খবর ৭১ঃ
‘এটাই আমার শেষ বিশ্বকাপ। তবে অবসর নিয়ে ভাবছি না। আমি খেলা ছাড়ছি না। ওয়ানডে খেলে যাব।’ কথাগুলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার।
এ কথার মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপের পর মাশরাফির অবসরের যে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল সেটি উড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই প্রাণভ্রমরা।
বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া মাশরাফি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে খেলছেন জাতীয় দলের হয়ে। তার নেতৃত্বে সবচেয়ে বেশি সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ। হারিয়ে দিয়েছে বড় বড় দলকে। ত্রিদেশীয় সিরিজও জিতেছে।
খেলা থেকে রাজনীতিতেও প্রবেশ করেছেন মাশরাফি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে এমপি হয়েছেন। ৩৬ বছর বয়সী মাশরাফি আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন ইংল্যান্ড বিশ্বকাপই তার শেষ বিশ্বকাপ। তার এ কথা ও রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন মাশরাফি বিশ্বকাপের পর ক্রিকেটকে গুডবাই বলে দেবেন।
এমন ধারণা উড়িয়ে দিয়ে বৃহস্পতিবার ইএসপিএনক্রিকইনফো’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে মাশরাফি বলেন, ‘অবশ্যই এটা আমার শেষ বিশ্বকাপ। তবে টুর্নামেন্ট শেষে অবসর নিচ্ছি না। এই মুহূর্তে এটা নিয়ে ভাবতেও চাই না, বিশেষ করে যেহেতু টুর্নামেন্ট এখনও চলছে। এটা ক্ষতির কারণ হতে পারে। এমন সময় মানুষ আবেগি হয়ে পড়ে। তবে বোর্ড যদি চায়, তাহলে এটা নিয়ে আমাকে ভাবতে হবে।’
অবসরের সিদ্ধান্তটা বোর্ডের ইশারার দিকেই ঝুলে আছে এমনটি জানিয়ে ওয়ানডে অধিনায়ক বলেন, ‘এখনই খেলা ছাড়ছি না। আমি আরও খেলব। বোর্ড থেকে কোনো নির্দেশনা এলে আলাদা কথা। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার আপাতত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার চিন্তা নেই।’
তবে বিসিবি সূত্রে যতটুকু জানা গেছে, বিশ্বকাপের পর মাশরাফি খেলা চালিয়ে যেতে চাইলে বোর্ড তাঁর ইচ্ছাকে সম্মান দেখাবে। কারণ মাশরাফির নেতৃত্বেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাম্প্রতিক উত্থান। বাংলাদেশের ক্রিকেটে ‘মাশরাফি’ একটা আবেগেরও নাম।
বিসিবির যদিও ধারণা, বিশ্বকাপের পর হয়তো মাশরাফি নিজেই অবসরের ঘোষণা দেবেন, তবে না দিলেও তারা সেটিতে আপত্তি করবে না বোর্ড।
বিসিবির মিডিয়া কমিটির প্রধান ও পরিচালক জালাল ইউনুস এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানান, মাশরাফি অবসরের ব্যাপারে বোর্ড কিছু বলবে না। তিনি এখন দলনেতা। তিনি যদি মনে করেন খেলা চালিয়ে যাবেন, তাতে বোর্ড সায় দেবে। আবার তিনি যদি অবসর নিতে চান, সেটাতেও বোর্ড বাধা দেবে না।
মাশরাফি এখন পর্যন্ত অবসর নিয়ে কখনোই খোলাসা করে কিছু বলেননি। তবে এটি যে তার শেষ বিশ্বকাপ সেটি আগেই বলে রেখেছেন। পরের বিশ্বকাপ ২০২৩ সালে, মাশরাফির পক্ষে ওই পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যাওয়াও হয়তো সম্ভব হবে না। শেষ বিশ্বকাপ বলেই স্ত্রী সুমনা হক, মেয়ে হুমায়রা ও ছেলে সাহিলকে ইংল্যান্ডে নিয়ে এসেছেন অধিনায়ক। তার বাবাও খেলা দেখছেন স্টেডিয়ামে গিয়ে।
বিশ্বকাপের পর মাশরাফির খেলা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে নানা সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ দুটোই রয়েছে। তার ক্যারিয়ারের নিত্যসঙ্গী হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি বয়ে বেড়ানো, তার ফিটনেট ঠিক রাখা, রাজনৈতিক ব্যস্ততা, ধারাবাহিক ফর্মের অভাব এসবই তার সামনের দিনগুলোতে চ্যালেঞ্জ। এসবের কারণেই বিশ্বকাপের পর তার অবসরের গুঞ্জনের ডালপালা মেলেছে।
আর সম্ভাবনার জায়গা হচ্ছে মাশরাফি বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রাণভ্রমরা। ড্রেসিংরুম ও মাঠে মাশরাফির উপস্থিতি ক্রিকেটারদের বদলে দেয়, উজ্জীবিত করে। পুরো দলকে এক সুতোয় বাধতে পারেন একমাত্র মাশরাফিই। তাকে ঘিরে রয়েছে দেশের নিযুত ক্রিকেট ফ্যানদের আবেগ। এসব ছাড়াও বিশ্বকাপে দলকে বেশ ভালোভাবেই নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন মাশরাফি। তার নেতৃত্বে ৭ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ ৭ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালের দৌঁড়ে এখনও টিকে আছে।হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তানের মত দলকে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হারলেও দূর্দান্ত লড়াই করেছে।
তাই মাশরাফির অবসর নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) মোটেই চিন্তিত নয়। এ বিষয়ে জালাল ইউনুস বলেন, ‘সে দলের নেতৃত্বের দায়িত্ব বেশ ভালোভাবেই সামলাচ্ছে। তাই আমরা এই মুহূর্তে কোনো কিছু নিয়ে ভাবছি না। সে খেলা আরও চালিয়ে যেতে এবং দলের নেতৃত্বে থাকতে চায় কি না, সিদ্ধান্তটা তার। আমরা তার কোর্টে বল পাঠিয়ে দিয়েছি। বোর্ডের নজর এখন পুরোপুরি বিশ্বকাপের দিকে, যেখানে আমাদের সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা আছে।’