় না।
কিভাবে করবেন ব্রাশঃ
আমাদের অনেকের মনেই ধারণা আছে যে যত জোরে ব্রাশ করা যাবে তত বোধহয় দাঁত পরিষ্কার হবে বেশি। এ ধারণা ভুল। দু’মিনিট সাধারণভাবে ব্রাশ করলেই হয়। কিন্তু জোরে জোরে অনেকক্ষণ ধরে ব্রাশ করলে দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থল ক্ষয়ে যায়। একে অ্যাব্রেশন বলে। ওই জায়গাগুলো তখন খুব সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। ক্যাভিটিও সহজেই শুরু হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাড়ির আরও একটি ইনফেকশন খুব কমন, সেটি হল পায়োরিয়া। একে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে জিঞ্জিভাইটিস। দাঁতে টার্টার জমে গিয়ে মাড়ি শিথিল হয়ে যায়। অনেকেই ভাবেন টার্টার দূর করতে গিয়ে দাঁত নড়ে যেতে পারে। কিন্তু সুস্থ দাঁতের জন্য প্রয়োজন শক্ত মাড়ির। টার্টার দূর করলে দাঁত একটু নড়ে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সঠিক যত্নের মাধ্যমে আবার মাড়িকে শক্তপোক্ত করে তোলা সম্ভব। জিঞ্জিভাইটিসের সমস্যা দূর করতে স্কেলিং খুব ভাল উপায়। এতে দাঁত নড়ে যায় না। আর ৪৫-এর উপরে নিয়মিত ফ্লসিং জরুরি। খাবার খাওয়ার পরে নিয়মিত ফ্লসিং করুন। বাজারে যত ধরনের মাউথওয়াশই থাকুক না কেন, সেরা মাউথওয়াশ হল নুন-গরম জল। দিনে অন্তত একবার উষ্ণ জলে নুন মিশিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
মাড়ির ইনফেকশনের প্রাথমিক লক্ষণ হল মুখে দুর্গন্ধ। দাঁত ব্রাশ করার সময় যদি রক্ত বের হয় তাহলেও কিন্তু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। আর ক্যাভিটির প্রাথমিক লক্ষণ হল দাঁতে কালো ছোপ দেখা যাওয়া। শুরুতেই যদি ফিলিং করে নেওয়া যায়, তাহলে ক্যাভিটি গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে না। তবে ক্যাভিটি যদি দাঁতের ভিতরের দিকে হয়, তখন রোগীর পক্ষে প্রাথমিক অবস্থায় বোঝা মুশকিল। সেক্ষেত্রে ক্যাভিটি অনেকটা বেড়ে গেলে শুধু ফিলিংয়ে আর কাজ হয় না। তখন রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্টের সাহায্য নিতে হয়।