খবর৭১ঃ বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এক শতাংশ হলেও কম থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য সবাইকে একনিষ্ঠ হয়ে কাজ করারও আহ্বান জানিয়েছেন।
রবিবার রাজধানীতে সিভিল সার্ভিস প্রশাসনিক একাডেমিতে বিসিএসে নিয়োগ পেয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে যাওয়া প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখছিলেন শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি তার সরকারের উন্নয়নের চিন্তা তুলে ধরে প্রশিক্ষণার্থীদের দেশ ও জনগণের সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পলাশীর আম্রকাননে যে স্বাধীনতার সূর্য অস্ত দিয়েছিল, সেই সূর্য আবার উদিত হয় মেহেরপুরের আম্রকাননে। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আর যে কারণে আপনারা দেখবেন, আওয়ামী লীগ যখন সরকারে আসে, তখনই কিন্তু দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়।’
বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য বিমোচনের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দারিদ্র্যের হার ২১.৮ ভাগে নামিয়ে নিয়ে এসেছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনব। আমেরিকায় দারিদ্র্যের হার ১৭ কি ১৮ ভাগ। যে করেই হোক, তার চেয়ে এক পার্সেন্ট কমালেও আমাদের কমাতে হবে।’
‘আজকে আমরা ৮.১৩ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। মাথাপিছু আয় এক হাজার ৯০৯ ডলারে উন্নীত করতে পেরেছি। কিন্তু আমাদেরকে এটা বাড়াতে হবে।’
হত দারিদ্র্যের হার ১১ শতাংশ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি রয়েছে সরকারের।
‘আমাদের অনেকে অনেক বক্তৃতা দেন, আরো বেশি ভাতা দিতে হবে। আমি বলি, তাহলে তো কেউ কাজই করবে না। আমরা পারলে একবেলা যদি পেট ভরে খেতে পারি, দ্বিতীয় বেলা কী খাব, সে চিন্তা আর করি না। এজন্য এমনভাবে দিতে হবে যাতে একেবারে না খেয়ে না থাকে, আর যেন কর্মবিমুখ না হয়।’
উন্নয়নের গতি স্লথ হবে
বাংলাদেশের আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা তুলে ধরে আরো এগিয়ে যাওয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। তবে একটি পর্যায়ের পর গতি কমে যাবে বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘আমরা পারব এগিয়ে যেতে। আজকে আমরা আট ভাগে উন্নীত হয়েছি। আট ভাগ পর্যন্ত আমরা যে তুলে নিয়ে এলাম, মনে রাখতে হবে যত উপরে উঠা যায়, তত কিন্তু আরো কঠিন হয়ে যায়। এরপর আমরা যখন উঠব, তখন কিন্তু গতিটা একটা স্লথ হবে। তার পরেও আমাদের ডিটারমিনেশন থাকতে হবে, না আমাদের উঠতেই হবে।’
‘আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। এর জন্য যে তিনটি ক্রাইটেরিয়া প্রয়োজন, তার সব কটিই আমরা পূর্ণ করতে পেরেছি। আমরা যদি আর নাও আগাই, তার পরও ২০২৪ সালের মধ্যে আমরা স্বীকৃতি পাব। কিন্তু আমাদের আরো বেশি সামনে যেতে হবে। সে কথা মাথায় রেখেই আমাদের যেন উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওআইসি সম্মেলনে যখন যাই, তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল। তিনি নিজেই আমাকে স্বীকার করলেন, যখন স্বাধীন হয়, তখন ছোট ছিলেন। তখন অনেকেই বলত, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে কী হবে? তারা কিছুই করতে পারবে না। কয়েকটা প্রশ্ন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন। যেমন আমাদের ডলারের দাম কত বা আমাদের রিজার্ভ কত বা আমাদের বাজেট কী।’
‘অবাক হয়ে বললেন, আজকে বাংলাদশ তো পাকিস্তান থেকে অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। এ কথা কিন্তু আজকে প্রায়ই, তাদের অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে সবাই এ কথা বলে যাচ্ছে। আর তা ছাড়া আজকের বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের একটা রিপোর্ট নিশ্চয় পেয়েছেন, সেখানে বলেছে, যে কয়টি দেশ দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, এই দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ অন্যতম।’
‘কোনো কাজই ছোট নয়’
কোনো কাজ ছোট নয়- এই কথাটা সব সময় মনে রাখতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘লেখাপড়া শিখলে আমি ধান কাটতে পারব না, এটা কেমন মানসিকতা?’
‘কোনো কাজ খাটো কাজ না, ছোট কাজ না- এটা বোধটাও যেন মানুষের মধ্যে আসে, এই কাজটাও মানুষকে বোঝাতে হবে, বলতে হবে। একবার ফুলপ্যান্ট পরলে আর লুঙ্গি পড়া যাবে না বা গামছা পরে মাঠে যাওয়া যাবে না, এই চিন্তা যেন মাথায় না থাকে। প্রয়োজনে সব কাজ করতে পারি।’
‘কাজ করতে হবে। সবাইকেই কাজ করতে হবে। সে জন্য উৎসাহ দিতে হবে। মানুষকে শিক্ষা দিতে হবে যে প্রতিটি কাজের জন্য নিজেকে অর্থ উপার্জন করে নিতে হবে। সে জন্য আমরা কিন্তু বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়েছি আর গৃহীত পদক্ষেপে আমরা কিন্তু দেশকে যথেষ্ট এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’
সম্প্রতি ধান কাটার শ্রমিকের অভাবের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তখন ছাত্রলীগকে হুকুম দিলাম, তোমরা সব নেমে যাও যার যার এলাকায়। সবাইকে বললাম একজন কৃষককে সাথে নিতে। ধান কাটারও একটা নিয়ম আছে। যেনতেনভাবে কাটতে গেলে সব ধান পড়ে যাবে। ধান আর পাওয়া যাবে না। গাছটা ধরারও একটা নিয়ম আছে। তারা সব নেমে গেছে।’
ধান কাটতে নিজেই চলে যেতেন জানিয়ে শেখ হাসিনা তার অসুস্থতার কথা তুলে ধরেন। বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি চোখে অপারেশন না হলে আমি নিজে চলে যেতাম। দেখিয়ে দিতাম, আমার কাছে সব কাজ সমান। কারণ, খাদ্য না হলে তো আমার ক্ষুণ্নিবৃত্তি হবে ন। কাজেই যারা খাদ্য উৎপাদন করবে, তারা আমার কাছে ছোট হবে কেন?’