আবু হানিফ, শেরপুর প্রতিনিধি, খবর ৭১ঃ শেরপুরের গারো পাহাড়ী এলাকায় বিভিন্নস্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় অন্তত ১০টি স্থানে শ্যালো মেশিন বসিয়ে দিনরাত অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন চলছে।
এছাড়াও উপজলার পাহাড়ি বিভিন্ন ঝুড়া, খাল ও নদী থেকে চলাচ্ছে বালু উত্তোলনের প্রতিযাগিতা। প্রতিদিন ট্রাক , ট্রলি ভর্তি করে এ বালু দেশের বিভিন্ন যায়গায় বিক্রি করছে প্রভাবশালী সিন্ডকেট। একইসাথে পাহাড় কেটে করা হচ্ছে বালু আনার রাস্তা। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বনাঞ্চল। এতে লোকসানের মুখে পড়ছে বালুমহল ইজারাদাররা।
গারো পাহাড়ের সোশ্বেরী, মহারশি, ভোগাই চেল্লাখালী নদীসহ বিভিন্ন নদী ও ঝোড়ায় প্রকাশ্যে তোলা হচ্ছে বালু। শ্রীবরদী উপজেলার কর্ণঝোড়া, বাবলাকোনা, তাওয়াকুচা, ঝিনাইগাতী উপজেলার ছোটগজনী, রামেরকুড়া, বাকাকুড়া, ফুলহারী, ছোটগজনী, গান্ধিগাওসহ অন্তত ১০টি স্পটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে। এভাবে দিনের পর দিন অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকায় বর্তমান নদীর তীরবর্তী এলাকার বসতি ও আবাদি জমি ভাঙ্গনের কবলে বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। একইসাথে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণ পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ও গ্রামীণ সড়ক হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া উপজেলার সন্ধ্যাকুড়ায় মহারশি নদীর সেতু, বাকাকুড়া ব্রীজসহ বেশ কিছু ব্রীজ-কালভার্ট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সাংবাদিকরা ছবি ওঠাতে গেলে মেশিন বন্ধ করে দৌড়ে পালিয়ে যায় বালু উত্তোলনকারীরা।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং ইরিবোরো মওসুমে নদীর ওজানে বাধ দেয়ায় বালু উত্তোলন করতে না পেরে লোকসানের মুখে পড়েছে গারো পাহাড়ের বালুমহলের ইজারাদারগণ। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কমদামে বিক্রি করছে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা। আর বালুমহল ইজারা নিয়ে সরকারকে ইজারার টাকা দিয়ে বেশী দামে বালু বিক্রি করতে হচ্ছে বালুমহল ইজারাদারদের। এতে করে ক্রেতারা তাদের বালু নিতে চাচ্ছে না। ফলে অনেক বালু অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। অপরদিকে ইরিবোরো মওসুমে নদীর ওজানে বাধ দিয়ে পানি আটকানোর ফলে অনেক ইজারাদার বালু ওঠাতে পারেনি। এরফলে তারা লোকসানের মুখে পড়েছে। গতবছর ঝিনাইগাতীর সোমেশ্বরী নদীর তাওয়াকুচা এলাকায় ৬.৫১ একর জমি বালুমহল ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে ইজারা নেয় সওদ বিল্ডার্স। কিন্তু সে মাত্র ৬০ লাখ টাকার বালু বিক্রি করতে পেরেছিল। বাকী ৬০ লক্ষ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানকে।
এবারও ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশী নদীর ফাখরাবাদ বালু মহল ইজারা ৩৮ লক্ষ ৬০ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে এবারও সে লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন। এ বালু মহলটি ইতিপূর্বে ছামিউল ফকির নামের এক ব্যক্তি বছরে মাত্র ১লক্ষ ৮৩ হাজার টাকায় লীজ নিয়ে আদালতে একটি রীটের দোহাই দিয়ে ১৪ বছর ওই টাকায় বালু উত্তোলন করে আসায় সরকার অন্তত ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্রপতিকায় লেখালেখি হলে ওই ছামিউল ফকিরের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা হয় এবং জেল হাজতেও তাকে যেতে হয়। এ প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন রীট নিষ্পত্তির ভিত্তিতে সওদ বিল্ডার্সকে ৩৮ লক্ষ ৬০ টাকায় ইজারা দিলে সওদ বিল্ডার্সের মালিক আসাদুজ্জামান স্বপন হাইকোর্টে জনাব ছামিউল ফেিকরর রীটের নিষ্পত্তি চাইলে আদালতের নির্দেশে তা নিষ্পত্তি হয়। এতে করে জেলা প্রশাসনের এখন থেকে আর ইজারা দিতে বাধা রইলো না।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে ইজারাদার আসাদুজ্জামান স্বপন বলেন, আমি গতবছর তাওয়াকুচায় বালুমহল ইজারা নিয়ে ৬০ লক্ষ টাকা লোকসান দিয়েছি। এ জন্য আমি জেলা প্রশাসনের কাছে সুবিচার না পেয়ে মাহমান্য হাইকোর্টে রীট করেছি। যা শুনানীর অপেক্ষায় আছে। আর মহারশী নদীর ফাখরাবাদে ইজারা নিয়েছি, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে আমাদের এবারও লোকসান গুনতে হবে। এতেকরে ভবিষ্যতে কেউ বালু ইজারা নিতে আসবে না। বনবিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জকর্মকর্তা বলেন, আমরা রাতের আধারে বালু উঠায় বেশ কিছু লোক।
আমাদের লোকবলের অভাবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কোন ব্যবস্থা নিতে পারছি না। ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব রুবেল মাহমুদ জানান, আমরা অবৈধ বালু উত্তোলনের খবর পেলেই তা বন্ধ করে দিচ্ছি। এখনও যদি কেউ করে তা বন্ধ করে দিবো। শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আমরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে দিবো না। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।