খবর৭১ঃ ৫ দফা আলটিমেটামের পরও স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়ায় ৩২ বিশ্ববিদ্যালয়কে শাস্তি হিসেবে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেড় বছর ধরে শিক্ষার্থী ভর্তি চালিয়ে যাচ্ছে। নির্দেশনা উপেক্ষার পরও নিশ্চুপ শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ সুযোগে ফ্রি স্টাইলে চলছে তারা। শিক্ষার্থী ভর্তি থেকে শুরু করে সমাবর্তন সবকিছুই চলছে। তবে নিষিদ্ধ সময়ে শিক্ষার্থীরা গ্র্যাজুয়েটের সনদ পাচ্ছেন কিনা, সেটা বাছ-বিচার করে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
চিহ্নিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির সত্যতা নিশ্চিত করে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক আখতার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, সিদ্ধান্ত ছিল ১২ বছরের বেশি বয়সী ৫২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালাবে।
ওই সময়ের পরে স্থায়ী ক্যাম্পাসের বাইরে কোনো কার্যক্রম চালাবে না। এ কাজ যে বিশ্ববিদ্যালয় করবে না, সেগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকবে। কিন্তু শিক্ষার্থী ভর্তি চলছে।
বাংলাদেশে ১০৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৯৫টির কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ৫২টির বয়স সর্বনিু ১২ বছর পূর্ণ হয়েছে। ২৩ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ইউজিসির পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালাচ্ছে। ৩২টি প্রতিষ্ঠান সরকারি নির্দেশনা এবং আইন মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে।
২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো ৫৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার আলটিমেটাম দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০১৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত এভাবে ৫ বার আলটিমেটাম দেয়া হয়। ২০১৭ সালের আগস্টে নির্ধারিত সময়ে শেষে দেখা যায় মাত্র ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করেছে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে একটি মাত্র বৈঠক হয়।
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ক্লান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে স্বতঃপ্রণোদিত সময় চায়। জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনোটি এক বছর, আবার কোনোটি ৫ বছর সময় চায়।
এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চুপ হয়ে যায়। তবে এপ্রিলে নতুন করে তৎপরতা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরুর হালনাগাদ তথ্য চেয়ে ১৫ এপ্রিল ইউজিসিতে চিঠি পাঠানো হয়।
সে অনুযায়ী আলাদা দুটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে সংস্থাটি। তাতে দেখা যায়, ১৬টি আংশিকভাবে তাদের কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে চালাচ্ছে। বাকিগুলোর কেউ ক্যাম্পাস বানাচ্ছে আবার কেউ জমি কিনেছে। দু-একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে একের পর এক জমি কিনে যাচ্ছে কিন্তু ক্যাম্পাস বানাচ্ছে না।
সূত্র বলছে, চিহ্নিত ৩২ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দু-একটি অবশ্য স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি একটি। সরকারের একজন উপমন্ত্রী ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডে আছেন। জানা গেছে, চট্টগ্রাম শহরে নিজস্ব জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির চারটি ক্যাম্পাস আছে। চারটিকেই স্থায়ী ক্যাম্পাসের মর্যাদা চেয়ে ইউজিসিতে চিঠি দেয়া হয়েছে।
তবে ইউজিসি বলেছে, আইনে এক একরের অখণ্ড জমিতে ক্যাম্পাস থাকার কথা বলা আছে। একাধিক স্থায়ী ক্যাম্পাসের বিধান নেই। কোনটি স্থায়ী ক্যাম্পাস সেটি নির্দিষ্ট করে চিঠি চেয়েছে ইউজিসি।
ইউজিসির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, স্থায়ী ক্যাম্পাসের কার্যক্রম মূল্যায়নে মন্ত্রণালয় ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করে। কমিটি ৩২ বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করে ৪টি প্রতিবেদন দেয়। তার ভিত্তিতেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে বলা হলেও বাস্তবে এ নির্দেশ কেউই মানেনি। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ই শিক্ষার্থী ভর্তি করছে।
শুধু তাই নয়, ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালুর নির্দেশ দিলেও তা লঙ্ঘন করে তিন সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে। প্রাইম ইউনিভার্সিটি এক একর জমিতে ক্যাম্পাস গড়ার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি ৫৮ ডেসিমেলে ক্যাম্পাস নির্মাণ করেছে। এটিরও ভর্তি বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু তারা মানেনি।
প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি বোর্ডের সহসভাপতি আশরাফ আলী যুগান্তরকে বলেন, ‘আসলে আমরা শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নোটিশ পাইনি। আর স্থায়ী ক্যাম্পাসে জমির পরিমাণ নিয়ে যে আপত্তি ইউজিসির আছে তা শিগগির সমাধান হবে। আমরা আগামী মাসের মধ্যে বাকি ৪২ ডেসিমেল জমি কিনছি।’ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থী ভর্তি চালিয়ে যাওয়াদের মধ্যে আছে গ্রিন ইউনিভার্সিটি।
প্রতিষ্ঠানের ভিসি অধ্যাপক গোলাম সামদানি ফকির বলেন, আমরা শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নোটিশ পাইনি। মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটিও ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভিসি অধ্যাপক অভিনয় চন্দ্র সাহা যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা স্থায়ী ক্যাম্পাসেই আছি। কিন্তু জমিটা একটি এনজিওর নামে আছে। সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে লেখাতে যে ১০ কোটি টাকা দরকার সেটিই নেই।
এ কারণে সময় লাগছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে থাকায় ভর্তি চলছে।’ প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান বলছেন, ভর্তি বন্ধের কোনো চিঠি পাইনি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে টাঙ্গাইলে স্থায়ী ক্যাম্পাসের জমি কিনেছিলাম। সেটি দূরে হওয়ায় এখন কাঁচপুরে জমি কেনার প্রক্রিয়া চলছে।’
জানা গেছে, চার সদস্যের কমিটির সদস্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এখনও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি সেগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার আগে সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা প্রয়োজন। তবে এসবের জন্য শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে শিগগির বৈঠক ডাকা হবে।
রাজধানীর বাইরে ক্যাম্পাস স্থানান্তর করলে শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে না, এমন শঙ্কা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নানা বাহানায় সময়ক্ষেপণ করছে। ইউজিসির এক কর্মকর্তা জানান, ঢাকায় হলিক্রস কলেজের সামনে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি অফিসের সাইনবোর্ড দেখা গেছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে কমিশনে অভিযোগ জমা পড়েছে। পান্থপথে চালু আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটি ক্যাম্পাস আছে।